মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : বরিশালে দীর্ঘ ৭ বছর পরে জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণার পরপরই রাত ১টার দিকে পদ বঞ্চিতরা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে তালা দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। পাশাপাশি আজ সোমবার (২০আগস্ট) কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বিক্ষোভ করেছে সাধারণ ছাত্ররা। এছাড়া কমিটি বাতিলের জন্য সোমবার বিকালে ঝাড়ু মিছিল করেছে তারা। নতুন কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বরিশাল বিএনপিতে ক্রমশ:ই উত্তাপ ছড়াচ্ছে। ছাত্রদলের ঘোষিত কমিটিতে সরোয়ারপন্থিদের প্রাধান্য দিয়ে চান–শিরিনের সমর্থকদের হটিয়ে দেয়ায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বরিশাল বিএনপি। পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়ায় পরিস্থিতি ক্রমেই নাজুক হয়ে উঠেছে। বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে বিক্ষুব্ধদের একাংশ তালাও ঝুলিয়ে দিয়েছে। সেই সাথে কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়াকেও তুলোধুনা করা হচ্ছে। এমনকি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসান ও সাধারণ সম্পাদককেও বিষাদগার করা হচ্ছে। রাজিব আহাসানের ছবিতে ঝাড়ু ও জুতা মেরে বিক্ষোভ করেছে পদবঞ্চিত নেতা কর্মিরা। অভিযোগ রয়েছে, বরিশাল জেলা ও মহানগরের ঘোষিত এই কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে বিএনপি নেতা সরোয়ারের আস্থাভাজনরাই মূলে রয়েছে। মূলত: সেখান থেকেই তৈরি হয়েছে ক্ষোভ। কারণ মাহফুজুল আলম মিঠু নামে যে ব্যক্তিকে জেলা কমিটির সভাপতি করা হয়েছে তাকে বিগত সময়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে দেখা যায়নি। এমনকি তিনি বরিশালের ছাত্র রাজনৈতিক অঙ্গনে উল্লেখযোগ্য কোন ভূমিকাও রাখেন নি। তবে শোনা যাচ্ছে, তিনি অধিকাংশ সময়ে রাজধানীতে বরিশাল বিএনপির অভিভাবক সরোয়ারের সাথে অবস্থান করেন। তার ঢাকার বাসায় থাকেন। বরিশাল ছাত্রদলের রাজনীতিতে তার তেমন কোন অংশগ্রহন নেই।
এছাড়াও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার সন্তান মিঠু বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি সরোয়ারের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবেও কাজ করছেন। মূলত: এই বিশেষ কারণেই সরোয়ার তার পক্ষে সুপারিশ রাখায় সভাপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হওয়ার বিষয়টি তরান্বিত হয়। তাছাড়া ছাত্রদল সভাপতি রাজিব আহসানও তাকে নেতা হওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। কারণ এই দুই নেতা একই এলাকার বাসিন্দা। সেক্ষেত্রে এখানকার পদবঞ্চিত নোতাকর্মীদের অভিব্যক্তি হচ্ছে- কেন্দ্রীয় নেতা রাজিব আহসান আগামীতে মেহেন্দিগঞ্জ-হিজলা আসনে সাংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। মূলত: সেই নির্বাচনে শক্তি সামর্থ যোগানোর বিষয়টি অনুমানে নিয়েই নিজ এলাকার যুবককে মনোনীত করেছেন। এই জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কামরুল আহসানও বরিশালের রাজনীতিতে অপরিচিত মুখ। তাছাড়া সিনিয়র সভ-সভাপতি তারেক আল ইমরান ও যুগ্ম সম্পাদক তৌফিকুল ইসলাম ইমরানকেও বিগত সময়ে মাঠে থাকতে দেখা যায়নি। তবে এই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রাঢ়ী আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রভাগে ছিলেন। এমনকি সেই রাজপথে সাহসী পদক্ষেপ রাখতে গিয়ে তিনি বেশ কয়েকবার কারাবরণও করেছেন। যে কারণে তার পদটি নিয়ে কোন বিতর্ক না থাকলেও সোহেল রাঢ়ী তুষ্ট নন। কারণ তিনি চেয়েছিলেন জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে। ফলে এই কমিটিকে বৈধতা দিতে তিনি অসমর্থ বলে জানিয়েছেন। এই নেতার মতে জেলা পুরো কমিটিকে পকেট কমিটি হিসেবে আখ্যায়িত করতে হচ্ছে। অপরদিকে মহানগর কমিটির সভাপতি পদে রেজাউল ইসলাম রনি নামে যাকে রাখা হয়েছে তাকে নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। বরিশাল শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি এই রনি সাবেক ছাত্রনেতা রাফসান আহম্মেদ জিতু হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। তাছাড়া সাধারণ সম্পাদক মহানগরের এই কমিটিতে হুমায়ুন কবির নামে যাকে মনোনীত করা হয়েছে তিনি বরিশাল শহরের সন্তান নন। এমনকি তার বাসাবাড়িও সদর উপজেলার টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়নে। ফলে তাকে নিয়েও বিতর্কের কমতি নেই। পদবঞ্চিত কেউ কেউ দাবি করছেন কবির বরিশাল শহরের ভোটারও নন। তবে দলীয় কর্মসূচিতে তার অবস্থান থকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এই কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি তারিকুর ইসলাম তারিক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক তছলিম বিগত সময়ে মাঠে থাকায় তাদের নিয়ে আলোচনা সমালোচনা কম রয়েছে। তবে কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মাহামুদুল হাসান তানজিলকে অনেকেই মাদক বিক্রেতা হিসেবে মিডিয়ার কাছে তুলে ধরছেন। তবে খোঁজখবর নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে, মহানগরের এই কমিটিতে সভাপতি হিসেবে আরিফুর রহমান মুন্না এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আরিফুর রহমান জনি অধিষ্টিত হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বয়স বিবেচনায় তাদেরকে রাখা হয়নি বলে শোনা যাচ্ছে। একইভাবে জেলা কমিটির সভাপতি হিসেবে সাইফুল ইসলাম সুজন এবং সাধারণ সম্পাদক সোহেল রাঢ়ী আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সুজনকে কমিটিতে না রাখা হলেও সোহেল রাঢ়ীকে এই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়ছে। বিশেষ করে ত্যাগি নেতা সুজন পদবঞ্চিত ও সোহেল রাঢ়ীকে অবমূল্যায়ন করার বিষয়টি ভালভাবে নেয়নি কর্মী সমর্থকরাও। কমিটি ঘোষণায় ক্ষুব্ধ সুজন ছাত্রদলের রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন। সোমবার বিএনপি অফিসে তালা দেয়া ছাড়াও ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসানের ছবিতে ঝাড়ু ও জুতা সাজিয়ে বিক্ষোভ করে ছাত্রদল নেতারা। এ সময় তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয় বরিশালে। একইভাবে সোহেল রাঢ়ীও এই কমিটি মেনে নিতে নারাজ থাকার বিষয়টি অবহিত করে বলছেন, নেতা সরোয়ার স্বৈরাচারি এরশাদের রুপ ধারণ করেছেন। ফলে এখানকার নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে রাজপথে নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। পাশাপাশি বিএনপির কার্যালয়টি গভীররাতে তালাবদ্ধ করে দিয়েছে। এদিকে কমিটিতে যথার্থ মূল্যায়ন না করায় এরই মধ্যে কমিটিতে নীচের দিকে স্থান পাওয়া কয়েকজন পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে।