Current Bangladesh Time
বুধবার ডিসেম্বর ১১, ২০২৪ ৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ
Latest News
প্রচ্ছদ  » স্লাইডার নিউজ » বরিশালে পুলিশি পাহারায় চালু হলো ফরচুন সুজ 
Saturday May 25, 2024 , 6:49 pm
Print this E-mail this

আকস্মিক আনসার সদস্যদের গুলিবর্ষণ, শঙ্কায় শ্রমিকরা

বরিশালে পুলিশি পাহারায় চালু হলো ফরচুন সুজ


মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে বকেয়া বেতন পরিশোধ করেছে ফরচুন সুজ লিমিটেড। বৃহস্পতিবার (মে ২৩) রাত ৯টার মধ্যে কারখানার প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিককে বেতন দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে শ্রমিকদের উত্থাপিত অন্যান্য দাবি মেনে নেওয়ারও ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। ওইদিনের ঘটনার প্রেক্ষিতে শুক্রবার কারখানা বন্ধ রাখার পর শনিবার (মে ২৫) পুলিশি পাহারায় পুনরায় চালু করা হয়েছে জুতা রপ্তানিকারক এই প্রতিষ্ঠানটি। তবে শতভাগ শ্রমিক কাজে যোগ দেননি। বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মনদীপ ঘরাই বলেন, আন্দোলনরত শ্রমিকরা যেন চাকরিচ্যুত না হন সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি মেনেও নিয়েছে ফরচুন কর্তৃপক্ষ। ফরচুন সুজের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সব শ্রমিকের সামনে এবং বৈঠকে আমাদের নিশ্চিত করেন শ্রমিকরা যেসব ন্যায্য দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছেন তার সবই তিনি মেনে নিয়েছেন। মনদীপ ঘরাই বলেন, তিনটি কারখানার সকল শ্রমিকদের এপ্রিল মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। কারখানার মধ্যে যারা শ্রমিকদের মারধর করতো বলে অভিযোগ উঠেছে তাদের বদলি করে কোম্পানির অন্য কারখানায় পাঠানো হয়েছে। শ্রমিকদের ওপর গুলির ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, শ্রমিক আইন লঙ্ঘনের বিষয়ে শ্রমিকরা কারখানার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো তুলেছেন সে বিষয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর বরিশালের উপ-মহাপরিদর্শক এসেছিলেন। রোববার এই অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কারখানা পরিদর্শন করে পরবর্তী বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, জুতা উৎপাদনকারী এই প্রতিষ্ঠানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক কাজ করেন। বিভিন্ন সময়ে অনিয়মের শিকার হলেও বৃহস্পতিবারই (মে ২৩) প্রথম সব শ্রমিক ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করেন। ঘটনার পরপরই প্রশাসনের হস্তক্ষেপে প্রতিষ্ঠান প্রধান মিজানুর রহমান শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও তা বিশ্বাস করতে পারছেন না অনেকেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দু’জন নারী শ্রমিক বলেন, কারখানার ম্যানেজমেন্ট অনেক পাওয়ারফুল। তারা পরিস্থিতি সামলে উঠে আবার আগের রূপে ফিরে যাবে। তারা শ্রমিকদের সাথে ভালো আচরণ করেন না। শ্রমিকদের সাথে অন্যায় করে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন। অথচ শ্রমিকদের পাওনা দেন না। বৃহস্পতিবার রাতে কিছু শ্রমিকের মোবাইলে বেতনের মেসেজ এসেছে। এখন ভিন্ন কাজ খুঁজবো। আমরা আর ফরচুন সুজে কাজ করতে যেতে চাই না। মাসুম বিল্লাহ নামে আরেক শ্রমিক বলেন, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ যদি ঘটনাস্থলে এসে মিজানুর রহমানকে বেতন দিতে বাধ্য না করতেন তাহলে তিনি বেতন দিতেন না। তাছাড়া তিনি বেতন এখন দিতেও পারবেন না। কারণ সব টাকা বিপিএল ম্যাচে শেষ করেছেন। আমরা আমাদের প্রাপ্য চেয়েছি। জানি, এর শোধ তিনি (মিজানুর রহমান) তুলবেন। এজন্য কাজে যোগ দেব কিনা সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। রোজিনা নামে আরেক শ্রমিক বলেন, সারা মাসের পরিশ্রমের বেতনের টাকাটা চাইতে গিয়ে যে অবস্থা হয়েছে তাতে কাজ করার আগ্রহ নেই। তারপরও যেহেতু ভিন্ন কোথাও কাজের সুযোগ এই মুহূর্তে নেই। তাই কারখানায় যোগ দিয়েছি। তবে আগের মতো আর মন দিয়ে কাজ হবে না এই কারখানায়। সুযোগ পেলে অন্য কোনো কারখানায় চলে যাব। জামাল নামে এক শ্রমিক বলেন, শ্রমিকদের ওপর প্রথম আঘাতটি আসে আনসার সদস্যদের দ্বারা। পর্যায়ক্রমে তা পুরো কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে। আমি নিজেও আন্দোলনে অংশ নিয়েছি। আমারও বেতন বকেয়া আছে। কিন্তু আমি এখনো বেতন পাইনি। অনেকে পেয়েছে। শনিবার কারখানা চালু হয়েছে। তবে আমি কারখানায় যাব না। আমাদের অন্য শ্রমিকরা যারা যোগ দিয়েছে তাদের সাথে কেমন আচরণ করে তা জেনে তারপর সিদ্ধান্ত নেব কী করব। ফরচুন সুজে শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় বকেয়া বেতনের বিষয়টি সামনে এলেও বিষয়টি অস্বীকার করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে অনেক শ্রমিকও জানিয়েছেন, ঘটনার সূত্রপাত কারখানার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের দ্বারা। সুমন নামে এক শ্রমিক বলেন, খুব সাধারণ ঘটনার সূত্র ধরে আনসাররা শ্রমিকদের গুলি করেছে। তারা তাদের ক্যাম্পে আমাদের কয়েকজন শ্রমিককে ধরে নিয়ে যান। আমরা তা ছাড়িয়ে আনতে গেলে উত্তপ্ত অবস্থার সৃষ্টি হয়। তখন হঠাৎ করেই আনসার সদস্যরা গুলি করে বসে। এতে আমাদের শ্রমিকরা আহত হলে উত্তেজনা আরও বেড়ে গিয়ে আনসার ক্যাম্পে হামলা চালায় শ্রমিকরা। ফরচুন সুজের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানও জানিয়েছেন, ঘটনার সূত্রপাত আনসার সদস্যদের সাথে শ্রমিকদের হাতাহাতিকে কেন্দ্র করে। তিনি বলেন, দুপুর সোয়া ১টার দিকে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে পাঁচজন শ্রমিক কারখানার গেটের দু’জন নিরাপত্তা রক্ষীকে মারধর করেন। দুপুরের খাবার শেষে সেই শ্রমিকরা ফিরে আসলে তাদের গেট থেকে ঢুকতে দিচ্ছিল না নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসাররা। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মারামারি হয়। সেই শ্রমিকরা সেখান থেকে বেরিয়ে পৌনে ৪টার দিকে কয়েকজন বহিরাগতকে নিয়ে এসে কারখানার সামনে আনসারদের সঙ্গে মারামারি করেন। তখন আনসার সদস্যরা দু’জনকে ধরে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যান। এই খবর নিয়ে কয়েকজন শ্রমিক কারখানার বিভিন্ন ফ্লোরে গিয়ে সবাইকে কাজ রেখে বাইরে আসতে বলেন। শ্রমিকরা দলবদ্ধ হয়ে আনসার ক্যাম্পে আটকদের ছাড়িয়ে আনতে যান। আনসার সদস্যরাও আটকদের না ছাড়ায় সেখানে শ্রমকিরা হামলা চালিয়ে ১১ জন আনসার সদস্যকে আহত করেন। এর প্রেক্ষিতে গুলিবর্ষণ করেন আনসার সদস্যরা। ঘটনার সূত্রপাত এভাবে হলেও কিছু কর্মী দাবি করেন, তারা বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলন করছেন। আসলে কর্মীদের বেতন বকেয়া যা ছিল তার অর্ধেক আগেই পরিশোধ ছিল। গতকাল বাকি টাকাও পরিশোধ করা হয়েছে। শ্রমিকদের আন্দোলনে আনসার সদস্যদের গুলি ছোড়ার প্রেক্ষাপট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) বরিশাল জেলার উপ-মহাব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, শ্রমিকরা বেতনের দাবিতে আন্দোলন করার প্রেক্ষিতে এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি যে তাদের ওপরে গুলিবর্ষণ করতে হবে। আনসার সদস্যরা গুলিবর্ষণের কাজটি বাড়াবাড়ি করেছেন। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে কোনো কাজ করেনি। উল্টো গুলিবর্ষণ করে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করেছে। এ কারণে আনসার ইউনিটকে বিসিক থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, শ্রমিকরা যে অভিযোগগুলো গতকাল করেছেন সেগুলো আগে তারা কখনো করেননি। যে কারণে আমরা জানতাম না। ঘটনার প্রেক্ষিতেই আমরা সেই অভিযোগগুলো জানতে পেরেছি। এখন প্রতিটি অভিযোগ খতিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ‘বিসিকের সব কিছু দেখভালের জন্য সরকার যে এখানে অফিস রেখেছেন এই তথ্য হয়তো শ্রমিকরা জানতেন না বা আমরা শ্রমিকদের কাছে এই বার্তা পৌঁছাতে পারিনি, যে কারণে তাদের অভিযোগগুলো নিয়ে এতদিন আমাদের সঙ্গে বলেনি। এখন আমরা সেই দূরত্ব কাটিয়ে শ্রমিক ও মালিকদের নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করবো।’ যুক্ত করেন নজরুল ইসলাম। তবে আনসারদের নিয়ে এমন মন্তব্যের সঙ্গে একমত নন আনসার ও ভিডিপি বরিশাল জেলা কমান্ড্যান্ট এস এম মুজিবুল হক পাভেল। বরং আনসার সদস্যরা চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন। মুজিবুল হক বলেন, গুলি করা ছাড়া আনসার সদস্যদের কোনো উপায় ছিল না। শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করার পরপরই কারখানা ভাঙচুর শুরু করে। তা ঠেকাতে গেলে শ্রমিকরা আনসার ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে ক্যাম্পটি গুঁড়িয়ে দেয়। যেখানে যা পেয়েছে তা সবই লুট করে নিয়ে গেছে। আনসারদের রেশনের চাল পর্যন্ত নিয়ে গেছেন হামলাকারীরা। আনসার সদস্যরা এসব পরিস্থিতি আমাকে ভিডিও কলে দেখাচ্ছিলেন। তারা নিচতলা থেকে দোতলায় ম্যাগজিন গার্ডে (রুমে) আত্মরক্ষার্থে অবস্থান নেয়। সেখানেও হামলা করায় গুলি না করে অন্য কোনো উপায় ছিল না। কারণ অস্ত্র লুট হয়ে গেলে যে কারও প্রাণহানি ঘটতে পারতো। তিনি আরও বলেন, হামলায় শুধু যে শ্রমিক ছিল তা নয়, স্থানীয় কিছু বহিরাগত যোগ দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করেছে। এ ঘটনায় ১১ জন আনসার সদস্য আহত হয়েছেন। থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। সার্বিক পরিস্থিতি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। সেখান থেকে নির্দেশনা এলে এ ঘটনায় মামলা করা হবে। মুজিবুল হক অভিযোগ করেন, শ্রমিকরা দলবেঁধে যখন হামলা চালায় প্রথমেই আনসার সদস্যরা পুলিশ সদস্যদের সাহায্য চান। খবর পেয়ে কাউনিয়া থানার ৫/৬ জনের একটি টিম আসে। তারাও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিল না। শেষে তাদের এক পুলিশ সদস্য আহত হলে ঘটনাস্থলে ফোর্স বাড়ান। বিষয়টি শুরু থেকেই গুরুত্ব দিয়ে দেখলে হয়তো এতদূর যেত না পরিস্থিতি। ফরচুনে শ্রমিকের ওপর গুলিবর্ষণে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার, আহতদের ক্ষতিপূরণ ও শ্রমিকের বকেয়া পরিশোধের দাবিতে শ্রমিক ফ্রন্ট বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে।

শনিবার (মে ২৫) বেলা ১১টায় অশ্বিনী কুমার হলের সামনে থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দুলাল মল্লিক। বক্তব্য দেন বাসদ জেলা শাখার সমন্বয়কারী ডা: মনীষা চক্রবর্তী, ভোলার গ্যাস রক্ষায় নাগরিক আন্দোলনের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুর রহমান, বাসদ গোপালগঞ্জ জেলা শাখার সংগঠক অধ্যক্ষ মোশায়েদ হোসেন ঢালী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি মিজানুর রহমান সেলিম, সিপিবি ঝালকাঠি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত দাস হরি, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ বরিশাল মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহ আজিজ খোকন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট বরিশাল জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক শহিদুল হাওলাদার, সোনারগাঁও টেক্সটাইল শ্রমিক-কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন প্রমুখ। এর আগে শুক্রবার একই দাবিতে মানববন্ধন করে গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল জেলা শাখা। ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুজয় শুভর সভাপতিত্বে ও জেলা সংগঠক হুজাইফা রহমানের সঞ্চালনায় ওই কর্মসূচি পালিত হয়। আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, শুধু বকেয়া বেতনের দাবিতেই নয়, কারখানার মধ্যে পদে পদে শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘন করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কারখানার মধ্যে শ্রমিকরা মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু ফরচুন সুজ কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের কথা এড়িয়ে গেছেন। এমনকি যারা শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়ে কথা বলতে চেয়েছেন তাদের কারণ দর্শানো ছাড়াই চাকরিচ্যুত করা হয়। চার বছর ধরে চাকরি করেন জেসমিন। তিনি বলেন, আমাদের ওভারটাইম করালেও কোম্পানি বিগত ৪-৫ বছর ধরে ওভারটাইমের টাকা পরিশোধ করেন না। তাছাড়া যে টাকা বেতন পাই তা থেকে শ্রমিক ফান্ডের নামে প্রতিমাসে ৪০০ টাকা কেটে রাখে কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট। চাকরি ছাড়লে বা চাকরিচ্যুত হলে সেই টাকা পরিশোধ করে না ফরচুন। সোনিয়া আক্তার নামে আরেক শ্রমিক বলেন, আমাদের সাম্পাহিক ছুটি নেই। অন্য কারখানায় ৮ ঘণ্টা কাজ করালেও ফরচুনে ১২ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয়। মাসের পর মাস বেতন বকেয়া থাকে। বিভিন্ন অজুহাতে শ্রমিকদের মারধর করা হয় কারখানার মধ্যে। আরেক শ্রমিক ইব্রাহিম বলেন, নির্ধারিত সময়ের এক মিনিট পরে ঢুকলে বা সময় শেষ হওয়ার আগে বের হলেও ৪০ টাকা করে কেটে নিত। আমাদের খুব ভোরে কাজে যোগ দিয়ে রাত ৯-১০টার দিকে কারখানা থেকে বের হতে হতো। কারখানার ভেতরে শ্রমিকদের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। কুকুর-বিড়ালের মতো আচরণ করা হয়। এসব কারণে শ্রমিকদের মধ্যে দিনে দিনে অসন্তোষ বাড়ে। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর বরিশালের উপ-মহা-পরিদর্শক নবীন কুমার হাওলাদার বলেন, শ্রমিক অসন্তোষের খবর পেয়েই আমি সেখানে গিয়েছিলাম। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। শ্রমিকরা বেশ কয়েকটি অভিযোগ এনেছেন। প্রাথমিকভাবে গতকালকে বেতন বকেয়ার সমাধান করা হয়েছে। এছাড়াও যে অভিযোগগুলো উঠেছে কারখানার বিরুদ্ধে তা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগগুলোর সত্যতা পেলে ফরচুন সুজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে স্ফুলিঙ্গ হয়ে ছড়িয়ে পরা শ্রমিক আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে নিতে রাত ৯টা বেজে যায়। ঘটনাস্থলে জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার জিহাদুল কবির, বিসিক কর্তৃপক্ষ, গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সমন্বিতভাবে কাজ করে পরিস্থিতি সামাল দেন। ঘটনার আকস্মিকতায় শ্রমিকরা ফরচুন সুজের গাড়ি ও কারখানা ভবনে ভাঙচুর চালান। শ্রমিকদের মারধর ও গুলিবর্ষণ করার প্রেক্ষিতে আনসার ক্যাম্প গুঁড়িয়ে দিলেও পুলিশের সঙ্গে কোনো বিরোধে যাননি শ্রমিকরা। ঘটনা নিয়ন্ত্রণে বিসিক এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শুক্রবার দুপুরেও ফরচুন সুজ ও তার অঙ্গ প্রতিষ্ঠানসহ বিসিক নগরীতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকতে দেখা গেছে। কারখানা বন্ধ থাকায় আজকে কোনো শ্রমিক উপস্থিতি নেই। শনিবার পুলিশি নিরাপত্তায় কারখানা চালু করা হয়। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান বলেন, ফরচুন সুজে শ্রমিক অসন্তোষকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ঘটনায় মালিক বা শ্রমিক কারো পক্ষ থেকেই থানায় অভিযোগ দেয়নি। বৃহস্পতিবার মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে বসে বিষয়টি একটি সমঝোতার পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে। ওইদিন রাতেই কারখানার প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিককে বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। ফরচুন সুজ কারখানাটি বিপিএলে ফরচুন বরিশাল টিমের মালিক ও বিসিক শিল্পনগরী ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমানের। তিনি বলেন, কারখানার কর্মীদের মাঝে গুজব ছড়িয়ে দিতে বিকেল ৫টার দিকে কিছু বহিরাগত এসে বলেন চারজন কর্মী গুলিতে মারা গেছেন। পরে হাসপাতাল থেকে পুলিশ আহত কর্মীদের এনে সকলকে দেখান কর্মীদের চিকিৎসা চলছে এবং তারা বেঁচে আছেন। এরপরই সকলে চলে যায়। কারখানা থেকে কর্মীদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তাদের শনিবার কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছে। তাদের কারো কোনো সমস্যা থাকলে শনিবারের মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে। যেন আমি রোববারের মধ্যে অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারি। তিনি বলেন, শ্রমিকরা দুজনের বিষয়ে অভিযোগ তুলেছেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে তাদের অন্যত্র বদলি করি। এছাড়া কর্মীদের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় আমি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর লিখিত দিয়েছি যেন অভিযুক্ত আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। মিজানুর রহমান বলেন, ঢাকাতে আহত চারজনকে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। এর মধ্যে দু’জন কারখানার কর্মী। বাকি দু’জন বহিরাগত। তবে আমরা সকলেরই চিকিৎসা খরচ বহন করছি।প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (মে ২৩) দুপুরে বরিশাল বিসিকে অবস্থিত ফরচুন সুজ কারখানায় কাজে যোগ দিয়ে মার্চ ও এপ্রিল মাসের বেতন দাবি করেন শ্রমিকরা। তবে ফরচুন কারখানা কর্তৃপক্ষ জানায়, পুরো বেতন পরিশোধ করা সম্ভব নয়। এই খবর শুনে কিছু শ্রমিক কাজে ইস্তফা দিয়ে কারখানা থেকে বেরিয়ে যান। বেরিয়ে যাওয়া শ্রমিকদের মধ্যে কয়েকজনকে ধরে নিয়ে আনসার ক্যাম্পে মারধর করা হয়। এই খবর অন্য শ্রমিকরা পেলে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে আনসার ক্যাম্পে ও ফরচুন কারখানায় হামলা চালায়। ঘটনার আকস্মিকতায় গুলি করেন আনসার সদস্যরা। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত অর্ধশত আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।




Archives
Image
কলকাতা-আগরতলার মিশনপ্রধানদের ঢাকায় আনার বিষয়ে যা জানা যাচ্ছে
Image
বরিশালে লঞ্চের কেবিন থেকে যাত্রীর ৮টি পাসপোর্ট-ডলার উধাও
Image
নিখোঁজ যুবকের নম্বর থেকে টাকা চেয়ে মায়ের কাছে ফোন, পুলিশ বলছে সিম ক্লোন
Image
ভারতীয়দের জন্য ভিসা সীমিত করলো বাংলাদেশ
Image
বাংলাদেশ নিয়ে ভুয়া খবর ছড়াচ্ছে ভারতের ৪৯ গণমাধ্যম : রিউমর স্ক্যানার