Current Bangladesh Time
বৃহস্পতিবার ডিসেম্বর ১২, ২০২৪ ১:২০ পূর্বাহ্ণ
Latest News
প্রচ্ছদ  » স্লাইডার নিউজ » বরিশালে পুরুষ শুণ্য সংখ্যালঘুপাড়া 
Saturday September 16, 2017 , 6:15 pm
Print this E-mail this

নেই দুর্গা পূজার প্রস্তুতি, গ্রাম ছেড়েছে যুবতীরা, গৃহবধূদের নির্ঘূম রাত্রিযাপন, সন্ত্রাসী মহড়া

বরিশালে পুরুষ শুণ্য সংখ্যালঘুপাড়া


শামীম আহমেদ, অতিথি প্রতিবেদক : বরিশালের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত উজিরপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরত্বের সাতলা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত বিলাঞ্চলের একটি গ্রাম শিবপুর।বিলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করাই হচ্ছে ওই গ্রামের পুরুষ সদস্যদের প্রধান পেশা।প্রায় ২২শ’ ভোটারের ওই গ্রামে চার শতাধিক হিন্দু পরিবারের বসবাস।গত পাঁচদিন থেকে পুরো গ্রামটি পুরুষ শুণ্য হয়ে পড়ায় আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে ওই গ্রামে নেই কোন পূজার প্রস্তুতি।সূত্রমতে, ইউপি নির্বাচনের জেরধরে পরাজিত মেম্বার (ইউপি সদস্য) প্রার্থী তার নির্বাচনী প্রতিশোধ নিতে কৌশলে একটি হত্যাকান্ডের সাথে বিজয়ী ইউপি সদস্যসহ তার সমর্থকদের দায়ী করে পুরো গ্রামে একক আধিপত্য বিস্তার করে চলেছেন।এমনকি পরাজিত ইউপি সদস্য প্রার্থীসহ স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় গত পাঁচদিন ধরে রাতের অন্ধকারে মুখোশপড়া সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে হানা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদর্শনসহ বাড়ির পুরুষ ও যুবতীদের খুঁজতে থাকায় পুরো সংখ্যালঘু পাড়ায় চরম আতংক বিরাজ করছে।সন্ত্রাসীদের ভয়ে ইতোমধ্যে পুরুষ শুণ্য হয়ে পড়েছে পুরো গ্রাম।নিজ বাড়ি ছেড়ে দূরের নিকট আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে ওই গ্রামের স্কুল-কলেজে অধ্যয়নরত ছাত্রীসহ যুবতীরা।যারা বাড়িতে রয়েছেন সেইসব গৃহবধূরা সন্ত্রাসী আতংকে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।গ্রামের শিশু-কিশোরদের স্কুলে যাতায়াতসহ প্রবীণদের রাস্তায় ও হাট-বাজারে না যাওয়ার জন্য হুমকি অব্যাহত রেখেছে সন্ত্রাসীরা।সরেজমিনে ওই গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি যোগেন মন্ডল (৮১), কৃষ্ণ কান্ত সমদ্দার (৭৫), উপেন সরকার (৭২)-সহ একাধিক বাসিন্দারা জানান, গত ১০ সেপ্টেম্বর পুলিশ নাটকীয়ভাবে সাতলা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও পল্লী চিকিৎসক মিল্টন বাড়ৈ ওরফে বাবুল মেম্বারকে (৩৫) অজ্ঞাতনামা হত্যা মামলার সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করেন।পরবর্তীতে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।এরপর থেকে নির্বাচনের সময় মিল্টন বাড়ৈর সমর্থকদের ওপর জুলুম শুরু করে পরাজিত ইউপি সদস্য প্রার্থী রাম কৃষ্ণ বিশ্বাস ওরফে রামু ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী নগেন রায়, হারুন হাওলাদার, রিয়াজুল হাওলাদার, বিধান রায়, রাধেশ্বাম রায় এবং অমল বিশ্বাস।ভূক্তভোগী এলাকাবাসি আরও জানান, ওই প্রভাবশালীরা প্রায় প্রতিরাতেই পুলিশ পরিচয়ে মুখোশপড়া সন্ত্রাসীদের নিয়ে তাদের গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে হানা দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির দায়িত্বে থাকা সুভাষ রায়, সুনীল মন্ডল, প্রদীপ হালদার, হরষিত হালদার, মাসুম বাহাদুর, ইকবাল বালী, ইব্রাহীম, সুব্রত রায়, ভুলু রায়, রিপন রায়, দিপক সরকার, নিপেন সরকার, গনেশ সরকারসহ অন্যান্য পুরুষ সদস্যদের খুঁজতে থাকে।সন্ত্রাসীদের অব্যাহত হুমকির মুখে আতংকিত হয়ে ওই গ্রামের পুরুষ সদস্যরা বাড়ি ঘর ছেড়ে আত্মগোপন করেছেন।পাশাপাশি সন্ত্রাসী হামলার ভয়ে নিজ বাড়ি ছেড়ে দূরের নিকট আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে ওই গ্রামের স্কুল-কলেজে অধ্যয়নরত ছাত্রীসহ যুবতীরা।গ্রামের গৃহবধূরা জানান, তারা বাড়িতে থাকলেও সন্ত্রাসী আতংকে তাদের নির্ঘুম রাত কাটছে।গ্রামের শিশু-কিশোরদের স্কুলে যাতায়াতসহ প্রবীণদের রাস্তায় ও হাট-বাজারে না যাওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে আসছে সন্ত্রাসীরা।কান্নাজড়িত কন্ঠে ওই গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি ও গৃহবধূরা বলেন, আমাদের গ্রামের সবচেয়ে নিরিহ ছেলে হচ্ছে মিল্টন বাড়ৈ ওরফে বাবুল।সে দীর্ঘদিন থেকে পল্লী চিকিৎসক হিসেবে অবহেলিত গ্রামবাসীর সেবা করে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে।এজন্য ইউপি নির্বাচনে গ্রামবাসীর একজোট হয়ে বাবুলকে ইউপি সদস্য হিসেবে প্রার্থী করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী করেছি।বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রাম কৃষ্ণ বিশ্বাস ওরফে রামু।নির্বাচনের পর থেকেই সে (রামু) বিজয়ী ইউপি সদস্য বিপ্লব বাড়ৈসহ তার সমর্থকদের বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছিলো।ভূক্তভোগী গ্রামবাসী ইউপি সদস্য মিল্টন বাড়ৈ বাবুলকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করে অনতিবিলম্বে তার মুক্তিসহ সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনপূর্বক দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।উল্লেখিত অভিযোগের ব্যাপারে উজিরপুর মডেল থানার ওসি মোঃ গোলাম ছরোয়ার বলেন, এ ধরনের কোন ঘটনা এখনও আমি শুনিনি।এছাড়া এ ঘটনায় এখনও কেউ থানায় অভিযোগ করেননি।তবে খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।তিনি আরও বলেন, হত্যাকান্ডের পুরো বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে।এরমধ্যে সন্দেহভাজন হিসেবে ইউপি সদস্য মিল্টন বাড়ৈ বাবুলকে আটক করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।তদন্তে তিনি (মিল্টন) নির্দোষ প্রমানিত হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।উল্লেখ্য, স্থানীয় নবীন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধানশিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে মোটা অংকের টাকার লেনদেন নিয়ে স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তির সাথে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের তুমুল বিরোধের সৃষ্টি হয়।বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য গত ১৭ আগস্ট গভীররাত পর্যন্ত স্কুল সংলগ্ন মাখন রায়ের গৃহে বৈঠক চলে।বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ধীরন্দ্রনাথ রায় তার কাছে গচ্ছিত টাকার হিসেব দিতে না পেরে বসতঘর বিক্রি অথবা জমি বিক্রি করে টাকা পরিশোধের অঙ্গীকার করেন।এসময় তার (ধীরন্দ্রনাথ) সাথে পুত্রদের বাগবিতন্ডাও হয়।পরবর্তীতে ওইদিন রাতে ধীরেন্দ্রনাথ তার পুত্র দিলীপ রায়ের নতুন বাড়িতে ঘুমাতে যায়।ওইদিন রাতেই ধীরেন্দ্রনাথ রায়কে অপহরনের পর হত্যা করে পায়ে ইটের বস্তা বেঁধে নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেয় অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা।১৯ আগস্ট পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে।এ ঘটনায় নিহতের পুত্র দিলীপ রায় বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (যার নং-১৮/১৯-৮-২০১৭)।ওই মামলার তদন্তে গিয়ে গত ১০ সেপ্টেম্বর পুলিশ নাটকীয়ভাবে সন্দেহভাজন হিসেবে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও পল্লী চিকিৎসক মিল্টন বাড়ৈ বাবুলকে আটক করেন।




Archives
Image
‘আ.লীগ ফিরবে’ মন্তব্য করার অভিযোগ, ইউএনওকে প্রত্যাহারের নির্দেশ
Image
শহীদ সাগরের বাবার ওপর বরিশালের আগৈলঝাড়ায় হামলা
Image
কলকাতা-আগরতলার মিশনপ্রধানদের ঢাকায় আনার বিষয়ে যা জানা যাচ্ছে
Image
বরিশালে লঞ্চের কেবিন থেকে যাত্রীর ৮টি পাসপোর্ট-ডলার উধাও
Image
নিখোঁজ যুবকের নম্বর থেকে টাকা চেয়ে মায়ের কাছে ফোন, পুলিশ বলছে সিম ক্লোন