|
সে যে দলেরই হোক না কেন, বরিশালের আপারময় জনগণ চায় উন্নয়ন
বরিশালে নির্বাচনের মোড় পাল্টাতে পারে নতুন ভোটারা!
সাইদুর রহমান পান্থ, অতিথি প্রতিবেদক : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ততায় সময় পার করছেন বরিশালের ৬ সংসদীয় আসনের ৩৮ জন এমপি প্রার্থী। দিনরাত ২৪ ঘন্টাই তারা পাড়ায় মহল্লায় ও ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইছেন। তাদের এবার র্টাগেট নতুন ভোটাররা। নির্বাচনী মাঠ পাল্টে দিতে পারে এই জেলার নতুন ২ লাখ ৪৯ হাজার ৩২১ জন ভোটার। নানা পদক্ষেপ গ্রহনের আশ্বাস দিয়ে নতুন ভোটারদের ভোট কামনা করছেন প্রার্থীরা। তবে নতুন ভোটারদের দাবী, ‘আমরা কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। আমরা কোন প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়িতে পরতে চাই না। আমরা বাস্তব রূপ দেখতে চাই।’ বরিশাল জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল জেলার ৬টি সংসদীয় আসনে পূর্বে ভোটার সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ২৯ হাজার ২৬৪টি, কিন্তু এবারে ভোটার সংখ্যা ১৭ লাখ ৭৮ হাজার ৫৮৫ জন। এর মধ্যে বরিশাল ১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে নতুন ভোটার ৩৩ হাজার ৪০ জন, বরিশাল ২ (উজিপুর-বানারীপাড়া) আসনে ৪২ হাজার ৩৪৩ জন, বরিশাল ৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে ৩৬ হাজার ৮০ জন, বরিশাল ৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনে ৫১ হাজার ৬২৯ জন, বরিশাল ৫ (সদর) আসনে ৫৫ হাজার ৩৯ জন এবং বরিশাল ৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে ৩১ হাজার ১৯০ জন ভোটার রয়েছে। সব মিলিয়ে বরিশাল জেলায় এবার নতুন ভোটার রয়েছে ২ লাখ ৪৯ হাজার ৩২১ জন। যারা চাইলে ভোটের মোড় পাল্টে দিতে পারেন। নতুন ভোটারদের মন জয় করতে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন এমপি প্রার্থীরা। বরিশাল জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন আসনটিই হচ্ছে-বরিশাল ৫ (সদর) আসন। বিএনপি’র মনোনিত প্রার্থী এ্যাড. মজিবর রহমান সরোয়ার বলেছেন, ‘কেন শিক্ষার্থীদের কোটা নিয়ে আন্দোলন করতে হবে। দেশে গণতন্ত্র নেই তাই এমন দশা। এই তরুনদের মাধ্যমেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। ভোট কারচুপি না হয়, এ বিষয়ে তরুনদের লক্ষ রাখতে হবে, সর্বদা সজাগ থাকতে হবে।’ সম্প্রতি বরিশালে অনুষ্ঠিত তরুন ভোটারদের সাথে মুখোমুখি অনুষ্ঠানে সরোয়ারের প্রতি তরুনদের প্রশ্ন ছিল নির্বাচিত হলে তিনি তরুনদের জন্য কি করবেন? এই প্রসঙ্গে সরোয়ার বলেন, ‘আমরা বরিশাল স্টেডিয়াম নির্মান করেছি, খেলাধুলা ও শিক্ষার বিষয়ে আমি সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিবো।’ তরুনদের প্রশ্ন : সুষ্ট নির্বাচন নিয়ে বিশ্বাসী কি না এই প্রসঙ্গে বিএনপির প্রার্থী বলেন, ‘কি ভাবে বিশ্বাস করবো। গত সিটি নির্বাচনই এর উদাহারন। আমরা ৫ জন প্রার্থী পদত্যাগ করলেও সিইসি কোন পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারেনি। এবারও এমন কোন বিষয় হলে আন্দোলন থেকে ঘরে ফিরে যাবো না।’ মহাজোট সমর্থীত আওয়ামীলীগের মনোনিত প্রার্থী কর্নেল (অব) জাহিদ ফারুক শামীম বলেন, ‘২০০৮ সালে এই আসন থেকে আমি ১ম নির্বাচন করি। তখন মানুষ আমাকে চিনতো না। তারপরও বিএনপির একই প্রার্থীর সাথে মাত্র ৫ হাজার ৬০০ ভোটে পরাজিত হয়েছি। এক লাখ ভোট পেয়েছি। কিন্তু আমি হেরে যাওয়ার পরও আমি আর বরিশাল ছাড়িনি। আমি বরিশালকে নিয়ে আমি সবসময়ই ভেবেছি। আমি নির্বাচিত হলে একটি মাদকমুক্ত শহর উপহার দিবো। আমি যুবকদের হাতকে শক্তিশালী করতে চাই। তাই কারিগড়ি শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিবো।’ তরুনদের প্রশ্ন : বরিশালে শিল্পায়ন ও পার্টটাইম জবের ব্যবস্থা করা হবে কি না ? এই প্রসঙ্গে শামীম বলেন, ‘আওয়ামীলীগ সরকার পদ্মাসেতু করছে, করছে পায়রা বন্দর ও ভোলার গ্যাস বরিশালে এনে শিল্পায়ন করা হবে। বরিশাল হবে ছোটখাটো সিঙ্গাপুর। অন্য জেলা থেকে মানুষ এই জেলায় আসবে চাকুরীর জন্য।’ তরুণদের প্রশ্ন : নির্বাচনে জয়ী না হলেও বরিশালের পাশে থাকবে কি না? এই প্রসংঙ্গে আওয়ামীলীগের প্রার্থী বলেন, বিএনপি, আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর মধ্যে এক জন নির্বাচিত হবে। আমি ২০০৮ সালের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পরও বরিশালবাসীর সাথেই ছিলাম, এখনও আছি। আমাকে একবার এমপি বানিয়ে দেখেন আমি আপনাদের জন্য কিকি করি।’ জাতীয় পার্টির মনোনিত প্রার্থী এ্যাড. একেএম মুর্তজা আবেদীন বলেছেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নে পল্লিবন্ধু এরশাদ যে উন্নয়ন করেছে তা কোন সরকার করতে পারেনি। আমিও আমার নেতার মত উন্নয়ন করে বরিশালবাসীকে উন্নত করবো। আমি আর কোন প্রতিশ্রুতি দিতে চাই না। আমি বাস্তবায়নে রূপ দিবো। এদিকে নতুন ভোটাররা বলছে, ‘নির্বাচন এলেই নানা কাজ করে দেওয়া থেকে শুরু করে মাদক মুক্ত এলাকা করার ঘোষনা দিয়ে থাকেন প্রার্থীরা। তবে নির্বাচন শেষ হয়ে গেলে নির্বাচিত প্রার্থী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করেন না। তাই এবারে অধিকাংশ নতুন ভোটারের সিদ্ধান্ত কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী প্রার্থীকেই ভোট দেবেন তারা। বরিশাল ৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক বলেন, ‘আমার সংসদীয় এলাকায় ৩৬ হাজারের বেশী নতুন ভোটার রয়েছে। আমি এখনকার এমপি হতে পারলে ডিজিটাল সকল সেবা প্রদান করবো। করবো চাকুরীর ব্যবস্থা। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন বিভিন্ন স্থান করা হবে ফ্রি ওয়াইফাই জোন। এছাড়া খেলাধুলার জন্য একটি স্টেডিয়াম নির্মান করবো।’ নির্বাচন এলেই বরিশালে দেখা যায় প্রার্থীদের ছড়াছড়ি। যোগ্য প্রার্থীকেই আমরা ভোট দেব। যে বা যিনি বরিশালের উন্নয়নে ভূয়সী ভূমিকা রাখবে তাকেই ভোট দেবে এবার বরিশালবাসী। সে যে দলেরই হোক না কেন, বরিশালের আপারময় জনগণ চায় উন্নয়ন। বরিশাল ৫ আসনে সড়কের বেহাল দশা। মানুষ চায় এর থেকে উত্তরণ। প্রয়োজন বেকার সমস্যা নিরসনেরও। তাই এই সমস্যা নিরসনে যে কাজ করার যোগ্য তাকেই এবার সবাই ভোট দেবে-এমনটাই প্রত্যাশা বরিশালবাসীর।
Post Views:
১৭৩
|
|