|
প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একমাত্র শিশুপার্কে বিনোদন থেকে বঞ্ছিত হচ্ছে নগরীর শিশুরা
বরিশালে দুই বছর না হতেই ধ্বংসের পথে – গ্রীন সিটি পার্ক
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : গ্রীন সিটি পার্কের এমন দৈন্য দশার জন্য নগরবাসী সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার এবং বিসিসি’র প্রকৌশল বিভাগকে দায়ী করছেন। এমনকি মেয়র পুত্র কামরুল আহসান রুপম এর যোগসূত্র রয়েছে বলেও অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। তাদের দাবি পরস্পর যোগসাজসে পার্ক নিমানে বরাদ্ধ’র সিংহভাগ টাকা তারা আত্মসাত করেছেন। তাই নিম্ন মানের সামগ্রী এবং খেলনার রাইডস ব্যবহার করা হয়েছে পার্কে। এতে নির্মানের দুই বছর পার হওয়ার পূর্বেই বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে পার্কটি। তবে নগরবাসীর অভিযোগ কিংবা পার্ক সম্পর্কে কোন মন্তব্য করতে রাজি নন বিসিসি’র সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নির্বাহী প্রকৌশলী কেউ দায় নিতে রাজি নন। এক কর্মকর্তা অপরদের উপর দায় চাপিয়ে এড়িয়ে যান। বিসিসি’র প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, ২০১৫ সালে নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানের পাশেই এক কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মান করা হয় গ্রীন সিটি পার্ক। মেয়র পুত্র রুপম এর ইসারায় নির্মান কাজ করে তারই বন্ধু রেজা। ২০১৬ সালের ২৯ জানুয়ারী ডাক-ঢোল পিটিয়ে পার্কটির উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র মো. আহসান হাবিব কামাল। নগরীতে প্রথম বারের মত শিশুদের বিনোদনের এমন একটি পার্ক নির্মান করে সিটি মেয়র প্রশংসিত হয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারই যোগ্য উত্তরসুরি কামরুল আহসান রুপম এবং তার অনুগত্য ঠিকাদার ও বিসিসি’র প্রকৌশল বিভাগের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারনে তার সেই প্রশংসা এখন দুর্নামসহ দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হচ্ছেন। কেননা পার্কটি উদ্বোধনের চার মাসের মধ্যে নির্মান কাজে অনিয়ম এবং দুর্নীতির চিত্র ফুটে উঠতে শুরু হয়। ভেঙ্গে পড়তে থাকে খেলনার সব রাইডস। সূত্রমতে, উদ্বোধনের সময় পার্কটিতে ২টি দোলনা, ৩টি শিপার, ১টি রোলার, ২টি ব্যালেন্স রাইডার সহ মোট ১৮ বিনোদনের খেলনা ছিল। বর্তমানে ২টি দোলনার মধ্যে একটি দোলনা লাপাত্তা, বাকি একটি নেই বসার ব্যবস্থা, একটি মাত্র রোলার রাইডারটি ভেঙ্গে গেছে। এটিতে কাঠের মই ব্যবহার করে উপরে উঠতে হচ্ছে। হাতি, ঘোড়া, বাঘ, কুকুর ও ড্রাগন সহ অন্যান্য ৯টি খেলানার মধ্যে মাত্র একটি ঘোড়া ও ১টি হরিন ছাড়া বাকিগুলো সব নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। পার্কের সৌন্দর্য বর্ধনে ছিল বৈদ্যুতিক ডিজিটাল গাছ, টাওয়ার ও এলইডি লাইট ও সিকিউরিটি বাল্ব। সাম্প্রতি পার্কের বাইরে স্থাপনকৃত বৈদ্যুতিক তুলা গাছ কারন ছাড়াই ভেঙ্গে পড়েছে। একটি ডিজিটাল বাশ’র লাইট জলে না। পার্কের চার পাশে ৬১টি সিকিউরিটি বাল্ব’র ১৫টিই নেই। বাকিগুলোর মধ্যে ৮ বাল্ব জ্বলে না। এলইডি দুইটি বাল্ব দীর্ঘ দিন ধরে বিকল। বাথরুমের অবস্থা খুবই করুন। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে দুর্গন্ধে ব্যবহারের অনুপযোগী। বিদ্যুৎ এর ব্যবস্থা আরো করুন। পার্কের প্রবেশদ্বারের টাইলস ভেঙ্গে উঠে যাচ্ছে। চারপাশে সীমানা প্রাচীরে বিশাল বিশাল ফাটল ধরেছে। সরোজমিনে পার্কে গিয়ে দেখা গেছে দৈন্যদশা। দেখা গেছে, অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে এলেও খেলনার রাইডসে অরোহরন করে বিনোদনের সুযোগ দিতে পারছেন না। তাই শিশুদের নিয়ে বিমুখ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে অভিভাবকদের। তাদের মন্তব্য, সরকারের প্রকৃত লক্ষ্য পূরন হয়নি। শুধু টাকা গচ্ছা গেছে। সরকারের টাকা আত্মসাতের জন্য দায়সারাভাবে পার্ক করা হয়েছে। তাই অযত্নে অবহেলা, অনিয়ম এবং দুর্নীতির কারনে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একমাত্র শিশুপার্কে বিনোদন থেকে বঞ্ছিত হচ্ছে নগরীর শিশুরা। এদিকে শুধুমাত্র অবকাঠামো এবং খেলনার দূরাবস্থাই নয়। নিরাপত্তা এবং রক্ষনাবেক্ষনে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধেও বলে অভিযোগ উঠেছে। তার মধ্যে পার্কের মধ্যে’র খালি কক্ষে অসামাজিক কার্যকলাপের সুযোগ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে গার্ডদের বিরুদ্ধে। দিনের বেলায় পার্কের চার পাশে খুঁজে পাওয়া যায় তাদেরকে। সন্ধ্যার পর দেখা মেলে গার্ডদের। গত তিনদিনে পার্কের আশপাশে কোন গার্ডের দেখা না মেলেনি। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় দু’জন গার্ডের দেখা মেলে পার্কের সামনে। কিন্তু গ্রীন সিটি পার্কের বিষয়ে বিসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওয়াজিদুজ্জামান বলেন, পার্কটি নির্মানের সময় আমি এখানে দায়িত্বে ছিলাম না। তাই এ বিষয়ে আমি কিছু বলতেও পরবো না। গ্রীন সিটি পার্ক নির্মান কাজের দায়িত্বে ছিলেন নির্বাহী প্রকৌশলী লুৎফুর রহমান। তাই তার সাথেই যোগাযোগের জন্য বলেন। নির্বাহী প্রকৌশলী লুৎফুর রহমান বলেন, দায়িত্বে আমি ছিলাম না। গ্রীন সিটি পার্ক নির্মান সহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দায়িত্বে ছিলেন নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবির। তাই তার সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি। পরে নির্বাহী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। বিসিসি’র সহকারী প্রকৌশলী মামুন এবং বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ওমর ফারুক বলতে পারবেন। তিনি ওই দু’জন প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। এভাবেই একজন অপর জনের উপর দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে নিজেরা এড়িয়ে যান।

Post Views:
০
|
|