|
প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে জেলেরা তাদের মাছ ধরার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে
বরিশালে চলছে মা ইলিশ নিধনের যেন মহোৎসব
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : বরিশালের মুলাদীতে জেল-জরিমানায় দিয়েও থামানো যাচ্ছে না জেলেদের। চলছে মা ইলিশ নিধনের মহোৎসব। উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা মৎস্য অফিস, মুলাদী থানা পুলিশ দিন-রাত নদীতে অভিযান অব্যহত রাখলেও প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা অসাধু চক্রের সহায়তায় স্থানীয় একটি মহলে ছত্রছায়ায় জেলেরা ইলিশ শিকার করায় প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষার অভিযান শতভাগ সফল হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ৭ অক্টোবর থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন নদীতে অভিযান চালিয়ে মা ইলিশ ধরার দায়ে কমপক্ষে ৩০ জনকে কারদন্ড এবং ৩জনকে অর্থদন্ড দিলেও জেলেরা নদীতে মাছ ধরা অব্যহত রেখেছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে জেলেরা তাদের মাছ ধরার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা। জানাগেছে প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ ধরা নিষিদ্ধের অভিযান শুরু হলেই উপজেলার জয়ন্তী, আড়িয়ালখা ও নয়াভাঙ্গনী নদীতে জেলেরা বিশেষ কৌশলে মাছ ধরার মিশনে নামে। স্থানীয় মহলের সহায়তায় প্রশাসনের লোক পৌঁছানের খবর পৌঁছে যায় তাদের কাছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা মৎস্য অফিসারের নেতৃত্বে অভিযান চালানোর সময় তাদের নজরে কোনো মাছ ধরার নৌকা চোখে না পড়লেও তাদের পেছনে পেছনে জাল ফেলে জেলেরা। অভিযোগ রয়েছে প্রশাসন কিংবা থানা পুলিশ উপজেলা সদর থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে জেলেদের কাছে সংবাদ পৌঁছে যায়। আর যে যার মতো করে নিরাপদ জায়গায় অবস্থান নেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায় নাজিরপুর নৌ পুলিশ ও বোয়ালিয়া পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ জেলেদের ইলিশ শিকারে পরোক্ষভাবে সহায়তা করছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মৎস্য অফিসারের নেতৃত্বের অভিযানে বের হলেই নৌ পুলিশের কয়েকজন সদস্য স্থানীয় জেলে প্রতিনিধিদের মোবাইল ফোনে মিসড কল দেয়। ওই সংকেত পেলেই জেলে প্রতিনিধিরা সাধারণ জেলেদের নিরাপদে সড়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়। আর এ কাজ করার জন্য নৌ পুলিশ, ফাঁড়ি পুলিশ এবং জেলে প্রতিনিধিরা সাধারণ জেলেদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। জেলেরা মাছ ধরতে পারলেই হলো। বিক্রির জন্য তাদের কোনো চিন্তা-ভাবনা করতে হয় না। সাধারণ ক্রেতারা নদীর পাড়ে বিভিন্ন স্পটে অবস্থান নেয় মাছ কেনার জন্য। তাই বাজারে ইলিশের দেখা না মিললেও রাস্তা-ঘাটে মোটরসাইকেলের পিছনে ব্যাগে দেখা মেলে ইলিশের এবং মানুষের বাড়ির ডিপ ফ্রিজে প্রতিনিয়ত ঢুকছে ইলিশ। নদীতে জেলেদের নৌকা দেখে মনে হয় তাদের মধ্যে যেন আনন্দের ছোঁয়া লেগেছে। তবে এদের মধ্যে মৌসুমী জেলেদের সংখ্যা অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন সাধারণ জেলেরা। যারা ক্ষেত-খামারে কাজ করেন, স্কুল-কলেজে লেখা পড়া করেন তারাও নিষিদ্ধ মৌসুমে ইলিশ শিকারের জন্য নৌকা ভাড়া করেন। অনেকে ঢাকা থেকে কর্মস্থল থেকে ছুটি নিয়ে এসেছেন ইলিশ শিকার করার জন্য। এসব মৌসুমী জেলেদের কয়েকজন প্রশাসনের হাতে ধরা পড়ে এক বছরের কারাদন্ড নিয়ে জেল হাজতে রয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান তিনি প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে খেয়া পাড়া-পাড়ের সময় আড়িয়ালখাঁ (ছৈলা) নদীতে যতদূর চোখ যায় তার মধ্যে ১ থেকে দেড়শো জেলে নৌকা দেখতে পান। আর প্রশাসনের ট্রলার দেখতে পেলেই নৌকাগুলো খালের মধ্যে আত্মগোপন করে। এসব জেলে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা না আসলে মা ইলিশ রক্ষার অভিযান সফল হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন জানান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ শিকার বন্ধে অভিযান চালিয়ে শতভাগ সফল না হতে পারলেও প্রশাসনের চেষ্টা অব্যহত রয়েছে। মুলাদী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সাইদ আহমেদ তালুকদার জানান, নদীতে অভিযান পরিচালনা করা পুলিশের নির্ধারিত দায়িত্ব না হলেও মৎস্য অফিসকে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য থানা পুলিশ দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে।
Post Views:
১,৩৩৬
|
|