|
তাদের তিনজনের নামেই যৌথ অ্যাকাউন্টে রাখা হয় ১৬ লাখ টাকা
বরিশালে ঘুষ কেলেঙ্কারিতে বরখাস্ত জিল্লুর এখন ট্যুরিস্ট পুলিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক : দুই বছর আগে বরিশালে পুলিশে পদোন্নতি ও বদলির জন্য ঘুষ তহবিল গঠনের ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত পুলিশ কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন। ২০১৫ সালে তিনি বরিশাল মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) ছিলেন। ঘুষ তহবিল গঠনের ঘটনায় তাকে বরখাস্ত করে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত করা হয়। তবে তিনি কোনো দায়িত্ব পাননি।তবে শেষ পর্যন্ত জিল্লুরকে কোনো সাজা পেতে হলো না। দুই বছরের মধ্যে নতুন দায়িত্ব পেয়ে গেলেন তিনি। বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ১৩ জন পুলিশ সুপারকে বদলি অথবা নতুন দায়িত্ব দেয়া হয়। এদের মধ্যে আছে জিল্লুর রহমানের নাম। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদরদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (মিডিয়া) মহসিন হোসেন বলেন, ‘আমি তার বিষয়টা জানি না, আপনাকে কী বলব।’ কিন্তু দুই বছর আগে এই ঘটনা নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল এবং পুলিশ সদরদপ্তরই জিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিল-এটা জানালে মহসিন হোসেন বলেন, ‘সবাই কি পত্রিকা পড়ে?’। পদোন্নতির জন্য ঘুষের তহবিল তৈরির কেলেঙ্কারিতে সাময়িক বরখাস্ত জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ওই সময় একটা অভিযোগ ছিল। সেটা ফাইল হয়েছে। এরপর আমাকে সংযুক্ত করা হয়েছে। তারপর থেকে আমি এখানে (সিলেট ডিআইজি অফিস)। গতকাল (বুধবার) একটা অর্ডার হয়েছে।’ নতুন কাজে কবে যোগ দেবেন-জানতে চাইলে জিল্লুর রহমান বলেন, ‘দোঁয়া করবেন।’ ২০১৫ সালে বরিশালে দায়িত্বে থাকার সময় জিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল পদোন্নতির জন্য ঘুষের টাকা সংগ্রহে বরিশাল মহানগর পুলিশের নিম্ন পদের পুলিশ সদস্যদেরকে প্রলুব্ধ বা উদ্বুব্ধ করেছেন। এমন গোয়েন্দা তথ্যে পুলিশ সদর দপ্তরের ‘ডিসিপ্লিন অ্যান্ড প্রফেসশনাল স্ট্যার্ন্ডাড’ শাখা ওই বিষয়টিতে অনুসন্ধানে নামে। সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই জিল্লুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করার সুপারিশ করেছিলেন আইজিপি। কিন্তু জিল্লুর রহমান সেই ঘুষের টাকা আর কাকে দিতে চেয়েছিলেন তার কোন তদন্ত প্রকাশের খবর পাওয়া যায়নি। বরিশাল মহানগর পুলিশের বিএমপির ২৩০ পুলিশ সদস্য বিশেষ পরীক্ষায় পদোন্নতির জন্য পাস করে পদায়নের অপেক্ষায় ছিলেন। বিএমপির পক্ষ থেকে ২০১২ সালে পাঁচ হাজার ৯০ জনের নতুন পদ সৃষ্টির প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ওই পদের বিপরীতে ৮৫০ পদের জন্য সম্প্রতি সংস্থাপন মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয়। পরে অর্থ মন্ত্রণালয়ও অনুমোদন করে। ওই পদে পদোন্নতি পেতে পাস করে বসে থাকা কনস্টেবলরা তদবির শুরু করেন। বিএমপির একটি চক্র তাঁদের পদোন্নতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনপ্রতি ৩০ হাজার থেকে ৫৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ৭৭ লাখ টাকা ঘুষ সংগ্রহ করে। জিল্লুর রহমান ওই চক্রের নেতৃত্বে ছিলেন বলে সে সময় গণমাধ্যমে লেখালেখি হয়। অভিযোগ রয়েছে, জিল্লুর রহমানসহ আরেক কর্মকর্তার নির্দেশনায় বডিগার্ড কনস্টেবল বাবলু, অস্ত্রাগারে কর্মরত পুলিশের নায়েক কবির, কাউনিয়া থানার সহকারী উপপরিদর্শক মনির মিলে ২৩০ জনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ঘুষ তোলেন। তাদের তিনজনের নামেই যৌথ অ্যাকাউন্টে রাখা হয় ১৬ লাখ টাকা, যা পরে জানাজানি হলে গত ১৭ জুন বরিশাল পুলিশ সদর দপ্তরে আসা ফ্যাক্স বার্তার মাধ্যমে ‘পুলিশের সিকিউরিটি সেল’ তাঁদের তলব করে ঢাকায় নিয়ে যায়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ১০ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ সদর দপ্তর। ২০১৫ সালের ১ জুলাই শৃঙ্খলা ভঙ্গ, অসদাচরণ, দুর্নীতি এবং পুলিশ বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অভিযোগে বরিশাল মহানগর পুলিশের উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার জিল্লুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ সদর দপ্তর। তখন তার বিরুদ্ধে তদন্তও করেছিলেন কর্মকর্তারা।
Post Views:
৫৭
|
|