Current Bangladesh Time
মঙ্গলবার মার্চ ২৫, ২০২৫ ৮:৩৯ অপরাহ্ণ
Latest News
প্রচ্ছদ  » স্লাইডার নিউজ » বরিশালে কীর্তনখোলার খেয়াঘাটে নৌকা চালিয়ে ৫ নারীর চলছে জীবিকা নির্বাহ 
Sunday December 3, 2017 , 4:44 pm
Print this E-mail this

এরা প্রত্যেকেই বিভিন্ন সমিতি থেকে ৪/৫টি করে লোন নিয়ে সে-ই লোনের জালে আটকে রয়েছেন

বরিশালে কীর্তনখোলার খেয়াঘাটে নৌকা চালিয়ে ৫ নারীর চলছে জীবিকা নির্বাহ


বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর রসুলপুর কলোনির খেয়াঘাটে নৌকা চালিয়ে ৫ নারীর চলছে জীবিকা নির্বাহ। পেটের তাগিদে ভোরের সূর্য জেগে ওঠার আগেই এই ৫ নারী মাঝি কীর্তনখোলার বুকে ভাসিয়ে দেন নৌকা। দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর এই খেয়ায় ঘাটে শ্রম দিয়েও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের জীবন জীবিকার মান বাড়েনি বরং কমেছে। রোদে পোড়া কালো মুখে নেই হাসি, কণ্ঠে হতাশার সুর ! তার পরও কীর্তনখোলার বুকে নৌকা চালিয়ে এখনো বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেন এই ৫ নারী। বর্তমানে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে নৌকা চালিয়ে আর জীবন চলে না। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীর এপার ওপার মিলিয়ে ৫ নারীর নৌকাগুলো বাধা আর তাকিয়ে আছে যাত্রীর জন্য। কেউ কেউ ডাকছেন, ‘আহেন মামা, উডেন মোর নৌকায়। এভাবেই হাঁকা-হাঁকি করে সারাদিন নৌকা চালিয়ে পেটে-ভাতে চলছে তাদের জীবন। দিনের পর দিন ফুরালেও এই অবস্থার নেই কোনো পরিবর্তন। দিনে যা আয় করেন, তা ডাল ভাত খেতেই চলে যায়।ওদিকে সপ্তাহের প্রায় ৫ দিনই রয়েছে সমিতির কিস্তি। দিন শেষে সঞ্চয় বলে আর কিছুই থাকে না। মাঝি মিষ্টি বেগম, মরিয়ম, শেফালী বেগম, ফিরোজা বেগমদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সারা দিন নৌকা চালিয়ে তারা একজন নারী মাঝি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করেন। যা দিয়ে জীবন চলানো দায়।যেমনটা জানালেন মাঝি মিষ্টি বেগম, ‘হারা দিন নাও চালাইয়া ২০০-৩০০ টাহা কামাই হরি। হেইয়া দিয়া পোলা মাইয়ারে পড়াশুনা হরাই, বাসা ভাড়া দিয়া দুইডা ডাইল বাত খাই অনেক কষ্ট কইরা। যাও একটা ঘর আছেলো চরে, সরকারী লোক আইয়া তাও ভাইঙ্গা দেছে। ৪ডা সমিতি দিয়া টাহা উঠাইয়া ঘর বানাইছেলাম। এহোন কিস্তিও টানি, ঘর ভাড়াও দেই। আতে থাহে না ১ টাহাও। ওসুক অইলে থাকতে হয় গরে হুইয়া। হেই দিন না খাইয়া থাহা লাগে। এডাই মোগো জীবন।‘সময়ের বিবর্তনে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, নানা অজুহাতে পাবলিক পরিবহনের ভাড়াও বেড়েছে, কিন্তু বাড়েনি এই খেয়াঘাটের ভাড়া। তার উপর এখানকার যাত্রীরা সকলেই স্থানীয় হওয়ায় অনেকেই বিনা পয়সায় পাড়াপাড় হন। এই ৫ নারী মাঝিরা মানবেতর জীবনযাপন করলেও স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো সরকারই মাঝিদের কোনো ধরনের সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনি এমন অভিযোগ তাদের। মাঝি শেফালীর (৪৫) বলেন, মোগো বাড়ি বরিশালের সাইবের হাট। কিন্তু বাপ-দাদার জমি জমা অন্য লোকে ঠগাইয়া লইয়া গ্যাছে তাই ১০ বছর বয়স অইতেই নৌকা চালাই। হেই সময় রোজগার ভালো আছিলো, সংসারে কোনো অভাব আছিলো না। বাবা, অহন বড় দুঃখে আছি, ৪৫ বছর বয়স, অহনো নৌকা বাইয়া সংসার চালাই। তিনি কেঁদে কেঁদে আরো বলেন, ছোট বেলা অইতেই যে নৌকার বৈডা আতে নিছি হেডা মরণ পর্যন্ত যেন আতে থাহে। সর্ম্পকে এই ৫ নারী মাঝির মধ্যে ৩ জনই আপন বোন। এদেরই এক জন মরিয়ম (৫৫) বলেন, বিয়ার পর স্বামী ২টা মাইয়া পোলা রাইখখা আরো ৪ডা বিয়া হরছে। মোগো খোঁজ খবর লয় না। অগো প্যাডে ২ডা ভাত দ্যাওয়ার জন্যই সকাল হইতে রাইত পর্যন্ত নৌকা বাইতে হয়। নৌকা না বাইলে খামু কি? তবে সরেজমিন গিয়ে এই ৫ নারী মাঝির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এরা প্রত্যেকেই বিভিন্ন সমিতি থেকে ৪/৫টি করে লোন নিয়ে সে-ই লোনের জালে আটকে রয়েছেন। ইচ্ছা থাকলেও জীবন জীবিকার মান উন্নত করতে পাড়ছেন না তবে তাদের মধ্যেও রয়েছে সচেতনেতা। মাঝি মিষ্টি বেগম তার দুটো সন্তানের পড়াশুনার জন্য বেশি টাকা ভাড়া দিয়ে শহরে বসবাস করেন। তিনি মনে করেন, রসুলপুরের প্রায় প্রতি ঘরেই রয়েছে মাদকের কারবার। তবে সব মাঝিরাই একটা বিষয়ে একমত যে, সরকার যদি তাদের দিকে একটু সুনজর দেয় তাহলে সুখ না বাড়ুক কষ্ট তো একটু কমবে।

  • শামীম আহমেদ, অতিথি প্রতিবেদক




Archives
Image
চীন সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে : ড. ইউনূস
Image
বরিশালে ছিনতাই মামলায় ছাত্রদল নেতা কারাগারে
Image
নিরাপদ ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে বরিশালে কঠোর অবস্থানে বিআরটিএ
Image
ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সন্‌জীদা খাতুন আর নেই
Image
সচিবালয় এলাকায় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ, আহত ৪০