|
বোর্ডের কোনও নির্দেশনা না মেনে পরীক্ষার ফি আদায়, বিপাকে গরীব শিক্ষার্থীরা
এসএসসি’র ফরম পূরণে বরিশালে অতিরিক্ত টাকা আদায়
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : বরিশাল নগরীর জগদীশ স্বারস্বত বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন অস্বচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তাদের অভিযোগ, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির কতিপয় অসাধু সদস্য ও প্রধান শিক্ষকের যোগসাজসে এ অর্থ আদায় করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা জানায়, এসএসসির ফরম ফিলাপের সময় স্কুলের উন্নয়ন ও কোচিং ফি বাবদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ৫ হাজার ৭২০ টাকা এবং ব্যবসায় শিক্ষা ৫ হাজার ৬৩০ টাকা ও মানবিক বিভাগে ৫ হাজার ৬৩০ টাকা। এছাড়া নির্বাচনি পরীক্ষায় বিভিন্ন বিষয়ে অকৃতকার্যদের কাছ থেকে বিভিন্ন হারে জামানত নেয়া হয়েছে। এক বিষয়ে ২ হাজার টাকা, দুই বিষয়ে ৪ হাজার টাকা, তিন বিষয়ে ৮ হাজার টাকা এবং চার বিষয়ে ১৬ হাজার টাকা পর্যন্তও আদায় করা হয়েছে। জানা গেছে, চলতি বছর এ স্কুল থেকে বিজ্ঞান, ব্যবসায় ও মানবিক বিভাগে প্রায় ২ শতাধিক শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। স্কুলের এক এসএসসি পরীক্ষার্থী জানায়, অতিরিক্ত অর্থ দিতে না পারায় সে ফরম ফিলাপ করতে পারেনি। আরেকজন জানায়, প্রতি বছরই এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে গলাকাটা অর্থ আদায় করেন শিক্ষকরা। তারা বোর্ডের কোনও নির্দেশনা না মেনে নিজেদের নিয়মে পরীক্ষার ফি আদায় করে আসছেন। একই স্কুলের আরেক শিক্ষার্থী জানায়, কোচিং ও উন্নয়ন ফি বাবদ মাত্রাতিরিক্ত ফি আদায়ের ফলে গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা বিপাকে পড়েছেন। এসব শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানান, আমরা ফরম ফিলাপের বিষয়টি খোলাসা করলে তালিকা থেকে আমাদের মেয়েদের নাম বাদ পড়ে যাবে। গোপনে তদন্ত করলে সব বেড়িয়ে আসবে। জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্র ও বোর্ড ফি মিলিয়ে এসএসসির ফরম পূরণে বিজ্ঞান বিভাগে ১৮০০টাকা, ব্যবসায় বিভাগের জন্য ১৬৮০ টাকা ও মানবিক বিভাগের জন্য ১৬৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কালীবাড়ি রোডের জগদীশ স্বারস্বত বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘কোচিং ও উন্নয়ন ফিসহ বিজ্ঞান বিভাগে ৫ হাজার ৭০০ টাকা ও মানবিক বিভাগে ৫ হাজার ৬০০ টাকা করে নিচ্ছি। অবৈতনিক স্কুল উন্নয়ন খাতে ৭০০ টাকা আর স্কুলে শিক্ষার মান ধরে রাখার জন্য স্যারদের অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয় তাই কোচিং ফি বাবদ ৩ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। যাদের সামর্থ নেই তাদের কোচিং ফি দিতে হয় না। এসব টাকা আদায়ের জন্য কোনও রেজুলেশন করা হয়নি। বোর্ডের টাকার মানি রিসিট দেওয়া হয়, কিন্তু উন্নয়নের টাকার কোনও রিসিট দেওয়া হয় না। এসব শিক্ষক আরও জানান যেসব শিক্ষার্থী ৪/৫টি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে এসএসসি’র ফরম পূরণের আগে তাদের ফের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে দুর্নীতির মাধ্যমে নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীদেরও ফরম পূরনের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।
প্রধান শিক্ষক শাহালম ব্যাপারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বরিশালের জেলা প্রশাসকের দোহাই দিয়ে বলেন, কতজন কৃতকার্য ও অকৃতকার্য হয়েছে তার এখনও তালিকা করা হয়নি। তবে ৪২ জন শিক্ষার্থী অকৃতকার্যের তালিকায় রয়েছে। আর বাকি তথ্য জানাতে পারবেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক এস.এম.অজিয়র রহমানের কাছে। বরিশাল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন জানান, অভিযোগ পেলে সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করবেন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। তিনি আরও বলেন সরকারের উর্দ্ধে কেউ নয়, আমরা অবশ্যই বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বরিশাল জেলা প্রশাসক এস.এম.অজিয়র রহমান বলেন, বিষয়টি আমি দেখছি।
Post Views:
৬১৩
|
|