|
প্রায় ১৭একর জমিতে অন্তত সাত থেকে আটশ’ মন ধান ইঁদুরে সম্পূর্ণ বিনষ্ট করেছে
বরিশালে আমনের বাম্পার ফলনের পরেও ইঁদুরে ফসল বিনষ্টের কারণে হতাশ কৃষক
চলতি মৌসুমে জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলায় আমনের বাম্পার ফলন হলেও ইঁদুরে জমির ফসল বিনষ্ট করায় হাসি কেড়ে নিয়েছে কৃষকের। জমিতে রোপিত একমুঠো ধানও কাটতে না পেরে কৃষকদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা। সরেজমিনে উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের নওপাড়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে তারা একটি ব্লকে প্রায় ১৭ একর জমিতে ‘লাল পাইকা’ জাতের ধান চাষ করেন। কৃষক দীপংকর বাড়ৈ জানান, তিনি ৮০শতক জমিতে রোপা আমনের চাষ করেছিলেন। প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও তার ক্ষেতে শীষ বেড়িয়ে বেশ ভাল ফলন হয়েছিল। তিনি তার জমি থেকে ৩৫ থেকে ৪০মন ধান ঘরে তোলার আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু ভাদ্র ও আশ্বিন মাসে ধানের শীষ বেড় হবার পর তার জমির সম্পূর্র্ন ধান ইঁদুরে কেটে ফেলায় একমুঠো ধানও ঘরে তুলতে পারেননি তিনি। ধান কাটার জন্য কাঁচি নিয়ে জমিতে যেতে পারেননি তিনি। কৃষক দীপংকরের মতো ওই গ্রামের কৃষক প্রফুল্ল বেপারী ৮০শতক, বিজয়া বেপারী ৬০শতক, রাজ্যেশ্বর হালদার ৬০শতক, রাখাল রায় ৪০শতক, শিখা বেপারী ৩০শতক, সুরেশ বেপারী ৬০শতক, শীতল রায় ২০শতক, আলমগীর ভূইঁয়া দুই একর, সুকুমার হালদার ৭০শতক, ওহাব আলী ফকির এক একর ৪৬শতক, শংকর রায় এক একর, সুনীল বেপারী ৪০শতক জমিসহ ওই গ্রামের ৪০/৪৫জন কৃষক প্রায় ১৭একর জমিতে রোপা আমনের চাষ করেছিলেন। কৃষক রাজ্যেশ্বর ও সুরেশ বেপারী চরম দরিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত হয়েও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ও স্থানীয়ভাবে ধার দেনা করে ধান চাষ করেছিলেন। ইঁদুরের কারণে একমুঠো ধান ঘরে তুলতে না পারায় তার পরিবারে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা। স্থানীয় চাষীদের হিসেব মতে, প্রায় ১৭একর জমিতে অন্তত সাত থেকে আটশ’ মন ধান ইঁদুরে সম্পূর্ণ বিনষ্ট করেছে। প্রায় একই অবস্থা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে চাষ করা ব্লকগুলোতে। ইঁদুর থেকে রোপিত ধান কাটা রক্ষা করতে কৃষকেরা আলোর ফাঁদসহ বিভিন্ন পন্থায় ইঁদুর মেরে ও জমিতে থাকা ইঁদুরের বাসা ভেঙ্গে ফেলার পরেও ইঁদুরের আক্রমণ থেকে তাদের ক্ষেতের ফসল রক্ষা করতে পারেনি। কৃষক শংকর রায় জানান, তিনি এক একর জমিতে ধান রোপন করেছিলেন। ফলন বেশ ভালো হওয়ায় তার আশা ছিল ধান বিক্রি করে সেই টাকা তার মুদী দোকানে খাটাবেন। কিন্তু ইঁদুরের কারণে তার স্বপ্ন ভেস্তে গেছে। কৃষাণী বিজয়া বেপারী কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, তার স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই তিনি জমি চাষাবাদ করে জীবনযাপন করে আসছেন। এ বছর বেসরকারী এনজিও কারিতাসের সুফল-২ প্রকল্পের আওতায় জমি চাষাবাদ করেন তিনি। ইঁদুরের কারণে কোন ফসল ঘরে তুলতে না পেরে বিধবা বিজয়া ও তার তিন মেয়ে কি খেয়ে দিন কাটাবেন সেই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি। কারিতাসের কৃষি প্রযুক্তি কর্মকর্তা নোবেল বিশ্বাস বলেন, তাদের এনজিও থেকে কৃষকদের বীজ ও কীটনাশক সহায়তা দেয়া হয়েছিলো। ফলন ভাল হওয়া সত্বেও ইঁদুরে ধান কাটার খবরে তিনি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার পরামর্শে কৃষকদের ইঁদুর নিধনসহ প্রতিকারের জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি কৃষকের ফসল। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ নাছির উদ্দিন বলেন, ইঁদুর খুব দ্রুত বংশ বিস্তার করে। বছরে এক জোড়া ইঁদুর তিন হাজার বাচ্চা দেয়। কারও একার পক্ষে ইঁদুর নিধন বা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। সমস্ত কৃষকরা একদিনে এক সাথে ইঁদুর নিধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত, তবেই ইঁদুর নিধন সম্ভব। ক্ষতিগ্রস্থ বাকাল নওপাড়া কৃষকদের ইঁদুরের ক্ষতি সম্পর্কে তিনি অনেক দেরিতে জেনেছেন বলেও উল্লেখ করেন।
শামীম আহমেদ, অতিথি প্রতিবেদক
Post Views:
২৯৪
|
|