|
অথচ পুলিশের বক্তব্য – ‘কিছুই করি নাই’
বরিশালে আটকের পর থানায় ‘নির্যাতন’
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : বরিশালে এক ব্যক্তিকে আটকের পর থানায় নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী পেপসি কোম্পানির ব্যবস্থাপক এবং তার গায়ে কালসিটে দাগ পড়েছে। স্বজনদের অভিযোগ, এটি পিটুনির দাগ। অথচ পুলিশের দাবি, তারা কিছু করেননি। ম্যানেজারকে নির্যাতন চালিয়েছে পুলিশ। শনিবার গুপ্ত কর্ণার বাপ্পি ডিজিটাল কালার স্টুডিও থেকে আটকের পর বরিশাল মহানগর পুলিশের কাউনিয়া থানায় উপপরিদর্শকদের কক্ষে এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতিত ব্যক্তির নাম দীলিপ চ্যাটার্জি ভোলা। দীলিপের স্ত্রী সঞ্চিতা রানী চ্যাটার্জি বলেন, থানায় নিয়েই এস আই জসিম তার স্বামীকে মারধর করেন। বর্তমানে উঠতে-বসতে ও খাবার খেতে পারছেন না নির্যাতনের শিকার দীলিপ। দীলিপ চ্যাটার্জিকে আদালতের মাধ্যমে রবিবার কারাগারে পাঠানো হয়। থানা সূত্রে জানা গেছে, বিসিক শিল্প নগরীতে অবস্থিত পেপসি কোম্পানির ডিপো ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন দীলিপ চ্যাটার্জি। ওই ডিপোর ইনচার্জ সঞ্জয় ঘোষ। মালামাল চুরি যাওয়া, হিসেব না মেলাসহ বেশ কিছু অসঙ্গতির অভিযোগে কাউনিয়া থানায় দীলিপ চ্যাটার্জি ও ওই ডিপোর অপর কর্মচারী ফরহাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন সঞ্জয়, যার মামলা নং: ৩২/১৮। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শম্ভু দাবি করেন, অভিযোগের ভিত্তিতে গত শনিবার বিকেল চারটায় গুপ্ত কর্ণার এলাকা থেকে দীলিপকে আটক করা হয়। তবে প্রত্যক্ষদর্শী, আসামি দীলিপ, তার স্ত্রী ও তাদের পুত্র বাপ্পি চ্যাটার্জি জানিয়েছেন, বেলা ১১ টার দিকে এসআই শম্ভু ও এসআই জসিম তাকে (দীলিপ) নিয়ে যান। সেখানে মারধর করলে দীলিপ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই দিন তাকে আদালতে সোপর্দ না করে পরের দিন অর্থাৎ রবিবার তাকে আদালতে পাঠানো হয়। সোমবার বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে দুপুরে দীলিপ জানান, আটকের পর থানায় নিয়ে এসআইদের কক্ষে শম্ভু স্যারের নির্দেশে মারধর করেন এসআই জসিম। মারতে মারতে তারা জিজ্ঞাসা করেন, মালামাল কোথায় রেখেছো? আমি এর কিছু জানি না বললে মোটা একটি বেত দিয়ে তারা আমার কোমরের নিচেসহ সমস্ত শরীরে পেটায়। একপর্যায়ে কারাগারের মধ্যেই তার শরীরের পোশাক খুলে দেখালে দেখ যায় কোমরের নিচেসহ তার সমস্ত শরীরে মোটা বেতের আঘাতের কালো চিহ্ন স্পষ্ট। থানার নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, মারধরের ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয় কিছু সংবাদকর্মী থানায় উপস্থিত হন। পরে তাদের সাথে আর্থিক সমঝোতায় সংবাদ প্রকাশ বন্ধ করেন এস আই শম্ভ ও এসআই জসিম। এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শম্ভু বলেন, চুরি মামলার আসামি দীলিপকে আটক করা হয়েছে সত্য। কিন্তু তাকে কোন নির্যাতন করা হয়নি। তার সমস্ত শরীরে যে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে এর কারণ কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটাতো আমি বলতে পারবো না। এসআই জসিমকে দিয়ে দীলিপকে মারধর করিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে শম্ভু বলেন, অভিযোগ আসতেই পারে। আসামিরা অনেক অভিযোগই দেয়। এগুলো সঠিক নয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন এসআই জসিম। আপনি ডিপোতে কেন গিয়েছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে জসিম বলেন, আমরা একে অপরের সাথে যে কোন মামলারই তদন্তে যাই। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। দীলিপকে নির্যাতনের ঘটনা অর্থের বিনিময়ে ধামাচাপা দেয়ার তথ্যও সত্যি নয় বলে দাবি করেন তিনি। এদিকে ঘটনার সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, থানা একটি নিরাপদ স্থান। এটি কাউকে নির্যাতন করার স্থান নয়। দীলিপকে মারধরের কোনো প্রশ্নই আসে না। তবে দীলিপের শরীরে আঘাতের চিহ্ন কিভাবে এলো-এ প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি ওসি। বরিশাল মেট্রেপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, আমি ঘটনার বিষয়ে পুরোপুরি অবগত নই। তবে তিনি আশ^স্ত করেন, থানায় আসামি নির্যাতনের মত কোন ঘটনা যদি ঘটে থাকলে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। দীলিপের স্ত্রী ও সন্তান পুলিশ কমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানিয়েছেন, দীলিপ কোনো অপরাধ করলে তা আইন অনুসারে বিচার হবে। কিন্তু থানায় তার ওপর যারা থানায় নির্যাতন চালিয়েছে তাদের বিচার চাই। প্রসঙ্গত, মামলার বাদী সঞ্জয় ঘোষের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু নির্যাতন ও মানব পাচারের অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছিলো। মামলায় তিনি দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন বলে নিশ্চিত করেন সঞ্জয় ঘোষ।
Post Views:
৫৯৩
|
|