|
কর্মকর্তারা নিজেদের আড়াল করে বর্তমানে অতিমাত্রার আওয়ামী লীগ সেজেছেন
বরিশালের ৬ ওসিকে নিয়ে তোলপাড়
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে এবং বিভিন্ন থানায় কর্মরত ওসিদের গোপনে প্রতিবেদন তৈরি করেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। এরইমধ্যে তা জমা পড়েছে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে। ওই প্রতিবেদনে পুলিশ কর্মকর্তাদের শিক্ষাজীবন, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা-মতাদর্শ এবং তাদের আত্মীয় স্বজনের কর্মকান্ডে তালিকা সবিস্তারে বর্ণনা করা হয়েছে। সূত্রমতে, ওই কর্মকর্তারা নিজেদের আড়াল করে বর্তমানে অতিমাত্রার আওয়ামী লীগ সেজেছেন। তারা সুক্ষভাবে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র কোন্দল সৃষ্টি করে মামলা দিয়ে হয়রানী করে আসছেন। সময়মতো এসব কর্মকর্তা তাদের খোলস বদলে আগের ভূমিকায় ফিরে যেতে পারেন। যা সরকারের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তালিকায় নাম আসা কর্মকর্তারা অনেকেই ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তারা এখনও গোপনে বিএনপি-জামায়াতকে সহায়তা করে যাচ্ছেন। তাদের অনেকের আত্মীয়স্বজন বর্তমানেও বিএনপি-জামায়াতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন। সম্প্রতি সময়ে একটি গণমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। প্রকাশিত সারাদেশের ৯৫ জনের নামের তালিকার মধ্যে রয়েছে বরিশাল জেলার ছয় থানার ওসির নাম। তারা হলেন-গৌরনদী মডেল থানার ওসি মনিরুল ইসলাম, বানারীপাড়া থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন, বাবুগঞ্জ থানার ওসি আবদুস সালাম, মুলাদী থানার ওসি মতিয়ার রহমান, মেহেন্দীগঞ্জের আকতারুজ্জামান ও বাকেরগঞ্জ থানার সাবেক ওসি মোঃ আজিজুর রহমান। এরা সকলেই ছাত্রজীবনে ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। দল করার পুরস্কার হিসেবে ওইসব অধিকাংশ ওসি বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন বিভিন্ন মেয়াদে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। ইতোমধ্যে দায়িত্বে অবহেলা ও ঘুষগ্রহণের অভিযোগে কয়েকজন ওসিকে ক্লোজডও করা হয়েছিলো। কয়েকজনের বিরুদ্ধে বর্তমানেও তদন্ত চলছে। নানাবির্তকিত কর্মকান্ডের জন্মদিলেও বরাবরেই ওইসব ওসিরা আওয়ামী লীগের তকমা লাগিয়ে বরাবরেই পার পেয়ে যাচ্ছেন। এরমধ্যে বানারীপাড়া থানায় কর্মরত ওসি সাজ্জাদ হোসেনকে নিয়ে বিশেষ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। সূত্রমতে, নোয়াখালীর চাঁদখিলের সাবেক সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কামরানের ভাতিজা ও নোয়াখালী সরকারী কলেজের ছাত্রদলের সাবেক জিএস সাজ্জাদ হোসেন। ১৯৯৩ সালে জামায়াত নেতা আলী আহসান মুজাহিদের সুপারিশে পুলিশ বাহিনীতে তিনি যোগদান করেন। কুষ্টিয়া সদর থানায় সেকেন্ড কর্মকর্তা থাকাকালীণ সময়ে কুষ্টিয়া সদরের তৎকালীন বিএনপির সাংসদের সান্নিধ্য লাভের জন্য আওয়ামী লীগের ১৭ জন নেতাকর্মীকে চরমপন্থী আখ্যায়িত করে কথিত ক্রসফায়ারে হত্যা করেন সাজ্জাদ হোসেন। পুরস্কার স্বরূপ তাকে কঙ্গোর শান্তি মিশনে পাঠিয়েছিলেন তৎকালীণ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। এছাড়াও পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে ঘাঁপটি মেরে থাকা সাজ্জাদ হোসেন বিভিন্ন থানায় চাকুরীকালীন সময়ে একাধিক বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্ম দিয়েছেন। বরিশালের আগৈলঝাড়া থানায় ওসি হিসেবে যোগদান করে তিনি বিভিন্ন নারী কেলেংকারীতে জড়িয়ে পরেছিলেন। এরপর বিএনপি ও জামায়াতের অবরোধের সময় তাকে গৌরনদী মডেল থানায় বদলী করা হয়। তিনি গৌরনদী থানায় যোগদান করেই ব্যাপক চাঁদাবাজীতে লিপ্ত হয়ে পরেন। তার নিস্কিয়তায় গৌরনদীতে স্মরনকালের পাঁচটি হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়। এরমধ্যে ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারী টরকীর সুন্দরদী এলাকায় লবন বোঝাই ট্রাকে অবরোধকারীদের ছোঁড়া পেট্রোল বোমায় নিহত হয় দুইজন। ওই ঘটনাটি ওসি সাজ্জাদ ধামাচাঁপা দিয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছিলেন। এ ছাড়া নানা বির্তকিত কর্মকান্ডের অভিযোগে ওসি সাজ্জাদ হোসেনকে বরিশাল পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছিলো। বর্তমানে তিনি বানারীপাড়া থানার ওসি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। গৌরনদী মডেল থানার ওসি মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে এক ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় এজাহারভুক্ত বিএনপি পন্থী আসামিকে গ্রেফতারের পর ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়। কমিটির তদন্তে ওসি মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় গত শুক্রবার রাতে গৌরনদী মডেল থানার ওসি মনিরুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়। নিহত কলেজ ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী সাকির গোমস্তার মা আলেয়া বেগম অভিযোগ করেন, গত বছরের ২২ নভেম্বর সাকিরের ওপর হামলাকারী ও হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ফাহিম হোসেনকে গ্রেফতার করেন থানার এসআই শামসুদ্দিন। ওইদিন সন্ধ্যায় ওসি মনিরুল ইসলাম মোটা অংকের টাকা ঘুষ নিয়ে ফাহিমকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়। এনিয়ে ২৩ নভেম্বর পৌর এলাকার পালরদী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কলেজ মাঠে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মানববন্ধন চলাকালীন সময়ে পরিদর্শনে আসেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মফিজুল ইসলাম মিঠু। এ সময় বিক্ষুব্ধরা ওসি মনিরুলের বিরুদ্ধে আসামি ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে গত শুক্রবার রাতে ওসি মনিরুলকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। উল্লেখ, পালরদী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ শিক্ষকদের অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করছিলেন স্থানীয় সোহেল গোমস্তা, ইলিয়াছ খান, সুমন হাওলাদার, এমরান মীর ও ফাহিম। এ সময় ওইসব যুবকদের প্রতিবাদ করেন কলেজ ছাত্র সাকির। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওইসব যুবকেরা প্রকাশ্যে সাকিরকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। ২১ নভেম্বর গভীর রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাকিরের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহতের মা আলেয়া বেগম বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
Post Views:
৮৫
|
|