|
মান্নার আসল নাম ‘কাজল’ – মান্না ওরফে মান্না পাহাড়ি ওরফে সর্পরাজ মান্না ওরফে শেখ মান্না
বরিশালের সে-ই মান্না পাহাড়ির উন্থান
মান্নার আসল নাম ‘কাজল’
আহমেদ বায়জিদ : বরিশালের সে-ই কথিত সাপুড়ে শেখ সর্পরাজ পান্না পাহাড়ি, এখন বরিশাল নগরীর ‘টক অব দ্যা টাউনে’ পরিনত হয়েছে। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে তাকে এবং তরুন নারী কাউন্সিলর ইসরাত আমান রুপাকে নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচানার ঝড়। অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায় কেন্দ্রসহ সর্বত্রই এখন আলোচনার বিষয় এটি। নারী কাউন্সিলর ইসরাত আমান রুপাকে সবাই চিনলেও প্রশ্ন হলো কে এই মান্না পাহাড়ি? এই সংবাদ খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। গত ৫ দিন ধরে নগরীর কাউনিয়া, নদীর ওপাড়, জিয়া সড়ক, দরগাহ বাড়ি, চৌমাথা, সদর উপজেলার চরকাউয়া থেকে গোমা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে গিয়ে মান্না পাহাড়িকে নিয়ে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ সব তথ্য। মান্না ওরফে মান্না পাহাড়ি ওরফে সর্পরাজ মান্না ওরফে শেখ মান্না। বিভিন্ন সময় নিজের নামের সাথে এভাবেই নানা উপাধি জড়িয়ে দেয় এই কথিত মান্না পাহাড়ি। মান্নার আসল নাম ‘কাজল’, পিতা মৃত লাল চান সিকদার। নগরীর পুরান কয়লাঘাট এলাকায় তার জন্ম। মান্নার পিতা লাল চান সিকদারের মৃত্যুর পর বসু মিয়ার সাথে দ্বিতীয় বিবাহে আবদ্ধ হয় মান্নার মা। বংশীয় সুবিধা লাভের আশায় জাতীয় পরিচয় পত্রে নামের আগে শেখ জুড়ে দেয় মান্না। মান্না কোন পাহাড়ি অঞ্চলেরও বাসিন্দা নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে মান্না পাহাড়ি নামে একজন বিখ্যাত সাপুড়ে ছিল। তাই কাজল নাম আঁড়াল করে মান্না পাহাড়ি নাম ধারন করেছে সে। কাউনিয়া এলাকার বাসিন্দা রিপন হাওলাদার জানান, ২০/২৫ বছর আগে মান্নাকে কাউনিয়া জানুকিসিং রোড এলাকায় দেখেছি। তবে তার প্রকৃত ঠিকানা কোথায় তা জানা নেই। অপর একজন জানান, ধারনা করা হচ্ছে ভাসমান বেদে নৌ থেকে মান্নার কাউনিয়া এলাকা আগমন। কথিত মান্না পাহাড়ি ওরফে কাজল সিকদারের সাপুড়ে জীবনের উত্থান ঘটে নদীর ওপাড় চরকাউয়া এলাকা থেকে। ১৯৯৬ সালে মান্না সদর উপজেলার চরকাউয়া, গোমা, লাহারহাট, সাহেবের হাট, সিংহেরকাঠীসহ বিভিন্ন স্থানে প্রথমে মার্শাল আর্ট শিখাতো ছোট শিশুদের। সাপের খেলা দেখানোর সুযোগে মান্না তাস খেলা দেখাতো। মানুষদের ঝার-ফুঁক দিত। ছোট শিশুদের বিপদগামী করার জন্য মান্নার জুড়ি ছিল না। শিশুদেরকে নিয়ে শোনা যায় তার নানা অপকর্মের কাহিনী। এ কারনে সিংহেরকাঠী গ্রামে একবার জুতা পেটার শিকার হয়েছিল মান্না। জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে চরাদি এলাকায় এক মেয়েকে কু-প্রস্তাব দেয় কথিত সর্পরাজ মান্না পাহাড়ি। এ কারনে স্থানীয়রা তাকে জবাই করতে চিয়েছিল। নদীর ওপাড় থেকে ধাওয়া খেয়ে বরিশাল নগরীর দরগাহ বাড়ি এলাকায় আশ্রয় নেয় এই মান্না। সেখানে ঝাড়-ফুঁকের সুযোগে এক নারীকে কু-প্রস্তাব দেয় এবং তাকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে। এ কারনে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রয়াত কাউন্সিলর রেজাউল করিম রেজভী ও তার সমর্থকরা মান্নাকে হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এলাকায় ফেলে মারধর করে। এক পর্যায়ে মান্নার মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয়। এর পরে গলায় জুতার মালা ঝুলিয়ে পুরো চৌমাথা প্রদক্ষিন করানো হয়। সেখান থেকে মান্না পালিয়ে চৌমাথা ঘোষ বাড়ি এলাকায় আশ্রয় নেয়। একদিন কাজিপাড়া চৌমাথায় সাপের খেলা দেখানোর সময় ভয় দেখিয়ে জনতার কাছে চাঁদা দাবি করে। এসময় জনতা তাকে বেধরক পেটায়। এরপর সেখান থেকে পালিয়ে ২২ নম্বর ওয়ার্ড জিয়া সড়ক এলাকায় আশ্রয় নেয় মান্না। গতবছর ২২ নম্বর ওয়ার্ডের আজিজ সড়কে একটি বসতঘরে এক মধ্য বয়সী নারীকে আটকে রাখে মান্না ও তার সহযোগিরা। তার উপর চালানো হয় শারীরিক নির্যাতন। পরে পুলিশ গিয়ে গুরুত্বর অসুস্থ অবস্থায় ওই নারীকে উদ্ধার করে। ওই ঘটনায় স্থানীয় কাউন্সিলর শহীদুল ইসলাম তালুকদারের উপস্থিতিতে মান্না পাহাড়িকে জুতাপেটাও করা হয়। একই বছর সাপে কাটা এক রোগীকে গৌরনদী থেকে তার স্বজনরা মান্নার কাছে নিয়ে আসে। এক ঘন্টা পর ওই রোগীর মৃত্যু হয়। পরে মান্না গা ঢাকা দেয়। মাদক ব্যবসা নিয়ে মান্না-রাজার বিরোধ দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা গেছে, জিয়া সড়ক এলাকায় বসবাসের সুবাদে কয়েক বছর আগে স্থানীয় যুবলীগ কর্মী ও মাদক ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম রাজার সাথে মান্নার সখ্যতা গড়ে উঠে। মান্না পদার্পন করে ইয়াবা ব্যবসায়। রাজার নির্দেশে সাপের বাক্সে করে ইয়াবা বহন শুরু করে মান্না। রাজা বসে বসে নির্দেশ দেয়, আর মান্না ইয়াবা পৌঁছে দেয় স্পটে স্পটে। এতে মান্নার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই কিছু দিন পাড় না হতেই রাজার কাছে ব্যবসার সমান ভাগ চায় মান্না। আর এ নিয়ে রাজা ও মান্নার বিরোধ দেখা দেয়। এরপর রাজার কাছ থেকে ছুটে এসে নিজেই ইয়াবার আলাদা সিন্ডিকেট খুলে বসে এই মান্না পাহাড়ি। শুরু হয় তার রমরমা মাদক ব্যবসা। নিজেই সিমান্ত এলাকা থেকে সাপের বাক্সে করে বরিশালে ইয়ারা নিয়ে আসে। মান্নার রমরমা ব্যবসা দেখে ঈর্শ্বানিত হয়ে তাকে হুমকি ধমকি দেয় রাজা। মান্না গিয়ে রাজার বিরুদ্ধে সাধারন ডায়েরী করে থানায়। এরপর দুই ইয়াবা ব্যবসায়ী গ্রুপ মান্না ও রাজার মধ্যে চরম বিরোধ দেখা দেয়। এর প্রেক্ষিতে কয়েক দিন পূর্বে মান্নাকে কুপিয়ে জখম করে রাজার নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসী বাহিনী। আহত অবস্থায় হাসপাতালের ট্রলিতে শুয়ে মান্না সাংবাদিক ও পুলিশকে জানায়, তাকে রাজা, সবুজ, ফিরোজ, মাসুদ কুপিয়ে আহত কয়েছে। অথচ এর দু’দিন পর সারা বাংলাদেশের মধ্যে তরুন কাউন্সিলর ইসরাত আমান রুপাাকে হুকুমের আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেন মান্নার স্ত্রী। ওই মামলায় গ্রেফতারের পর কারা হাজতে রয়েছেন রুপা। মামলার ৬ নম্বর আসামী হওয়া সত্বেও তাকে নেয়া হচ্ছে রিমান্ডে। এঘটনায় হতবাক বরিশালে সুশিল সমাজ। তারা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ষড়যন্ত্রের শিকার কাউন্সিলর রুপা অনার্স ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী থাকাবস্থায় জনগনের সরাসরি ভোটে নগরীর ১৬, ১৭ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন হন ইসরাত আমান রুপা। সদা হাস্যজ্জল এই জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে শুরু থেকেই ষড়যন্ত্রে নামে প্রভাবশালী এক জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। বিভিন্ন সময় তার বিরুদ্ধে চালানো হয়েছে মিথ্যা অপবাদ। তাকে হয়রানি করা হয়েছে নানাভাবে। চেষ্টা চালানো হয়েছে জীবননাশের। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারন ডায়েরীও করেছিলেন রুপা। সবশেষ মান্না পাহাড়িকে নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে বিনা অপরাধে জেলে যেতে হয়েছে এই তরুন জনপ্রতিনিধিকে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন সিডিসি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ইসরাত আমান রুপা। সিডিসি’র কাজ করতে গিয়ে জিয়া সড়ক এলাকার চিহিৃত মাদক ব্যবসায়ী রাজার স্ত্রী জেসমিনের সাথে পরিচয় হয় রুপার। তবে জেসমিনের সাথে অনেক আগে থেকেই গোপন সম্পর্ক ছিল তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী ওই জনপ্রতিনিধির। কিন্তু এ বিষয়টি জানা ছিল না রুপার। এছাড়া রাজা যে মাদক ব্যবসায়ী তাও জানতো না রুপা। একদিন ওই জনপ্রতিনিধির নির্দেশে জেসমিন রুপাকে ফোন করে জানায়, মান্না পাহাড়ি নামে এক সাপুড়ে তার স্বামী রাজাকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। এছাড়া ওই মান্না ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকায় ইয়াবা বিক্রি করছে। এতে এলাকার তরুন ও যুব সমাজ ধ্বংস হচ্ছে। পাশাপাশি সে রুপাকে অনুরোধ করে মান্না পাহাড়িকে ধমকানোর জন্য। জেসমিনের অনুরোধে এবং এলাকার পরিবেশের কথা ভেবে ষড়যন্ত্রকারীদের সাজানো ফাঁদে পা দেয় রুপা। মান্নাকে হুমকি দেয় মোবাইল ফোনে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হুমকির কথাগুলো মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে মান্না। পরে ষড়যন্ত্রকারীদের নির্দেশে কোতয়ালী থানায় রুপাার বিরুদ্ধে সাধারন ডায়েরী দায়ের করে মান্না পাহাড়ি। রুপাকে ভাল মেয়ে হিসেবেই জানেন এলাকাবাসী। মান্না পাহাড়িকে হুমকিদের রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পরেও রুপাকে ভাল মেয়ে হিসেবেই জানেন ১৬, ১৭ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। এত অপপ্রচারের পরেও তার উপর বিশ্বাস ও আস্থা হারায়নি এলাকাবাসী। ব্রাউন কম্পাউন্ড মসজিদ থেকে আসরের নামাজ আদায় শেষে বাসায় যাওয়া পথে নূরুল আমীন নামে এক বৃদ্ধ জানান, রুপা তার মায়ের সুনাম ধরে রেখেছে। সে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, সপ্তাহে ৩ দিন রোজা রাখে। তার পক্ষে কোন খারাপ কাজ করা সম্ভব নয়। রোকেয়া বেগম নামে ফকির বাড়ি এলাকার এক নারী জানান, রুপা কাউন্সিলর হলেও তার মধ্যে কোন ভাব নেই। সে সব সময় পরিপাটি থাকতে পছন্দ করে। ভয়েজ রেকর্ডের প্রসংঙ্গে অনেকেই বলেন, মান্না পাহাড়ি এমন কোন কাজ করেছে যার কারনে রুপা তাকে ধমক দিয়েছে। মোর্শেদ ব্যাপারী নামে এক চাকরীজীবি বলেন, রুপা ঠিক কাজ করেছে। কেউ তার এলাকায় মাদক বিক্রি করলে প্রতিবাদ তো করবেই। তবে তার বিরুদ্ধে মামলা নেয়ার আগে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্ত করা উচিত ছিল বলে মন্তব্য তার।
Post Views:
৩৯৬
|
|