|
১৫২ বছর পর একসঙ্গে দেখা যাবে সুপারমুন, ব্লু মুন ও চন্দ্রগ্রহণ
বরিশালের বিজ্ঞানীরা একসঙ্গে ব্লুমুন, সুপারমুন, চন্দ্রগ্রহণ পালন করলেন
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : বুধবার (৩১ জানুয়ারি) এক সঙ্গে দেখা মিলবে ব্লু মুন, সুপারমুন ও চন্দ্রগ্রহণ। সর্বশেষ ১৮৬৬ সালের ৩১ মার্চ দেখা মিলেছিল এমন বিরল দৃশ্যের। পূর্নচন্দ্রগ্রহণ পর্যবেক্ষনের জন্য বরিশালে বিজ্ঞান সংগঠন অনুসন্ধিৎসু চক্রের সদস্যরা নানা প্রস্তুতি নেয়। বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের খেলার মাঠে চন্দ্রগ্রহণ পর্যবেক্ষনের জন্য ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। বুধবার (৩১ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এই পূর্ন চন্দ্রগ্রহণ পর্যবেক্ষণ সকলের জন্য উন্মুক্ত ছিল। বিষয়টি নিশ্চিত করে অনুসন্ধিৎসু চক্রের জ্যোতির্বিজ্ঞান সংগঠন বরিশাল শাখার সাধারণ সম্পাদক রুবায়েত তালুকদার অপু জানান, বুধবারের পূর্ন চন্দ্রগ্রহন মোট ১ ঘন্টা ১৬ মিনিট স্থায়ী হবে। রাত ১০টা ৮ মিনিটে চন্দ্রগ্রহণের উপচ্ছায়া পর্যায় শেষ হয়। এই জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘটনা যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য ক্যাম্পে ৬ ইঞ্চি স্মিড ক্যাসিগ্রেইন টেলিস্কোপ থাকবে। এই ক্যাম্প থেকে ছবি ও বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ করা হবে। সাধারণত আমরা প্রতি মাসে একটি পূর্ণিমা দেখতে পাই, কিন্তু কখনও কখনও একই মাসে দু’টি পূর্ণিমা ঘটে থাকে। মাসের এই দ্বিতীয় পূর্ণিমাটিই হচ্ছে ব্লু মুন। চাঁদ পৃথিবীর সবথেকে কাছে চলে আসার অবস্থাকে সুপারমুন আখ্যা দিয়েছে জ্যোতির্বিজ্ঞান। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ৩১ জানুয়ারি সূর্যাস্তের আগে উত্তর আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চল থেকে এ বিরল দৃশ্য দেখা যায়। আর আন্তর্জাতিক তারিখ রেখার কারণে মধ্য ও পূর্বাঞ্চলীয় এশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, নিউ জিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বেশিরভাগ এলাকায় এ দৃশ্য দেখা যাবে ৩১ জানুয়ারি সূর্যাস্তের পর। ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি একটি সুপারমুন দেখা গিয়েছিল। ৩১ জানুয়ারি আরেকটি সুপারমুন দেখা যাবে। একই মাসে দ্বিতীয় পূর্ণিমা বলে এটি ব্লু মুনও। আবার এদিন চন্দ্রগহণও হয়। সরকারি সংস্থা ‘পজিশন্যাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টার’-এর অধিকর্তা সঞ্জীব সেনের বরাত দিয়ে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, বুধবার কলকাতায় চন্দ্রোদয় হবে বিকেল ৫টা ১৭ মিনিটে। ৫টা ১৮ মিনিটে আংশিক চন্দ্রগ্রহণ শুরু হবে। পূর্ণগ্রাস শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টা ২১ মিনিটে। পূর্ণগ্রাস শেষ হবে সন্ধ্যা ৭টা ৩৮ মিনিটে। রাত ৮টা ৪২ পর্যন্ত আংশিক গ্রহণ চলবে। ওই সময়ের পরেই পুরোপুরি মুক্তি পাবে চাঁদ। পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাসিন্দারা গ্রহণের শুরু থেকে শেষ পুরোটাই দেখতে পাবেন। ভারতের পশ্চিম উপকূলের বাসিন্দারা পূর্ণগ্রাসের শুরুটা দেখতে পাবেন না। শুধু পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ নয়, কাল, মাঘী পূর্ণিমার আরও বিশেষত্ব আছে। প্রথমত, চাঁদ ওই দিন পৃথিবীর সব থেকে কাছাকাছি আসবে অর্থাৎ ‘অনুভূ’ অবস্থানে থাকবে। যাকে বলা হয় ‘সুপারমুন’। দ্বিতীয়ত, এটা জানুয়ারির দ্বিতীয় পূর্ণিমা বা পূর্ণিমা-২! তবে একে ‘ব্লু মুন’ বলা হলেও চাঁদ মোটেই নীলচে হবে না। তবে সব মিলিয়ে এটা বিজ্ঞানীদের কাছেও আকর্ষক এবং বিরল ঘটনা। ‘ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স’-এর গবেষকদের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা আরো জানায়, সৌরজগতের গঠন পর্বে প্রচুর গ্রহাণু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। পরবর্তী কালে তাদের বেশির ভাগকেই নিজেদের দিকে টেনে নেয় বৃহস্পতি ও শনি। বাকিরা এখনও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। সেগুলি মাঝেমধ্যেই চাঁদের টানে সেখানে গিয়ে আছড়ে পড়ে। পৃথিবীর দিকে উল্কা ছুটে এলে বায়ুমণ্ডলে ঢোকার পরেই তা দ্রুত জ্বলে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু চাঁদে বায়ুমণ্ডল না-থাকায় তুলনায় ছোট মাপের উল্কা বা গ্রহাণুও প্রবল গতিতে ছুটে গিয়ে আছড়ে পড়েন এবং প্রবল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তৈরি করে নানা মাপের গহ্বর। আনন্দবাজার পত্রিকা আরো জানায়, কপাল ভাল থাকলে সদ্যোজাত গহ্বর দেখা যাবে। এমনকী গহ্বর তৈরির বিভিন্ন পর্বও চাক্ষুষ করা সম্ভব হতে পারে। সে-ক্ষেত্রে নতুন চান্দ্র গহ্বরকে কোনও বাঙালি বিজ্ঞানীর নামে চিহ্নিত করা হতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, উপবৃত্তাকার কক্ষপথে পৃথিবী থেকে চাঁদের এই নিকটতম অবস্থানকে অনুভূ বা পেরিজি বলা হয়। চাঁদ যখন পৃথিবীর খুব কাছে অবস্থান করে তখন চাঁদকে পৃথিবী থেকে তুলনামূলকভাবে অনেক বড় আর উজ্জ্বল দেখায়। পূর্ণ গোলাকার চাঁদের এই অবস্থাকে সুপারমুন বলা হয়। আর পৃথিবী যখন পরিভ্রমণরত অবস্থায় কিছু সময়ের জন্য চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে, তখন পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য একই সরল রেখায় অবস্থান করে। পৃথিবী থেকে তাকালে চাঁদকে আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে কিছু সময়ের জন্য অদৃশ্য মনে হয়। এই ঘটনাকে চন্দ্রগ্রহণ বলা হয়। এই তিনটি মহাজাগতিক ঘটনা আজ ৩১ জানুয়ারি একইসঙ্গে ঘটতে যাচ্ছে যা অপরিচিত না হলেও বিরল।
Post Views:
৩৭৪
|
|