|
হিন্দুদের ঐতিহ্যবাহী পুজা মন্ডপ ও মন্দিরের দুর্গা প্রতীমা সহ যাবতীয় মুর্তি তৈরী করেন তারা
বরিশালের বানারীপাড়ায় বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : বরিশালের বানারীপাড়া পৌর শহরের ৫নং ওয়ার্ডে প্রায় শত বছরের ঐতিহ্য বহন করা মৃৎশিল্প কালের বিবর্তনে আজ বিলুপ্তির পথে। দেশ ডিজিটাল যুগে পদার্পণ করায় এ্যালুমেনিয়াম, মেলামাইন ও প্লাষ্টিক ব্যাবহারের হার ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাওয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে মাটির তৈরি মৃৎশিল্পের সাংসারিক বিভিন্ন ধরণের উপকরণ’র ব্যাবহার। যারফলে বানারীপাড়া উপজেলায় চরম অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এই শিল্প। এক সময় বানারীপাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কয়েক শত পাল পরিবার প্রত্যক্ষভাবে এ শিল্পের সাথে জড়িত ছিল। আধুনিকতার ছোঁয়ায় কালের পরিক্রমায় মাত্র ২/৩টি পরিবার তাদের পূর্বপুরুষদের এ পেশাকে ধরে রেখেছেন অনেক কষ্টে। বানারীপাড়ার পালদের তৈরি মৃৎ শিল্পের সুনাম ও সুখ্যাতি ছিল এক সময় দেশব্যপী। বানারীপাড়ার পৌর শহরের ৫নং ওয়ার্ডের কুন্দিহার গ্রামের ঐতিহ্য পাল বংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে এখন মাত্র তিনটি পরিবার রয়েছে। এখানে নারায়ণ চন্দ্র পাল,লক্ষী পাল ও কাঁলাচান পাল স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বাপ-দাদার পুরণো এ পেশাকে ধরে রেখেছেন। শের-ই বাংলার চাখার ইউনিয়নের চাউলাকাঠি ও কালির বাজার গ্রামে রয়েছে মাত্র ৩/৪টি পরিবার। যেখানে একসময় শতাধিক পাল পরিবার ছিল। চাউলাকাঠি ও কালির বাজার গ্রাম দুটি সন্ধ্যা নদীর কড়াল গ্রাসের শিকার হওয়ায় সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব ও রিক্ত হয়ে পড়েছে পাল পরিবার গুলো। নারী-পুরুষের সমন্বয়ে পানি ও মাটি মিশিয়ে নরম করে মাটির জিনিস তৈরির উপযোগি করে চাকার সাহায্যে যাবতীয় মৃৎ শিল্প তৈরি করা হয়। এর পর রোদে শুকিয়ে জলন্ত চুল্লীতে দিয়ে তা পোড়ানো হয়। বানারীপাড়ার পালদের তৈরিকৃত তৈজসপত্রের মধ্যে রয়েছে হাড়ি, পাতিল, কলস, কড়াই, চাড়িয়া, ল্যাম্পদানি, ফুলদানি প্রভৃতি। এছাড়া হিন্দুদের ঐতিহ্যবাহী পুজা মন্ডপ ও মন্দিরের দুর্গা প্রতীমা সহ যাবতীয় মুর্তি তৈরী করেন তারা। বর্তমানে পালরা মুলত: সনাতন ধর্মালম্বীদের যাবতীয় প্রতীমা (মুুর্তি) তৈরী করে কোন রকমের জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন। ফলে মৃৎশিল্পের নিপূন কারিগররা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে অসহায় হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বানারীপাড়ার গাভা গ্রামের প্রবীন গৌরাঙ্গ পাল জানান, কোন মতে তারা তাদের আদি পেশাকে ধরে রেখেছেন। বানারীপাড়া, উজিরপুর ও স্বরূপকাঠী উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে তৈরীকৃত মৃৎশিল্প বিক্রি করে দু’মুঠো ডাল-ভাত খেয়ে কোন রকমের জীবন যাপন করছেন তারা। এদিকে পূর্ব পুরুষদের এ পেশাকে নিম্নমানের পেশা মনে করে অনেকেই অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়েছেন। এদিকে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে হারিয়ে যাওয়া মৃৎশিল্পের অতীত ঐতিহ্য পুণরায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে অনেকেই মনে করছেন।
Post Views:
১,৭৬৬
|
|