|
বসত ঘর, ভিটামাটি ও ফসলি জমি সহ সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব ও রিক্ত হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার
বরিশালের বানারীপাড়ায় কিছুতেই থামছে না অবৈধ বালু উত্তোলন
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার মাঝ দিয়ে বয়েচলা ভয়াল সন্ধ্যা নদী থেকে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রতিনিয়ত ৭/৮ টি অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলণে মেতে রয়েছে একটি প্রভাবশালী মহল। সরেজমিন অনুসন্ধানে এমনই অভিযোগ পাওয়া যায়। আরও জানা যায়, বানারীপাড়া উপজেলার সন্ধ্যা নদীত মোট ৮টি বালু মহল ইজারার পয়েন্ট ছিলো। নদীর ভাঙণ রোধে বালু উত্তোলণ বন্ধে উপজেলার ইলুহার গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য পরিমল জনস্বার্থে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে হাইকোর্টে (উচ্চ অদালতে) একটি রিট পিটিশন দায়ের করলে, বরিশাল জেলা প্রশাসক ও বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের কাছে নদীর ভাঙন রোধে কেন বালু মহাল ইজারা দেওয়া বন্ধ করা হবে না মর্মে জবাব চাওয়া হয়। হাইকোর্টের রিটের বিষয়ে নিষ্পত্তি না হওয়ায় গত দুই বছর ধরে বানারীপাড়া উপজেলায় বালু মহাল ইজারা স্থগিত রাখা হয়। এতে বালু দস্যুদের ক্ষতির চেয়ে লাভ বেশী হয়েছে। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন প্রশাসনকে মাসোয়ারার মাধ্যমে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখা হয়েছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে নদী পাড়ের বর্তমান বসতীরা (যাদের বসত ঘর যেকোন সময় নদী গর্ভে বিলীন হতে পারে) তারা অভিযোগ করেন। তারা আরও বলেন, প্রশাসন যদি মাসোয়ারার মাধ্যমে ম্যানেজ না হয়, তবে বালু দস্যুরা কিভাবে প্রতিনিয়ত অবৈধ ড্রেজার দিয়ে নদীর ইজারা বর্হিভূত পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন করছে? এদিকে অনিয়মান্ত্রিক উপায়ে যত্রতত্র ভাবে বালু উত্তোলণ প্রসঙ্গে নদী শাসন বিষেষজ্ঞরা মনে করেন, নদীর যে স্থানে ভাঙ্গন তীব্ররূপ ধারন করছে সেই স্থান বা তার উল্টো দিক থেকে বালু উত্তোলন করলে নদীর গভীরতা আরও বৃদ্ধি পেয়ে তলদেশে বিরাট আঁকারের ফাঁটলের সৃষ্টি হয়। ফলে আশপাশের বির্স্তীর্ণ এলাকাও ভাঙ্গন’র কবলে পতিত হয়। আর এভাবেই সন্ধ্যা নদী থেকে যত্রতত্র বালু উত্তোলনের ফলে প্রায় ২০টি গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা ইতোমধ্যেই উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। একমাত্র সম্বল ভিটে মাটি ও ফসলী জমি হারিয়ে নিঃম্ব ও রিক্ত হয়ে পড়েছে শতশত পরিবার। সবকিছু হারিয়ে অনেকেই এখন বেছে নিয়েছেন যাযাবর জীবন। বানারীপাড়ায় অনিয়মতান্ত্রিক ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে রাক্ষুসে সন্ধ্যা নদীর ভাঙন তীব্র রূপ ধারণ করেছে। বালু উত্তোলনের কারনে ভাঙছে নদী, পুড়ছে কপাল, কাঁদছে হাজারো মানুষ। আর কপাল খুলে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছেন সুবিধাবাদী ও স্বার্থান্বেষী মহল। তাদের কপাল খুললেও বর্তমানে নদীর তীরবর্তী শতাধিক পরিবার’র মধ্যে বসত ভিটে ভাঙ্গনের আতংক বিরাজ করছে। বালু দস্যুরা রাক্ষুসে সন্ধ্যা নদীর বুককে ক্ষত-বিক্ষত করে রাত-দিন ৭/৮টি অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। আর এর সবকিছু নিয়ন্ত্রন করছেন আওয়ামীলীগের এক শীর্ষ নেতা। বালু দস্যুদের কারনে ইতিমধ্যে সন্ধ্যা নদীর তীরবর্তী উপজেলার উত্তর নাজিরপুর, দক্ষিন নাজিরপুর, দান্ডয়াট, শিয়ালকাঠি, জম্বদ্বীপ, ব্রাক্ষ¥নকাঠী, কাজলাহার, ডুমুরিয়া, ইলুহার, ধারালিয়া, বাসার, নলশ্রী, মসজিদবাড়ি, গোয়াইলবাড়ি, খোদাবখসা, কালির বাজার,চাউলাকাঠি, মীরেরহাট ও খেজুরবাড়ি গ্রামের কয়েক শত একর ফসলি জমি,অসংখ্য বসতবাড়ি, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল,কলেজ, মাদ্রাসা,মসজিদ ও মন্দির সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। উপজেলার ইলুহার বিহারীলাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়,মিরেরহাট ও জম্বদ্বীপ সাইক্লোন শেল্টার যে কোন সময় নদী গ্রাস করে ফেলতে পারে। হুমকির মুখে রয়েছে খেজুরবাড়ি আবাসন ও উত্তর নাজিরপুর গুচ্ছ গ্রাম। ভাঙনের কারনে বসত ঘর, ভিটামাটি ও ফসলি জমি সহ সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব ও রিক্ত হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার। উল্লেখিত মানচিত্রে থাকলেও নদী গ্রাস করে ফেলায় গ্রাম গুলো বাস্তবে নেই। চলতি বর্ষা মৌসুমে পূনরায় নতুন করে ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে প্রায় শতাধিক পরিবার ও শিক্ষা সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। শুধু আওয়ামীলীগ সরকার আমলে নয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে বালু দস্যুরা ছিলেন আরও বেপরোয়া ওই সময়ই মূলত: গ্রামগুলো নদী গ্রাস করে ফেলে। এর ধারাবাহিকতায় এখনও ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
Post Views:
১,১৩৪
|
|