|
‘অন্যায় পরিস্থিতির শিকার হয়েছি’ – গাজী মো. সাইফুজ্জামান
বরিশালের নতুন ডিসি হাবিবুর রহমান, বরগুনায় মোখলেসুর
নতুন ডিসি হাবিবুর রহমান, বরগুনায় মোখলেসুর
আহমেদ বায়জিদ :
গাজী মো. সাইফুজ্জামান
বরিশালে সোমবার দুপুরের পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে দুই জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেয়া হয়। এর আগে বরিশাল থেকে গাজী মো. সাইফুজ্জামান এবং বরগুনার জেলা প্রশাসক মহা. বশিরুল আলমকে প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক এতথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ‘দুই জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তথ্য দিতে গাফিলতি করেছেন। এসব কারণে তাদের প্রত্যাহার করা হয়েছে।’ ইউএনও তারিক সালমন বরগুনার আগে কাজ করতেন বরিশালের আগৈলঝাড়ায়। গত ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে সেখানে এক শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এই প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হিসেবে নির্বাচিত অদ্রিজা করের আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবিটি তিনি ২৬ মার্চ উপজেলা প্রশাসনের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে ব্যবহার করেন। কিন্তু এই ছবিতে বঙ্গবন্ধুকে বিকৃত করার অভিযোগে তারিক সালমনের বিরুদ্ধে মামলা করেন বরিশাল আওয়ামী লীগের সে সময়ের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও বরিশাল আইনজীবী সমিতির সভাপতি সৈয়দ ওবায়েদ উল্লাহ সাজু। এর আগে ইউএনও সালমনকে বঙ্গবন্ধুর ‘বিকৃত’ ছবি ব্যবহারের কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেন বরিশালের জেলা প্রশাসক গাজী মো. সাইফুজ্জামান। আর সাজুর মামলায় গত ১৯ জুলাই সালমন বরিশাল আদালতে হাজিরার দিন তিনি জেলা প্রশাসকের সহযোগিতা চেয়েও পাননি। এই ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাশাপাশি আলোড়ন তুলেছে মাঠ প্রশাসনেও। সালমনের বিরুদ্ধে মামলায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম বলেছেন, তারা সালমনের কোনো দোষ খুঁজে পাননি। সালমন অভিযোগ করেছেন, আগৈলঝাড়ায় দায়িত্ব পালনের সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে তার বিরোধ হয়েছিল। এর জেরে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। আর এই মামলার নেপথ্যের লোকদের খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিটি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। অপরদিকে বরগুনার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজী তারিক সালমনকে গ্রেফতারের ঘটনায় দু’জন জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার করার পর, তাদের একজন বলেছেন, তারা একটি অন্যায় পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। সরকার বলছেন, নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করতে পারায়, বরিশাল ও বরগুনার জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কিন্তু এই বদলির ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বরিশালের জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান বলেন,‘সরকার যে কোন সিদ্ধান্ত আমরা মানতে বাধ্য। তবে বাস্তব পরিস্থিতি হলো আমরা ব্যর্থ হইনি, আমরা একটি অন্যায় পরিস্থিতির শিকার হয়েছি।’ গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, “এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যার সাথে আমরা কোনভাবেই সম্পৃক্ত না। কারণ আদালত মামলা আমলে নিয়েছিল অন্যায়ভাবে, জামিন বাতিল হয়েছে অন্যায়ভাবে, ঘটনার ছবি তোলা হয়েছে, পুলিশ যেভাবে ইউএনও-কে নিয়ে গেছে তাও অন্যায় হয়েছে।” “এ প্রক্রিয়াগুলোর সাথে তো আমাদের কোন সরাসরি ইনভলভমেন্ট নাই। কিন্তু এ কারণে যদি আমরা শাস্তি পাই- সেটাতো আমরা অন্যায়ের শিকার হলাম”- বলেন মি. সাইফুজ্জামান। এ বছর স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের একটি শিশুর আঁকা শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি দিয়ে কার্ড ছাপানোর জেরে মি: সালমনকে আটক করার পর, এ নিয়ে ব্যাপক ব্যাপক সমালোচনার মধ্যেই সরকার আজ এসব ব্যবস্থা নিলো। বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারিক সালমনের ঘটনায় ‘নিজেদের দায়িত্ব যথাযথ পালন না করতে পারায়’ বরিশাল ও বরগুনার জেলা প্রশাসকদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদেরকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ফেরত আনা হয়েছে এবং জেলা প্রশাসক হিসেবে নতুন দুজনের নামও ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে বরগুনার ইউএনওকে গ্রেফতারের ঘটনায় আইনি প্রক্রিয়ায় কোন সমস্যা হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ। ওই কমিটিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র এবং আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা থাকবেন এবং এ কমিটিকে আগামী পনের দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার ইউএনও থাকার সময় স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পত্রে তিনি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ছাপান যেটি পঞ্চম শ্রেণির এক শিশুর আঁকা ছিলো। পরে সে ছবিকে ‘বিকৃত’ অভিযোগ করে বরগুনার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজী তারিক সালমনের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা হয় বরিশালে। ওই মামলায় হাজির হওয়ার পর তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে এমন ছবি প্রকাশের পর দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং ক্ষোভ সৃষ্টি হয় জনপ্রশাসনে।
Post Views:
২৩৪
|
|