|
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে সোপর্দ, এর মধ্যে দু’জনের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ
বরগুনায় হাসিব হত্যা : মূল হোতা নোমান-চিকিৎসকসহ ৮ জনের নামে মামলা
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : অপহৃত হাসিব হত্যার ঘটনায় মূল হোতা আব্দুল্লাহ আল নোমান ওরফে তানভির ওরফে শিশু ফকিরসহ আটজনের নামে মামলা হয়েছে। ওই মামলায় একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত একজন পল্লি চিকিৎসকও রয়েছেন। মুক্তিপণের তিন লাখ টাকা না পেয়ে হত্যা করা হয় হাসিবকে। মুক্তিপণের জন্য অপহরণ করে হত্যার পর লাশ গুমের অপরাধে নিহত হাসিবের বাবা শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে সোমবার (অক্টোবর ২৩) রাতে মামলাটি করেন। মামলা নম্বর-১৩। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাথরঘাটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: শাহ আলম হাওলাদার। আসামিরা হলেন-উপজেলার গহরপুর গ্রামের মহিউদ্দিন ফরাজীর ছেলে আব্দুল্লাহ আল নোমান ওরফে তানভির ওরফে শিশু ফকির (১৯), দক্ষিণ জ্ঞানপাড়া গ্রামের আব্দুস সালাম কাজীর ছেলে আব্দুর রহিম কাজী (৪৮), হোগলাপাশা গ্রামের ইউনুস মুন্সির ছেলে আব্দুর রহিম মুন্সী (৩৫), বরগুনার হেউলিবুনিয়া গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে মো: মিজানুর রহমান (৩৪), হোগলাপাশা গ্রামের আলী আকবর মুন্সির ছেলে মো: ইউনুছ মুন্সি (৬৫), নোমানের স্ত্রী মোসা. তাহিরা (১৯), নোমানের শাশুড়ি মোসা. রহিমা (৫৫) ও তার মেয়ে মোসা. তানজিলা (২৮)। মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বাবার দোকান বন্ধ করে হাসিব দোকানের সামনে দাঁড়ালে আব্দুল্লাহ আল নোমান ওরফে তানভির ওরফে শিশু ফকির হাসিবকে তার সঙ্গে গেলে ১০ হাজার টাকা দেবে বলে ফুসলিয়ে অপহরণ করে পাথরঘাটা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইমান আলী সড়কে গোলাম মোস্তফার ভাড়া দেওয়া টিনশেড দোতালা ঘরে নিয়ে যায়। এরপর হাসিব ও মূল হোতা নোমান রাতে একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করে। রাত ৯টার দিকে নোমান পাথরঘাটা পৌর বাজারস্থ মাসুদ ফার্মেসি থেকে ৬টি ঘুমের ট্যাবলেট এনে সেভেন আপের সঙ্গে (কোমল পানীয়) মিশিয়ে খাওয়ালে হাসিব কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে। ওই দিন রাত ১২টার দিকে হাসিব দুইবার বমি করে। পরদিন ২১ অক্টোবর ৭টার দিকে নোমান হাসিবকে পূণরায় ৩টি অ্যালার্জির ট্যাবলেট খাওয়ালে সে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। ওই সময় নোমান কিডনি নেওয়ার উদ্দেশ্যে হাসিবের শরীরের রক্ত নিয়ে ঘরের মধ্যে আটক রেখে ওই বাসায় ভাড়ায় থাকা বরগুনার হেউলিবুনিয়ার বাসিন্দা পল্লি চিকিৎসক মিজানের কাছে নিয়ে যায়। রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করে মিল না থাকায় নোমানকে বলে এখন যদি হাসিবকে ছেড়ে দাও তাহলে আমাদের বিপদে পড়তে হবে। এ সময় আসামি মিজান নোমানকে বলে বাঁচতে চাইলে হাসিবকে জীবনে শেষ করে দাও। মিজানের কথা অনুযায়ী সকাল ১০টার দিকে হাসিবের হাত, পা প্লাস্টিকের রশি দিয়ে বেঁধে মুখে গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এর আগে হাসিবের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোনে ০১৭৩৮৯৫৩৯১৫ নম্বরের সিম ঢুকিয়ে ফোনে ভিডিও ধারণ করে হাসিবের চাচা মনিরের ইমোতে তিন লাখ টাকা চেয়ে পাঠায়। ওই মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, ওইদিন বিকেলে নোমান পাথরঘাটার নীলিমা পয়েন্ট গিয়ে হাসিবের চাচা মনিরের ফোনে কল দিয়ে আবারও তিন লাখ টাকা চায়। এ সময় হাসিবের অসুস্থতার কথা বলে নোমান ০১৭২৭৯৭০৭০৫ নম্বরের বিকাশ নম্বর দিলে ওই নম্বরে মনির ৪ হাজার টাকা পাঠায়। তিন লাখ টাকা না দেওয়ায় ২২ অক্টোবর সকাল ৭টার দিকে হাসিবের মরদেহ কাঁথা দিয়ে পেঁচিয়ে হোগলাপাশা নোমানের শ্বশুরবাড়ি নিয়ে কুঠার কুটের মধ্যে রাখে। ওইখান থেকে কয়েক ঘণ্টা পর বিকেল ৪টার দিকে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সহযোগিতায় ইজিবাইকে করে কাকচিড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ বাইনচটকি এলাকার নিভৃতে বেড়িবাঁধ এলাকায় ২ নম্বর আসামি আ. রহিম কাজীর সহায়তায় মাটিতে পুঁতে রাখে। এদিকে সোমবার আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ। এর মধ্যে দু’জনের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ। পাথরঘাটা ওসি শাহ্ আলম হাওলাদার বলেন, এটি এখন চাঞ্চল্যকর ঘটনা। আমরা সে হিসেব করেই গুরুত্ব দিয়ে সার্বিক দিক তদন্ত করছি। এ ঘটনায় ৮ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে আবদুল্লাহ আল নোমান ও পল্লি চিকিৎসক মিজানুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।
Post Views:
১২০
|
|