|
জোয়ার-ভাটা নির্ণয় করে চলে শিক্ষার্থীদের ক্লাস
বছরের ১২ মাসই নৌকায় করে স্কুলে আসা-যাওয়া করে নাজিরপুরের ১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা
এইচ.এম. দেলোয়ার হোসেন : শিক্ষার্থীরা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করে।এদের চরাচলের একমাত্র বাহন নৌকা।বছরের ১২ মাসই স্কুলে আসা-যাওয়া করে পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার ১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সামান্য ঢেউয়ে নৌকা উল্টে যাওয়ারও শঙ্কা আছে। তবুও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আবার খোলা নৌকায় তীব্র রোদের তাপও সহ্য করতে হয় তাদের।এভাবেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলে তাদের আসা-যাওয়া।উপজেলার দেউলবাড়ী দোবড়া ইউনিয়নে ১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের জন্য নেই কোন সড়ক যোগাযোগ ব্যাবস্থা।এর মধ্যে ১১নং উত্তর গাওখালী আমভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,২১নং মনোহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,৩২নং মনোহরপুর সরকার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,২নং সোনাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,৩নং বিলডুমরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,৫৭নং পদ্মডুবি শিশু শিক্ষা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,৬৫নং বিলডুমরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৩৬নং পদ্মডুবি সরকারী প্রাথমিক এ ৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এ ছাড়া আমভিটা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়,ত্রি-গ্রাম সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়,মনোহরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়,সোনাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বিলডুমরিয়া-পদ্মডুবি মাধ্যমিক এ ৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ালয়।আর ডুমরিয়া-নেছারিয়া আলীম মাদ্রাসা,ডুমরিয়া-নেছারিয়া বালিকা সিনিয়র মাদ্রাসা ও মনোহরপুর মোহাম্মদীয়া দাখিল এ ৩টি আলীয়া মাদরাসা।এ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বছরের ১২ মাসই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় করে প্রতিষ্ঠানে আসতে হয়।স্থানীয় বাসিন্দা ইব্রাহিম গাজী বলেন, ‘এখানকার শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়েই নৌকায় করে ১২ মাস স্কুলে যায়।অনেক সময় নৌকা ডুবে যায়।তবে বিলাঞ্চলের প্রায় সকল শিশুরাই সাঁতার জানায় তেমন কেউ এতে মারা যায় না।’সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, শীতকালের আবার একটু ভিন্ন চিত্র।যখন খালে পানি থাকে না।খাল শুকিয়ে গেলে নৌকা চলাচলের সমস্যা হয়।তখন জোয়ার-ভাটার উপর নির্ণয় করে দেয়া হয় স্কুলের সময়সূচী।এ ব্যাপারে স্থানীয় শিক্ষার্থী অভিভাবকরা জানান, খালে জোয়ার এলে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যায় এবং জোয়ার শেষ হবার আগেই খালে পানি ভরা থাকতেই তাদের বাড়ি ফিরতে হয়।শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, অতি দারিদ্র্যপীড়িত এ এলাকায় অনেক শিক্ষার্থী না খেয়েই স্কুলে আসে। উপজেলার ১১নং উত্তর গাওখালী আমভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়,বিদ্যালয়ে ছুটির ঘন্টা বাজছে আর শিক্ষার্থীরা ছুটো-ছুটি করে বিদ্যালয়ের সামনের খালে রাখা ছোট-ছোট নৌকায় উঠছে।তাড়াহুড়ো করে নৌকায় ওঠার কারণ জানতে চাইলে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক গোকুল চন্দ্র বেপারী জানান,খালে ভাটা হয়েছে।পানি শুকিয়ে যাবে।তাই ১ ঘন্টা আগেই স্কুল ছুটি দেয়া হয়েছে।এ কারণে শিক্ষার্থীরা বাড়ি যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করে নৌকায় উঠছে।ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা জানায়, দ্রুত বাড়ি যেতে হবে।পানি শুকিয়ে গেলে নৌকা নিয়ে বাড়ি যাওয়া যাবে না অনেক রাত হবে।পাশেই ত্রিগ্রাম সম্মেলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়।কথা হয় ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের সাথে।তিনি বলেন,‘যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি কম।’তিনি আরো বলেন,‘আমিও অনেক কষ্ট করে স্কুলে আসি, যা না দেখলে বোঝানো যাবে না।’স্থানীয় বাসিন্দা শাহাবুদ্দিন বাহাদুর জানান,বিলাঞ্চলের রাস্তাঘাট নেই বললেই চলে।অধিকাংশ স্থান বর্ষা মৌসুমে ডুবে থাকে, নৌকা ছাড়া যাতায়াতের উপায় থাকে না।শীত মৌসুমে খালে পানি থাকে না।তখন অবস্থা আরো খারাপ হয়।শিক্ষার্থীদের জোয়ার-ভাটা দেখে স্কুলে যেতে-আসতে হয়।আবার নৌকা কিনে স্কুলে যাওয়ার মতো আর্থিক সামর্থও নেই অনেকেরই।এ কারনে অনেক শিশুরা বর্ষায় স্কুলে যেতে চায় না বা তাদের অভিভাবকরাও পাঠাতে চান না বলেও জানা গেছে।স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাষ্টার মো. ওয়ালী উল্লাহ জানান,তার ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা বিলাঞ্চল হওয়ায় সড়ক যোগাযোগও কম থাকায় অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নৌকায় করে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে হয়।উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান,‘সড়ক যোগাযোগ না থাকায় ওই এলাকার শিক্ষার্থীরা কষ্ট করেই স্কুলে আসা-যাওয়া করে।এ কারণে স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কম’।
Post Views:
৪১৪
|
|