তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন, ঘটনার পর থেকেই গাঁ ঢাকা দিয়েছে ঐ শিক্ষক
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় শিক্ষকের সাথে ছাত্রীর আপত্তিকর ভিডিও ফাঁস
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার তাফালবাড়িয়া হাচানিয়া আলিম মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক (কৃষি) মোঃ হাফিজুর রহমানের নৈতিক স্খলনজনিত একটি ভিডিও ফাঁস হয়েছে। এ ঘটনায় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন অভিভাবক সদস্য মোঃ রুস্তম আলী হাওলাদার, অভিভাবক সদস্য মোঃ আমিনুল হক এবং শিক্ষক প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম। এছাড়াও এ ঘটনায় আগামী ৯ ডিসেম্বর (শনিবার) মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এক জরুরী সভা ডেকেছে বলে নিশ্চিত করেছেন মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ মহিবুল্লাহ। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মহিবুল্লাহ জানান, হাফিজুর রহমান গত ১৯ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) ৩ দিনের ছুটির একটি আবেদন করে অদ্যবধি পর্যন্ত কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছে। যদিও তার ওই ছুটি অনুমোদন করা হয়নি। ১৯ নভেম্বরের পর থেকেই হাজিরা খাতায় তাকে অনুপস্থিত দেখানো হয়েছে। মূলত ঘটনার পর থেকেই সে গাঁ ঢাকা দিয়েছে। তার বাড়ি পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলার দশমিনা গ্রামে। ২০১৬ সালে এনটিআরসি’র সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষক হিসেবে এখানে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই তার আচার আচরণে কিছুটা অসংলগ্নতা প্রকাশ পায়। ইতোপূর্বে মাদ্রাসার তৎকালীন কর্মরত অধ্যক্ষ মাওলানা খলিলুর রহমানকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে সে। ওই সময় ম্যানেজিং কমিটি না থাকায় তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তিনি আরও জানান, হাফিজুর রহমান মাদ্রার ৩য় তলায় কয়েকজন ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়াতো। প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি ছাড়াই মাদ্রাসা চলাকালীন সময়ের আগে ও পরে এ প্রাইভেট পড়ানোর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা তৈরি হয়। তাকে প্রাইভেট পড়াতে নিষেধ করার পূর্বেই এক ছাত্রীর সাথে তার আপত্তিকর ভিডিও ফাঁস হয়। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের রোষানলে পড়ার আগেই লাপাত্তা হয় সে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত শিক্ষক হাফিজুর রহমান তাফালবাড়িয়া এলাকার মৃত নূর হোসেন মাষ্টারের ছেলে নাজমুল নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে জায়গির থাকতো। ৭ বছর ধরে এই বাড়িতে থেকেই মাদ্রাসায় ক্লাস করাতো সে। ভিডিওটি ফাঁস হওয়ার পর নাজমুল হাওলাদার ওই ছাত্রীর বাবাকে নিয়ে ঘটনা ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ভিডিওটি ধারণকারীকে ডিজিটাল আইনে ফাঁসানোর হুমকি দিচ্ছে। এএসআই মিথুন মন্ডল নামে এক পুলিশ কর্মকর্তার কথা বলে বিষয়টি নিয়ে আর বাড়াবাড়ি না করারও হুমকি দিচ্ছেন ওই শিক্ষকের জায়গিরদারী নাজমুল। তার বক্তব্য শিক্ষককে হয়রানি করার জন্যই এই ভিডিও বানানো হয়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, মাদ্রাসার ৩য় তলায় এক ছাত্রী ওই শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়ার জন্য অপেক্ষা করছে। কিছু সময় পরেই শিক্ষক এসে ছাত্রীকে জড়িয়ে ধরে। ছাত্রীর স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়। একপর্যায়ে টেবিলের ওপর ওই ছাত্রীকে শোয়ানো হয় এবং তার বুকের ওপর উঠে আপত্তিকর ও স্খলনজনিত আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটায় হাফিজুর রহমান নামে ওই শিক্ষক। ১৬ মিনিটের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, লম্পট ওই শিক্ষক কিছু সময় ওই ছাত্রীর সাথে আপত্তিকর আচরণ করে আবার কিছু সময় বাহিরে গিয়ে দেখে কেউ আসে কিনা। স্থানীয়রা জানান, ওই শিক্ষককে বহিষ্কার করা না হলে মানববন্ধন সহ বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হবে। এমনকি মাদ্রাসা তালা মেরে বন্ধ করে দেওয়ারও হুমকি দেয় তারা। মাদ্রাসার সভাপতি মঞ্জিরুল আলম জানান, শিক্ষক হাফিজুর রহমানের সাথে এক ছাত্রীর আপত্তিকর ভিডিও’র বিষয়টি অবগত হয়েছি। ইতোমধ্যে যথাযথ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুল কাইয়ূম জানান, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।