Current Bangladesh Time
বৃহস্পতিবার জুলাই ৩, ২০২৫ ৮:৫১ পূর্বাহ্ণ
Latest News
প্রচ্ছদ  » স্লাইডার নিউজ » নামের মিলে কারাগারে নিরপরাধ ভোলার শাজাহান 
Saturday October 23, 2021 , 10:47 pm
Print this E-mail this

নিরপরাধ ছেলের দ্রুত মুক্তির আশায় দিন গুনছেন শাজাহানের মা

নামের মিলে কারাগারে নিরপরাধ ভোলার শাজাহান


মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : ভোলায় গ্রাম, বাবা ও নিজের নামের সঙ্গে হত্যা মামলার আসামির পরিচয়ের মিল থাকায় এক মাস ধরে কারাভোগ করছেন মো: শাজাহান (৪৬) নামের নিরপরাধ এক ব্যক্তি। আর একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটি কারাবন্দি থাকায় মানবেতর জীবন কাটছে তার পরিবারের। নিরপরাধ ছেলের দ্রুত মুক্তির আশায় দিন গুনছেন শাজাহানের মা। মামলা সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে ভোলা সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়ন বাঘার হাওলা গ্রাম ২নং ওয়ার্ড চৌকিদার বাড়ির স্থায়ী বাসিন্দা আবদুল আজিজের ছেলে মো: হানিফ ওরফে শাহাজাহান ঢাকার সবুজবাগ এলাকায় আপন বড় ভাই রফিকুল ইসলামের স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্কে জড়ান। এর জের ধরে ওই বছরের ২০ মার্চ বড় ভাইকে হত্যা করেন শাহাজাহান। এ ঘটনায় রফিকুলের স্ত্রী জোসনা ওরফে মানছুরা বাদী হয়ে সবুজবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ তখন মামলার প্রধান আসামি মো: হানিফ ওরফে শাহাজাহানকে গ্রেফতার করে। আদালতের মাধ্যমে দীর্ঘ চার বছর কারাভোগ করেন তিনি। এরপর জামিন নিয়ে দুবার কোর্টে হাজির হন, তারপর থেকে পলাতক আছেন তিনি। আসামি ভোলা জেলার বাসিন্দা হওয়ায় মামলাটি ভোলা সদর মডেল থানায় আসে। সেটির তদন্তের ভার পড়ে ভোলা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কবির হোসেন উকিলের কাঁধে। এর মধ্যে গত ২৩ সেপ্টেম্বর মো: শাজাহান ওরফে শাজাহান মুন্সীকে তার কর্মস্থল পূর্ব ইলিশা নেছারিয়া মাদরাসা থেকে সাদা পোশাকের একটি দল তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করে পরিবার। জানা যায়, মো: শাজাহান তার গ্রামের ইলিশা বাঘার হাওলা নেছারিয়া দাখিল মাদরাসার চতুর্থ শ্রেণির দপ্তরি পদে কর্মরত। তার সংসারে ৮০ বছরের অসুস্থ মা, স্ত্রী, চার মেয়ে ও এক ছেলে। অনেক কষ্ট করে মেয়েদের বিয়ে দেন তিনি। তার একমাত্র ছেলে মো: নকিব পরানগঞ্জ বাজার এলাকার নাজিউর রহমান কলেজে এইচএসসির শিক্ষার্থী। কিন্তু গত এক মাস ধরে তিনি জেলে থাকায় আয় নেই পরিবারের। বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে ধার-দেনা করে আদালতে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও তার মুক্তি না হওয়ায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে তার পরিবার।

কারাভোগ করতে থাকা শাজাহান ও পলাতক মো: হানিফ ওরফে শাহাজাহানের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পলাতক শাহাজাহান ভোলা সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড বাঘার হাওলা গ্রামের চৌকিদার বাড়ির আবদুল আজিজের ছেলে। তার মায়ের নাম বিবি জলেখা। অপরদিকে যে শাজাহান গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন তিনিও পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড বাঘার হাওলা গ্রামের বাসিন্দা। তবে তিনি মুন্সী বাড়ির আজিজুল হকের ছেলে। তার মায়ের নাম কদ বানু বেগম। শাজাহানের স্ত্রী ইয়ানুর বেগম বলেন, প্রতিদিনের মতো ২৩ সেপ্টেম্বর আমার স্বামী শাজাহান সকালে খাবার খেয়ে মাদরাসার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন। দুপুর সাড়ে ১২টার পরে আমাক ফোনে জানানো হয়, স্বামীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব ও পুলিশ। থানা ও আদালতে বিভিন্ন জনের কাছে গিয়ে জানতে পারি তাকে হত্যা মামলার আসামি হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে ঢাকার আদালত থেকে মামলার পূর্ণ কাগজ ওঠানোর পর দেখা যায় স্বামীর নাম, শ্বশুরের নাম ও গ্রামের নামের সঙ্গে ওই মামলার আসামির পরিচয়ের মিল থাকায় তাকে ভুলে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইয়ানুর বেগম আরও বলেন, আমার স্বামী একজন ভালো মানুষ। তার আয়ের ওপর আমার বৃদ্ধ শাশুড়ির চিকিৎসা, ওষুধ, ছেলের পড়াশোনা ও সংসার পরিচালনা হয়। এক মাস জেলে থাকায় সংসারের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকা ও ভোলা যাতায়াত এবং আইনজীবীর ফি দিতে গিয়ে অনেক ঋণ করেছি। বর্তমানে টাকার অভাবে মানবেতর জীবন কাটছে আমাদের। এ অবস্থায় আমার স্বামীর দ্রুত মুক্তির দাবি জানাই। শাজাহানের বৃদ্ধ মা কদ বানু বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলে কোনো অপরাধ না করেও কেন এতদিন জেলে আছে। আমি ছেলের শোকে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছি। যে কোনো সময় হয়তো আমি পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবো। কিন্তু মৃত্যুর আগে আমার ছেলেকে মুক্ত দেখতে চাই। আমার ছেলের দ্রুত মুক্তি চাই। শাজাহানের ছেলে মো: নকিব বলেন, ঢাকায় গিয়ে বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে ঘুরে বাবাকে গ্রেফতারের আটদিন পর মামলার মূল নথি ওঠাতে পেরেছি। নথি উঠিয়ে আমরা নিশ্চিত হই ঢাকার সবুজবাগ থানার একটি হত্যা মামলায় ভুল করে আমার বাবাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অথচ ওই মামলার মূল আসামি শাজাহান গ্রেফতার হয়ে জেলও খাটছেন। তিনি আরও বলেন, আমরা আদালতে বাবাকে নির্দোষ প্রমাণে তথ্য পেশ করলে আদালত সবুজবাগ থানাকে ১৪ দিনের মধ্যে বিষয়টি তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে ওই থানা আবার ভোলা থানাকে তদন্তের জন্য রিপোর্ট পাঠায়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত আমার বাবার মুক্তি হয়নি। আমরা বিভিন্ন মহলের দ্বারে দ্বারে ঘুরে এখন ক্লান্ত হয়ে গেছি। কবে বাবা মুক্ত হবেন তাও জানি না। এ বিষয়ে ভোলা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: এনায়েত হোসেন  বলেন, ২৩ সেপ্টেম্বর শাজাহানকে র‌্যাব গ্রেফতার করে। তখন দায়িত্বে আমাদের এসআই কবির হোসেন ছিলেন। কয়েকদিন আগে সবুজবাগ থানা থেকে আসামি সঠিক কি না তদন্তের জন্য একটি রিপোর্ট চাওয়া হয়। পরে ইলিশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই মো: ফরিদকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ইলিশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো: ফরিদ শেখ বলেন, আমি বিষয়টি তদন্ত করে দেখেছি ২৩ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হওয়া শাজাহান ঢাকায় রফিকুল ইসলাম হত্যা মামলার আসামি নন। মূল আসামি হানিফ ওরফে শাহাজাহান। তিনি বর্তমানে পলাতক আছেন। ফরিদ শেখ আরও বলেন, আমি তদন্ত শেষে ঢাকার সবুজবাগ থানায় সঠিক রিপোর্ট তিনদিন আগে পাঠিয়ে দিয়েছি। আশাকরি নির্দোষ ব্যক্তি শাজাহান দ্রুত মুক্তি পাবেন।




Archives
Image
বরিশালে পুলিশের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শনে আইজিপি
Image
সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারানো সাগরের পাশে বরিশাল জেলা প্রশাসক
Image
মূলধারার গণমাধ্যমও ভুয়া তথ্যের ‍উৎস : প্রধান উপদেষ্টা
Image
বরিশাল আবাসিক হোটেল স্বাগতমে অভিযান, ৬০ পিস ইয়াবাসহ আটক ১
Image
গুমের শিকার বাবার সন্তানের কান্নায় কাঁদলেন তারেক রহমান