|
৩০ বছরেও চালু হয়নি দুইটি অপারেশন থিয়েটার, দালালের হাতে জিম্মি সাধারণ রোগী
নানা সমস্যায় জর্জরিত গৌরনদী উপজেলা হাসপাতাল
শামীম আহমেদ, অতিথি প্রতিবেদক : চিকিৎসক সংকট,কর্মচারী স্বল্পতা,ওষুধপত্রের অপ্রতুলতা,এক্স-রে মেশিন বিকল ও দুটি অপারেশন থিয়েটার দীর্ঘ ৩০ বছর যাবত বন্ধ থাকার কারণে বরিশালের গৌরনদী উপজেলা হাসপাতালে এসে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না এলাকাবাসী।শুধুমাত্র একজন সার্জন ও একজন এ্যানেসথেসিষ্টের অভাবে দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ রয়েছে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালের দুইটি অপারেশন থিয়েটার।গত ৬ মাস আগে এখানে একজন সার্জন ও একজন এ্যানেসথেসিষ্ট নিয়োগ দেয়া হলেও অজ্ঞাত কারণে অপারেশন থিয়েটার দুটি এখনও চালু হয়নি।সূত্রমতে,এখানে কর্মরত দুইজন চিকিৎসক সরকারী হাসপাতালে আসা রোগীদের অপারেশন না করলেও বাহিরের ক্লিনিকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সিজারিয়ান অপারেশনসহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রপাচার করছেন।এছাড়া পুরো হাসপাতালটি দালালদের কাছে জিম্মি হয়ে পরেছে।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,গৌরনদী উপজেলা হাসপাতালের চিকিৎসকের মোট ২১ টি পদ থাকলেও চিকিৎসক আছেন মাত্র নয়জন।শূণ্য রয়েছে ১২ জন চিকিৎসকের পদ।এ চিকিৎস্যা কেন্দ্রে গাইনী,সার্জারী,মেডিসিন,চক্ষু,নাক-কান-গলা (ইএনটি),কার্ডিওলজি,অর্থ সার্জারী,চর্ম ও যৌন, শিশু বিভাগসহ নয়টি বিশেষজ্ঞ পদ থাকলেও শুধুমাত্র গাইনী ও অর্থ সার্জারী বিভাগ ব্যতিত বাকী সাতজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ দীর্ঘদিন থেকে শুন্য রয়েছে। সূত্রে আরও জানা গেছে, এখানে ২৬ নার্সের পদ থাকলেও আছে ২২ জন,তৃতীয় শ্রেনীর ১০৭ টি পদের মধ্যে আছে ৮৬ জন।চতুর্থ শ্রেনীর ২৬টি পদের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ১৬ জন।ছয়জন সুইপারের মধ্যে আছে মাত্র দুইজন।বর্তমানে গৌরনদী হাসপাতালে চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পদে সবমিলে ৫৭টি পদ শুন্য রয়েছে।এছাড়া হাসপাতালের এক্স-রে মেশিনটি বিকল অবস্থায় পরে রয়েছে গত দুই বছর যাবৎ।এসব সমস্যার কারণে এখানে রোগীরা চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না।তারা নানাভাবে হয়রানীর শিকার হচ্ছেন।এ সমস্যা দীর্ঘদিনের হলেও সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।এছাড়া পুরো হাসপাতালটি বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধি এবং স্থানীয় প্যাথলজির দালালদের দখলে থাকায় কর্মরত চিকিৎসকরা কমিশন বাণিজ্যে মেতে ওঠায় প্রতিনিয়ত হাসপাতালে আসা রোগীরা সু-চিকিৎসা না পেয়ে প্রতারিত হচ্ছেন।তাই জনমনে তীব্রক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা গেছে,১৯৮৭ সালে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশ্ববর্তী গৌরনদীর আশোকাঠি নামকস্থানে এ হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।ওই সময় ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কেন্দ্র হিসেবে এটি চালু করা হয় এবং তখন এখানে একটি অপারেশন থিয়েটার খোলা হয়। পরবর্তীতে কয়েক বছর আগে ভবনটি সম্প্রসারন করে দ্বিতল করা হয় এবং একইসাথে এটি উন্নীত করা হয় ৫০ শয্যায়।ওই সময় দোতালার একটি রুমকে অপারেশন থিয়েটার হিসেবে ব্যবহারের জন্য সুসজ্জিত করা হয় আধুনিক যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদি দিয়ে।বর্তমানে এ হাসপাতালের ওপর তলায় একটি ও নিচের তলায় একটি অপারেশন থিয়েটায় রয়েছে।কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার,শুধুমাত্র একজন সার্জন ও একজন এ্যানেসথেসিষ্টের অভাবে দীর্ঘ ৩০ বছর যাবৎ বন্ধ রয়েছে এ হাসপাতালের দুটি অপারেশন থিয়েটার।বর্তমানে একজন সার্জন ও একজন এ্যানেসথেসিষ্ট থাকা সত্বেও অপারেশন থিয়েটার দুটি চালু হচ্ছে না।কবে নাগাদ অপারেশন থিয়েটার দুটি চালু করা সম্ভব হবে,তারও নিশ্চয়তা দিতে পারছে না কেউ।এদিকে দীর্ঘদিন যাবত অপারেশন থিয়েটার দুটি চালু না হওয়ায় লাখ লাখ টাকা মূল্যের বিভিন্ন মেশিনপত্র ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদি নষ্ট হয়ে গেছে।সরকারী হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার বন্ধ থাকার কারণে সামান্য অপারেশনের জন্যও এলাকার লোকজন নিরুপায় হয়ে স্থানীয় ক্লিনিকে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।এজন্য তাদের বিপুল অর্থ ব্যয় হচ্ছে।তাই গৌরনদী হাসপাতালের বন্ধ অপারেশন থিয়েটার দুটি দ্রুত চালুর ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভুগি এলাকাবাসী। গৌরনদী উপজেলা হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার দুটি চালুর ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ এসএম কবির হাসান কলেন, অপারেশন থিয়েটার দুটির একটিতেও ডায়াথামী মেশিন নেই,দোতালার থিয়েটারে লাইট নেই।এছাড়া দুটি অপারেশন থিয়েটারের দরজা জানালাই ভাঙ্গা।তবে অন্তত একটি ডায়াথামী মেশিন ক্রয়সহ অন্যান্য সমস্যা সমাধান করা হলে অতি দ্রুত গৌরনদী উপজেলা হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার চালু করা সম্ভব হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
Post Views:
২০২
|
|