প্রচ্ছদ » স্লাইডার নিউজ » নাজিরপুরের ৩ মেধাবী শিক্ষার্থীর জিপিএ-৫ পেয়েও উচ্চ শিক্ষা অনিশ্চিত
Friday July 28, 2017 , 7:14 pm
নাজিরপুরের ৩ মেধাবী শিক্ষার্থীর জিপিএ-৫ পেয়েও উচ্চ শিক্ষা অনিশ্চিত
দেলোয়ার হোসেন : পিরোজপুর জেলার নাজিরপুরে চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েও দারিদ্রতার কারনে ৩ মেধাবী শিক্ষার্থীর উচ্চ শিক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
লাকী আক্তার: উপজেলার গাওখালী স্কুল এন্ড কলেজ থেকে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন লাকী আক্তার।বাড়ি উপজেলার দেউলবাড়ি ইউনিয়নের গাওখালীতে।৩ বোন ও ১ ভাইয়ের মধ্যে মেধাবী লাকি আক্তার তৃতীয়।তিনি জানান, পিতা আ. লতিফ শেখ একটি বেসরকারী কোম্পানীর সামান্য বেতনের কর্মচারী।তা দিয়ে ছোট ভাইয়ের লেখা পড়ার খরচসহ এত বড় একটি পরিবার চালাতে হয়।তাই তাকে স্থানীয় কিছু শিশুদের প্রাইভেট পড়িয়ে লেখা-পড়ার খরচ চালাতে হয়েছে।গত ২০১৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ গোল্ডেন পেয়েছে।সে জানায়,ভবিষ্যতে একজন ডাক্তার হওয়ার আশা থাকলেও আর্থিক অনটনের কারনে সে স্বপ্ন পূরণে এখন বড় বাঁধা হয়েছে।
প্রলয় মালাকার: উপজেলার মাটিভাঙ্গা ডিগ্রী কলেজ থেকে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।বাড়ি উপজেলার মালিখালী ইউনিয়নের লড়া গ্রামে। পিতা কালিপদ মালাকার একজন ভুমিহীন অসহায় রুগ্ন কৃষক। তিনি জানান, অন্যের জমি চাষ করে তাতে যে ফসল হয় তা দিয়ে কোন মতে নিজেদের খোরাক (খাবার) হয়।আর লেখাপড়া খরচ জোগাতে মায়ের উপর নির্ভর হতে হয়।সে জানায় তার কলেজের অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম তাকে লেখা-পড়ার ব্যাপারে খোঁজ-খরব নেয়াসহ উতসাহ যোগাতেন। তবে কলেজের রসায়ন শিক্ষক মৃদুল রায় তাকে প্রায়ই আর্থিক সহযোগীতাসহ বিনা টাকায় প্রাইভেট পড়াতেন। প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তিসহ এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া এই অসহায় প্রলয় মারাকার জানান, ভবিষ্যতে একজন ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও পারিবারিক অর্থিক অনটন তার সে স্বপ্ন পূরণে এখন বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইসরাত জাহান: উপজেলার সদরে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজ থেকে চলতি বছরে এইচএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ইসরাত জাহান।তার বাড়ি জেলার সদর উপজেলার কলাখালী গ্রামে।ইসরাত জানান, পিতা জামিল হোসেন ঢাকায় একটি দোকানে সামান্য বেতনের কর্মচারী।তা দিয়ে পিতাকেই চলতে হয়।২ ভাই-বোনের মধ্যে ইসরাত প্রথম সন্তান।তিনি জানান, সকালে ঘুম থেকে উঠে কয়েকজন শিশুকে প্রাইভেট পড়ান।বাড়ি থেকে কলেজ অনেক দুর হলেও আর্থিক অসচ্ছলতার কারনে নিয়মিত প্রায় ১৫/১৬ কি.মি. পথ হেঁটে কলেজে যাতায়াত করতে হয়েছে।কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক মো. মনিরুজ্জামান স্যার তাকে নিয়মিত খোঁজ-খবর নেয়াসহ লেখা-পড়ায় উতসাহ যোগাতেন।ভবিষ্যতে সরকারী কলেজের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে দরিদ্রতার সাথে সংগ্রাম করে জিপিএ-৫ পাওয়া ইসরাত জানান, পারিবারিক আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারনে এখন তার উচ্চ শিক্ষা পুরোটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।গ্রামের মাতব্বর, চেয়ারম্যানসহ বিত্তবানদের আর্থিক সহযোগিতা এই তিন মেধাবী শিক্ষার্থীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব বলে গ্রামের সুশীল সমাজ মনে করেন।