|
‘থিয়েটার দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রের পরিচয় বহন করে, অসাম্প্রদায়িক দেশ গঠনে নাটক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে’- সৈয়দ দুলাল
দেশের একমাত্র স্টুডিও থিয়েটার, বরিশালের ‘শব্দাবলী’
নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের একমাত্র স্টুডিও থিয়েটার বরিশালের ‘শব্দাবলী’।যা প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিয়মিত নতুন নতুন নাটক নির্মাণ ও মঞ্চায়নের মাধ্যমে দেশের নাট্যচর্চার ইতিহাসে বিশেষ একটি স্থান দখল করে আছে।দীর্ঘ ২৫ বছর বরিশালের আলো, মাটি ও বাতাস অবগাহন করে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যে কৃতিত্ব তারা দেখিয়েছে তা দেশের বাইরেও আজ সমাদৃত।বরিশাল শব্দাবলী স্টুডিও থিয়েটারের সভাপতি সৈয়দ দুলাল বলেন, ১৯৭৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠা হয় ‘শব্দাবলী’।এর পর ১৯৯১ সালের ৩১ ডিসেম্বর শাব্দাবলী প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশের প্রথম স্টুডিও থিয়েটার।শুরু থেকেই লক্ষ্য ছিলো নাটকে পেশাদারিত্ব আনা, বলেন সৈয়দ দুলাল।যার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত নাট্যকার নির্দেশক দ্বারা শব্দাবলী কর্মশালা ভিত্তিক প্রযোজনা করে আসছে।সেই সাথে স্টুডিও থিয়েটার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিজস্ব হলে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সপ্তাহে একদিন নাটক মঞ্চায়ন করে।ইতোমধ্যেই তারা ২৪টি নাটকের মধ্যে ৯৮৭টিরও বেশী নাট্য প্রদর্শনী করেছে তাদের নিজস্ব স্টুডিও থিয়েটারে।নাটকের দর্শক তৈরি, শিল্পমান বজায় রেখে সময়োপযোগী নিরীক্ষাধর্মী নাটক মঞ্চায়ন করা শব্দাবলীর স্বকীয়তার পরিচয়।বাংলাদেশের নাট্য ইতিহাসে পেশাদারি নাট্যচর্চায় ‘শব্দাবলী’ স্থান পাবে প্রথম সারিতে-এই দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।এই স্বপ্ন নিয়ে তাদের নিয়মিত চর্চা অব্যহত রয়েছে।নাটক চর্চা ও দেশের সংস্কৃতিকে বেগবান করতে শব্দাবলী অব্যাহতভাবে যে অবদান রেখে চলেছে তার স্বীকৃতি স্বরূপ প্রতিষ্ঠানটি অর্জন করেছে অনেক সম্মাননা।এরই মধ্যে ২০০৬ সালে সেরা নাট্য দল হিসাবে লাভ করে বাচসাস (বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি) পুরস্কার, ২০০৯ সালে সুবচন নাট্য সংসদ প্রবর্তিত আরজু স্মৃতি পদ লাভ করে ‘শব্দাবলী’।তাছাড়া শব্দাবলীর মঞ্চে কাজ করেছেন দেশের প্রখ্যাত এবং সনামধণ্য ব্যক্তিবর্গ।স্মৃতি রোমান্থন করতে গিয়ে বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব সৈয়দ দুলাল বলেন, মঞ্চে নাটক দেখতে আর কজনইবা আসবে।নয় দিনের উৎসব, প্রতিদিন হয়তো হাজার খানেক লোক হবে।সব মিলিয়ে ২০ বা ৩০ হাজার টাকা উঠবে।পরে অবশ্য হিসাব করে জানা গেল, ৭৩ হাজার টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে।হিসাব শুনে উৎসব আহ্বায়কের আনন্দ আর ধরে না।নাটক দেখতে এসে অনেকেই টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন।এই ব্যাপারটি নিয়ে সৈয়দ দুলাল’র ছিল কিছুটা কষ্ট।তবে সব মিলিয়ে আনন্দের কোনো কমতি ছিল না তার।শুধু বড়রাই নয়, শিশুরাও চেনেন সৈয়দ দুলালকে।ছোট-বড় সকলের কাছেই তিনি পরিচিত ‘দুলাল দা’ হিসেবে।টিভির শিশুতোষ অনুষ্ঠান সিসিমপুরের ‘গুণী ময়রা’ তিনি।বাংলাদেশের স্টুডিও থিয়েটারের প্রবর্তক ও বরিশালের শব্দাবলী স্টুডিও থিয়েটারের সভাপতি তিনি।সংগঠক হিসেবে খ্যাতি রয়েছে তার।বললেন, ‘ভালো সংগঠকের অন্যতম কাজ হচ্ছে আরও দু-চারজন সংগঠক গড়ে তোলা।সারা জীবন একাই হালটা ধরে বসে থাকলে সেটা হবে না।অন্যদের দিয়ে কাজ করিয়ে তাদের গড়ে নিতে হবে।’১৯৯১ সালের ৩১ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে শব্দাবলী স্টুডিও থিয়েটার।এরপর গত ২৫ বছরে কখনোই আর তালা দিতে হয়নি স্টুডিওতে।নিয়মিত সেখানে চলেছে নাটকের মহড়া আর প্রদর্শনী।এ পর্যন্ত ২৪টিরও বেশী স্টুডিও উপযোগী নাটক সেখানে দেখানো হয়েছে।ঈদ কিংবা বিজয়া দশমীর সময়েও এই স্টুডিও থিয়েটার ঘিরে থাকে ব্যস্ততা।সৈয়দ দুলাল বলেন,‘আমাদের দেশে নাটককে রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেয়নি সেভাবে, অথচ নাটককে বলা হয় সমাজ বদলের হাতিয়ার।ভারত সরকার নাট্যকর্মীদের সহায়তা দেয়, বড় বড় প্রতিষ্ঠান পৃষ্ঠপোষকতা দেয়।ফলে তারা শুধু নাটক আর নাটকের দলটাই চালায় মনোযোগ দিয়ে।বাংলাদেশেও সেই চেষ্টা চলছে।’এ ক্ষেত্রে সৈয়দ দুলালের পরামর্শ হলো, অন্তত: প্রতি জেলা শহরের একটি নাটকের দলকে অর্থ-সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে কাজটা শুরু হতে পারে।এ ছাড়া বড় বড় ইভেন্ট ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানগুলো যদি তাদের কাজের জন্য নাট্যদল থেকে কর্মী নেয়, তাহলে সারা বছর তাদের কাজের একটা জায়গা হয়ে যায়।তিনি আরোও বলেন, ‘আমাদের শৈশবে কত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো, সেসবে পুরস্কারও পেতাম।এখন আর ওসব নেই।আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাও অনেক ভুলে ভরা।শিক্ষা গ্রহণে শিশুদের কোনো আনন্দ নাই, অবকাশ নাই।ছুটির দিনেও কোচিংয়ে যেতে হয় তাদের।চারু ও কারুকলার পাশাপাশি সংগীত ও নাটককে পাঠ্যে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।থিয়েটার দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রের পরিচয় বহন করে।অসাম্প্রদায়িক দেশ গঠনে নাটক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’
বরিশাল মুক্তখবর পরিবারের পক্ষ থেকে এই গুণী শিল্পীকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা আর অভিনন্দন।
Post Views:
১,৬২৮
|
|