|
যাদের নৌকায়ই জন্ম, বিয়ে ও মৃত্যু !
দক্ষিণাঞ্চলের জলে ভাসা জীবন ওদের
রাহাদ সুমন, অতিথি প্রতিবেদক : আধুনিক সভ্যতায় মানুষ যেখানে উন্নত জীবন-যাপন করছে পাশাপাশি নৌকায় সেই মানুষেরই জন্ম,বিয়ে,সংসার ও মৃত্যুর ব্যাতিক্রম চিত্রও রয়েছে।নদী কিংবা সাগরে নৌকায় ভেসে ভেসে মাছ শিকার করে চলে তাদের সংগ্রামী জীবন-সংসার।যে নদীর পানিতে জীবন সেখানেই আবার মরন নিয়তি।নিজস্ব কোন ভূমি না থাকায় মৃত্যুর পর আবার এই মানুষেরই দেহ পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।ব্যাতিক্রম জীবন-যাপানে অভ্যস্ত এ মানুষগুলো মুসলমান হলেও মানতা সম্প্রদায় নামে পারিচিত।মাছ শিকার করে মানুষের আমিষের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ক্ষুদ্র হলেও দেশের অর্থনীতিতে এদের ভূমিকা রয়েছে।স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনার রক্তক্ষয়ী সংগ্রামেও এদের কারও কারও ভূমিকা আছে।কিন্তু সেই স্বাধীন দেশে স্বাধীনতার স্বাদ কতটুকুই বা ভোগ করছে এরা।শিক্ষা,চিকিৎসা ও বাসস্থান সহ কোন মৌলিক চাহিদাই জুটছে না এদের ভাগ্যে।নেই স্যানিটেশন ব্যবস্থা,পুষ্টিকর খাদ্যের যোগান কিংবা বিশুদ্ধ পানির সুবিধা।স্বাধীনতার প্রায় ৩৭বছর পর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার পেলেও নাগরিক হিসেবে কতটুকুই বা সুবিধা ভোগ করতে পারে এরা ?এদের ভোটে যারা জনপ্রতিনিধি তারাই বা কতটুকু খোঁজ রাখে এদের।প্রাকৃতিক ঝড়-ঝঞ্জা উপেক্ষা করে জীবন বাজি রেখে রাত দিন একাকার করে মাছ ধরে কোন মতে জীবন চলে এদের।সচেতনা ও সুযোগের অভাবে এদের সন্তানগুলো শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত।সামান্য অক্ষরজ্ঞানও অর্জন করতে পারে না তারা।বড় হয়ে তাদের বেছে নিতে হয় মা- বাবার মাছ ধরার সেই পেশাকেই।শিক্ষার সুযোগ পেলে এদের মধ্যে থেকেও কেউ হয়ত বা আলোকিত মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারতেন।ভূমিকা রাখতে পারতেন দেশ ও জাতির উন্নয়নে।মানতা সম্প্রদায়ের বিয়ে ও তালাকের বিষয়ে রয়েছে চমকপ্রদ তথ্য।এক নৌকা থেকে অপর নৌকায় পছন্দের মেয়েটিকে তুলে নিলেই বিয়ে হয়ে যায়।আবার দাম্পত্য কলহের কারনে যদি ছাড়াছাড়ি হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তাহলে ওই বধূটি স্বামীর নৌকা থেকে লাফ দিয়ে বাবার নৌকায় গেলেই তালাক হয়ে যায়।এক নৌকা থেকে অপর নৌকায় যাওয়ার এ মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সে বধূ নয়ত তালাকপ্রাপ্তা।তবে সাম্প্রতিক সময়ে কারও কারও বিয়ে রেজিষ্ট্রীর মাধ্যমেও হচ্ছে।মানতা সম্প্রদায় জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি ব্যবহার না করায় দিন দিন এদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।মাছ শিকারের সময় নৌকায় শিশু সন্তানকে দড়ি দিয়ে বেধে রেখে পানিতে পড়ে যাওয়া হতে রক্ষা করা হলেও বিষয়টি অমানবিকও বটে।বাল্য বিবাহ ও বহু বিবাহ তাদের অন্যতম রীতি।বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীতে নৌকায় বসবাসকারী ৩০টি মানতা পরিবারের সরদার কাশেম জানান তিনি এ পর্যন্ত ৫টি বিয়ে করেছেন।একাধিক বিয়ে করলে লাভ হয় তাদের।কারন মাছ শিকারে পুরুষের চেয়ে মেয়েরা বেশি পটু। তার ৫স্ত্রী মাছ ধরে বিক্রিত টাকা সবই তুলে দেন তার হাতে।সে ৫ স্ত্রীকে নিয়ে বেশ সুখেই আছেন বলে জানিয়েছেন।বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ,বাবুগঞ্জ,মূলাদী, হিজলা, বানারীপাড়া,শরীয়তপুর,মাদারীপুরের কালকিনি,উপকুলীয় জেলা পটুয়াখালীর পানপট্টি,চরমনতাজ,গলাচিপা,কালাইয়া,বগা,পাটুয়া,বদনাতলী,উলানিয়াসহ দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্ন নদী ও মোহনা গুলোতে এ সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার লোক নৌকায় বসবাস করছে।অবহেলিত মানতা পরিবারগুলো সকল মৌলিক ও নাগরিক সুবিধা পাওয়ার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবী জানিয়েছেন।
সূত্র : বরিশাল ক্রাইম ওয়াচ
Post Views:
৭০
|
|