|
কখনও রাকিবের হাতে স্কুল বই আবার কখনও রিক্সার হ্যান্ডেল
তবুও থেমে নেই রাকিবের পড়াশুনা….
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : যে বয়সে স্কুলের ঐ সবুজ মাঠের দুরন্ত ফুটবল, দাড়িয়াবান্ধা, বা বাড়ির পাশের খোলা প্রান্তরে ছুটন্ত মার্বেল নিয়ে ছুটে চলা, কানামাছি ভোঁ ভোঁ, গোল্লাছুট, ইত্যাদি খেলা করা কথা সে বয়সে দারিদ্রতার কারনে হাতে নিতে হয়েছে রিকশার প্যাডেল। রিক্সার প্যাডেল ও থামিয়ে রাখতে পারেনি তিনি যাচ্ছেন নিয়মিত স্কুলে। এক বেলা স্কুল আর এক বেলা আমতলী পৌর শহরে রিক্সা চালিয়ে পড়াশুনার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন বরগুনার আমতলী উপজেলার সদর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের মো. রাকিব নামের এক এতিম শিশু। সে লোচা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেনীর ছাত্র সে। নিজের খাতা-কলম, বই-পুস্তক ও জামা-কাপড় অন্যান্য খরচ যোগান দিতে খন্ডকালীন রিক্সা চালিয়ে অর্থ উপাজন করছে এই ছাত্র। জানা যায়, বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের বুড়িরচর গ্রামের বাসিন্ধা মো. জাহাঙ্গির হোসেনের পুত্র সে। জন্মের সময় রাকিবের মা হেলেনা মারা যায়। জাহাঙ্গির ও অসহায় দরিদ্র হওয়ায় জাহাঙ্গিরের বোন আফরোজা এই অসহায় এতিম বাচ্চাটিকে লালন পালন করতে নিয়ে আসেন তার স্বামীর বাড়ী আমতলী উপজেলার সদর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের লোচা গ্রামে। আফরোজা জানান, জন্মের পরই ওর মা মারা যায়, তার পর আমি তাকে লালন পালন করে বড় করেছি এবং বাড়ীর পার্শ্ববর্তী লোচা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করি স্কুলে রাকীব ১ম থেকে ৫ম শ্রেনীতে প্রতি পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করায় রাকিবকে লোচা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে ভর্তি করে দিয়েছি ও এখন ৮ ম শ্রেনীতে পড়ছেন। রাকিবের পালক বাবা মো. ফোরকান খান বলেন, আমি গরীর মানুষ নুন আনতে পান্তা ফুরায় কোনো বেলা খেতে পারি কোনো বেলা খেতে পারি না। আমি রিক্সা চালিয়ে রাকিবের পড়ালেখা চালাই। আমি অসুস্থ হয়ে ঘরে পড়ে রইছি। এখন রাকিব স্কুল থেকে এসে বিকাল বেলা রিক্সা চালিয়ে নিজের পড়ালেখার খরচ যোগাড় করেন। সহায়-সম্বলহীন রাকিবের ফুপু পালক মা আফরোজা ও পালক বাবা ফোরকান খান আরো বলেন রিক্সা চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার ঠিক মতো চলে না। তার উপর আমার ছেলে রবিউল পালক পুত্র রাকিবের লেখাপড়া করানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে আমার পুত্র রবিউলের পড়ালেখা বন্ধ করে দিয়েছি। রাকিব নিজে রিকশা চালিয়ে পড়ালেখার খরচ যোগাড় করে পড়ছেন। রিক্সা চালানো অবস্থায় কথা হলে, মো. রাকিব (১৫) বলেন মাকে জন্মের পর দেখি নাই। ফুপু আমাকে বড় করেছে। আমার স্কুলে কাগজ পত্রে আমার পিতার নাম আমার পালক বাবা ফোরকান খান ও মাতা আফরোজা বেগম লেখাইছি। আমার পড়ালেখা করতে যতটুকু শ্রম দেয়ার তা দিয়ে যামু। এসব কথা যেন নির্বিঘ্নে ছলছল চোখে বলে মিষ্টি হাসি দিল মো.রাকিব (১৫)। রাকিব আরো বলে, লেখা-পড়া শিখে ভবিষ্যতে মানুষ হবো। এ স্বপ্ন নিয়েই রিক্সা চালিয়ে হলেও পড়ালেখা করে নিজের পালক বাবার ও মার সকল দু:খ দূর করবেন। সে আরও জানায়, প্রতিদিন ঠিক মতো রিক্সা চালাতে পারলে ২শ থেকে ৩ শ টাকা আয় হয়। সে টাকা দিয়ে স্কুলের খরচ বহন করে যা থাকে সে টাকা পালক বাবা মায়ের সংসারে দিয়ে দেন। এ ব্যাপারে লোচা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মো. মান্নান মাসুদ বলেন, রাকীর মেধাবী ছাত্র সে নিয়মিত স্কুলে আসে পড়ালেখায়ও ভাল। আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সরোয়ার হোসেন বলেন রাকিব রিক্সা চালিয়ে নিজে পড়া লেখার খরচের জন্য অর্থ উপার্জন করেন এতে আমি অভিভুত। তাকে সরকারী ভাবে সহযোগিতা করা হবে।
Post Views:
১,৭৭২
|
|