|
লঞ্চটির নিচতলায় সংযুক্ত করা হয়েছে করোনারী কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) ও দুই শয্যার হাসপাতাল সেবা
ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে যাত্রীসেবায় বিলাসবহুল কীর্তনখোলা-১০, উদ্বোধন ৭ মার্চ
ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের বিলাসবহুল নৌবহরে যাত্রীসেবায় যুক্ত হচ্ছে কীর্তনখোলা পরিবারের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত নতুন লঞ্চ এমভি কীর্তনখোলা-১০। ইতোমধ্যে এ লঞ্চটিকে সর্বাধুনিক, সর্বোবৃহত ও উচ্চ গতিসম্পন্ন হিসেবে দাবী করেছেন কর্তৃপক্ষ। লঞ্চের ডেকরেশন ও সাজসজ্জার কাজ শেষ করে পরীক্ষামুলক চালনাও সম্পন্ন করা হয়েছে। আগামী ৭ মার্চ যাত্রীসেবায় লঞ্চটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। সালমা শিপিং কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ৩১৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৫৯ ফুট প্রস্তর কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চটিতে রয়েছে ১০২টি সিঙ্গেল, ৭০টি ডাবল কেবিন। এছাড়া ছয়টি ফ্যামিলি কেবিনসহ ১৭টি ভিআইপি কেবিন। ভিআইপি কেবিনগুলোতে আলাদা বারান্দা, টয়লেট, ফার্নিচার ও শীতাতাপ নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিটি কেবিনেই আলাদা এলইডি টেলিভশন, বিলাসবহুল আসবাবপত্র রয়েছে। প্রথম শ্রেনীর যাত্রীদের কেবিনগুলোর সামনের প্রশস্থ ও সুবিশাল বারান্দা বা করিডোরকেও সাজানো হয়েছে বাহারি ধরণের নকশা এবং আলোকসজ্জার মাধ্যমে। পাশাপাশি গোটা লঞ্চেই নান্দনিক ডিজাইন ও ডেকরেশন করা হয়েছে। নিচ তলার সুবিশাল ডেকে যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত আলোকব্যবস্থার পাশাপাশি ৬০টি বৈদুত্যিক পাখা ও ডেকে এক সাথে ২৪৮ মোবাইল চার্জারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দ্বিতীয় তলার পেছনের দিকে রয়েছে ডেকের একটি অংশ। পুরো লঞ্চে যাত্রীদের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা। যাত্রী ছাড়াও দুই শতাধিক টন পন্য পরিবহনের সুবিধা বিশিষ্ট লঞ্চটিতে রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মসজিদ (৩০ জন ধারণ ক্ষমতা), ওয়াইফাই ব্যবস্থা, শিশুদের প্লে-গ্রাউন্ড, ফুড কোড এরিয়া, খাবার হোটেল, বিনোদন স্পেস, অত্যাধুনিক সাউন্ড সিস্টেম, ইন্টারকম যোগাযোগ ব্যবস্থা।
সূত্রে আরও জানা গেছে, লঞ্চটির নিচতলায় সংযুক্ত করা হয়েছে করোনারী কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) ও দুই শয্যার হাসপাতাল সেবা। পাশাপাশি লঞ্চের তৃতীয় তলায় সুবিশাল বারান্দা প্রশস্থ রাখা হয়েছে হাটার জন্য। যেখানে ডায়াবেটিস রোগীরা বিনা বাঁধায় হাটতে পারবেন। আধুনিক বিলাসবহুল লঞ্চগুলোর মতোই কয়েক স্তর বিশিষ্ট তলদেশ ছাড়াও ঝুঁকিমুক্ত চলাচলের জন্য লঞ্চটিতে জিপিআরএস সিস্টেম, রাডার, ইকোসাউন্ডার, ভিএইচএফ, ম্যানুয়াল ও ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক সুকান স্থাপন করা হয়েছে। লঞ্চের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনে ব্যবহার করবে ওয়াকিটকি। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে লঞ্চটি চলাচলরত নৌপথের এক বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে গভীরতা ছাড়াও আশপাশের নৌযানের অবস্থান চিহ্নিত করতে পারবে। তাছাড়া ঘণ কুয়াশার মধ্যেও নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে কীর্তনখোলা-১০। যাত্রীদের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তায় দৃশ্যমান ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা, আধুনিক অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত লাইফ বয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। ইস্পাতের তৈরি নতুন পাত আমদানি করে নির্মিত লঞ্চটিতে জাপানের তৈরি তিন হাজার ২০০ অর্শ্ব শক্তি সম্পন্ন দুইটি মুল ইঞ্জিনের পাশাপাশি সার্বক্ষনিক বিদ্যুত সেবার জন্য দুটি জেনারেটর ও একটি স্ট্যান্ডবাই জেনারেটরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। লঞ্চের ব্যবস্থাপক বেল্লাল হোসেন বলেন, সর্বোচ্চ যাত্রীধারন ক্ষমতা সম্পন্ন নৌযানটি গত শুক্রবার কীর্তনখোলা নদীতে পরীক্ষামুলক ভাবে চলাচল করেছে। ত্রুটি ছাড়াই লঞ্চটি ছুটে চলেছে সাড়ে ১১ নটিক্যাল মাইল গতিবেগে। যা বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে চলাচলকারী অন্যান্য লঞ্চের তুলনায় অনেক বেশি। আর রাতের বেলা লঞ্চের আলোকসজ্জাতো চোখ ধাদিয়ে দিয়েছে সকলের।
সালমা শিপিং কর্পোরেশনের সত্তাধিকারী মঞ্জুরুল আহসান ফেরদৌস জানান, সালমা শিপিং কর্পোরেশনের তৃতীয় এবং সর্বাধুনিক লঞ্চটি দক্ষ মাষ্টার ও ইঞ্জিন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন শ্রেণির শতাধিক ক্রু-নিয়ে ঢাকা-বরিশাল রুটে যাত্রীসেবায় নামানো হচ্ছে। তিনি বলেন, কীর্তনখোলা-১০ দেশের সকল যাত্রীবাহী লঞ্চের থেকে সর্বাধিক সেবা দিতে সক্ষম হবে। যাত্রীদের নিরাপত্তার সবদিক মাথায় রেখে লঞ্চটি নির্মান করা হয়েছে। যেখানে প্রথমবারের মতো কোন লঞ্চে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ব্যয়বহুল ব্রোঞ্জের সুসজ্জিত পাঁচটি দরজা লাগানো হয়েছে। যে দরজা আলাউদ্দিন দরজা নামে পরিচিত। উচ্চ সিকিউরিটি ব্যবস্থাসম্পন্ন এরকম আরও একটি দরজা লঞ্চটিতে বসানোর প্রস্তুতি চলছে।
শামীম আহমেদ, অতিথি প্রতিবেদক
Post Views:
২৯৭
|
|