|
বখাটেদের আড্ডা এবং অহরহ চলছে মাদক সরবরাহ!
ক্রমশ: জৌলুস হারাচ্ছে বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যান
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : ইতিহাস আর ঐতিহ্য মিশে আছে বরিশাল নগরীর বর্তমান বঙ্গবন্ধু উদ্যান ও সাবেক বেলস্ পার্ককে ঘিরে। এই উদ্যানটি যেমন ব্রিটিশ উদ্যোগের স্মারক। তেমনি এর সঙ্গে মিশে আছে আমাদের জাতীয় জীবনের নানা ঘটনা প্রবাহের ধারাবাহিক অনুষঙ্গ। সূত্রমতে, ১৮৯৬ সালে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এনডি বিটসেন বেল বরিশালে আসেন। ব্রিটিশ এই কর্মকর্তা নানা কারণেই বরিশালে স্মরণীয় হয়ে আছেন। বিটসেন বেল ও খান বাহাদুর হেমায়েত উদ্দিনের প্রচেষ্টায় বরিশালের মুসলিম ছাত্রদের শিক্ষার জন্য বেল ইসলামিয়া হোস্টেল নামে একটি ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হয়। বেল সাহেবের আরও অনেক অবদান রয়েছে। বরিশালে প্লেগের প্রাদুর্ভাব হলে তিনি এর নির্মূলে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তবে তাঁর নাম মিশে আছে বঙ্গবন্ধু উদ্যান ঘিরে। এই উদ্যান নির্মাণে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিটসেন বেলের অনন্য প্রচেষ্টার নিদর্শনস্বরূপ। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এটি ‘বেলস্ পার্ক’ নামে পরিচিত ছিল। জনশ্রুতি রয়েছে, রাজা পঞ্চম জর্জের বরিশাল শুভাগমনকে স্মরণীয় করতে এই মাঠটি গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন বেল সাহেব। কিন্তু কোন এক কারণে সে সময় এই কর্মসূচী বাতিল হয়ে যায়। তারপর থেকে সরকারী-বেসরকারী সকল বৃহৎ কর্মকান্ড এই মাঠকে ঘিরেই সম্পন্ন হয়। এ মাঠটি গড়ে তুলতে বিটসেন বেল বেশ দূরদৃষ্টির পরিচয় দিয়েছেন। সে সময়ে কীর্তনখোলা নদী আরও এগিয়ে ছিল। কীর্তনখোলার তীর ঘেঁষে সবুজের এই গালিচা এক অনন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ রচনা করেছিল। নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানের সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে। ভ্রমণ পিপাসু ও স্বাস্থ্য সচেতন নগরবাসীর কাছে উদ্যানের নির্মল বায়ু আর ছায়াঘেরা শান্ত পরিবেশ এখন এখানে বিরক্তিকর হয়ে উঠেছে। তাই প্রতিদিন উদ্যানে আসা ভ্রমণ পিপাসু ও স্বাস্থ্য সচেতন নগরবাসীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। যারাও পরিবার নিয়ে আসছেন, তাদের অনেকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন। উদ্যানের সৌন্দর্যবর্ধন, উন্নয়ন ও নিরাপত্তার কঠোরতার অভাবে জৌলুস হারাচ্ছে এতিহ্যবাহী এই উদ্যানটি। সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে বঙ্গবন্ধু উদ্যান এর পূর্ব ও পশ্চিম দিকের দু’প্রান্তের প্রবেশদ্বারে সারিবদ্ধ ভাবে স্থায়ী ও অস্থায়ী দোকানে ভরে গেছে। বিকেল থেকেই এ সকল দোকানীরা পার্কিংয়ের স্থান দখল করে। তাই প্রবেশ ও বের হতে ভোগান্তিতে পড়ছেন দর্শনার্থীরা। এছাড়াও পার্কিং দখলে থাকায় যানবাহন সড়কের উপর রাখায় সৃষ্টি হয় যানজট ও ঘটে দুর্ঘটনা। সন্ধ্যা হলেই দেখা যায় চটপটি, ফুচকা, বাদাম, চানাচুর, ডাবসহ নানা পণ্যের অস্থায়ী বিক্রেতাদের দখলে মাঠের পূর্ব প্রান্তের সড়ক। সকল পণ্য ব্যবহারের পরে উচ্ছিষ্ট অংশ, খোসা, কাগজ, প্যাকেট ফেলে রাখা হয় উদ্যানের আশেপাশে। এ কারনে পরিবেশ নোংরা হওয়ার পাশাপাশি এখানে স্থাপন করা হয়েছে অস্থায়ীভাবে ফাস্টফুডের ও চা সিগারেটের দোকান। এসকল দোকানের আশেপাশে উঠতি বয়সী এবং বখাটেরা আড্ডা তৈরি করে এখানে বিব্রতকর পরিবেশ তৈরি করছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এ পাবলিক প্লেসটিতে প্রকাশ্যে ধূমপান করা হচ্ছে। এমনকি শিশু-কিশোররাও এখানে এসে প্রকাশ্যে ধূমপান করছে। অভিযোগ আছে কেডিসি এলাকার একাধিক মাদক বিক্রেতা বঙ্গবন্ধু উদ্যানের চারপাশে ভীড় থাকা সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এখানে মাদক সরবরাহও করে আসছে। সন্ধ্যার পরে উদ্যানের আনসার ক্যাম্প সংলগ্ন স্থানে দেদারছে চলছে মাদক বেচা-কেনা। নগরীর সচেতন মহলের দীর্ঘদিনের দাবি নির্মল এ এলাকাটিকে তার স্বরুপে ফিরিয়ে আনা। এ সকল বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা এনায়েত হোসেন চৌধুরী বলেন, নগরীর স্বাস্থ্যসচেতন ব্যক্তিরা এখানে বিকেলে এসে ব্যায়াম করার পাশাপাশি সময় কাটান। সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং নগরীর সম্মানিত ব্যক্তিরা এখানে নিয়মিত প্রাতঃভ্রমণে ও সান্ধ্য ভ্রমনে অংশ নেন। মূলত এ উদ্দেশ্যে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন কতৃপক্ষ বঙ্গবন্ধু উদ্যানকে ঢেলে সাজিয়েছে। কিন্তু গত দু’বছর ধরে এখানের সেই প্রকৃত পরিবেশ আর লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। অনেক সচেতন ব্যাক্তিরা এখন এখানে মান সন্মানের কথা চিন্তা করেও আসেন না। নগর কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি দ্রুত এখান থেকে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ পূর্বক প্রকাশ্যে ধূমপান করতে না পারে এবং আগতরা যাতে শালীনতা বজায় রেখে এখানে চলাফেরা করে এ সম্বলিত সাইনবোর্ড স্থাপন করা। পাশাপাশি কয়েকটি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা গেলে এখানে বখাটেদের আড্ডা এবং মাদক সরবরাহ বন্ধ বা নির্মুল হতো।
Post Views:
০
|
|