Current Bangladesh Time
মঙ্গলবার মার্চ ২৫, ২০২৫ ১০:০২ অপরাহ্ণ
Latest News
প্রচ্ছদ  » স্লাইডার নিউজ » কলসকাঠী একটি প্রাচীন জনপদ – মো: সাইফুল মৃধা 
Friday July 28, 2017 , 3:05 pm
Print this E-mail this

কলসকাঠীতে তের জমিদারের বসবাস

কলসকাঠী একটি প্রাচীন জনপদ – মো: সাইফুল মৃধা


মো: সাইফুল মৃধা : কলসকাঠী একটি প্রাচীন জনপদ।কলসকাঠীতে তের জমিদারের বসবাস।বস্তুত পক্ষে কলসকাঠীর ইতিহাস জমিদারীর ইতিহাস।১৭০০ সালের গোড়ার দিকে জমিদার জানকি বল্লভ রায় চৌধুরী কলসকাঠী স্থাপন করেন।আগে এর নাম ছিল কলুসকাঠী; কলুসকাঠী অপভ্রষ্ট কলসকাঠী।জানকী বল্লভ রায় চৌধুরী ছিলেন গারুড়িয়ার জমিদার রামাকান্তের পুত্র। জানকী বল্লভ রায় চৌধুরীরা ছিলেন দুই ভাই। বড় ভাই রাম বল্লভ। জানকী বল্লভকে হত্যার চক্রান্ত করে রাম বল্লভ। জানকী বল্লভ তার বৌদির মাধ্যমে হত্যার বিষয়টি জানতে পেরে রাতের আধারে গারুড়িয়া ত্যাগ করে মুর্শিদাবাদ চলে যান।সেখানে তিনি নবাবের কাছে সমস্ত ঘটনা খুলে বলেন এবং নবাব তাকে অরংপুর পরগনার জমিদার হিসেবে নিয়োগ করেন।যতদূর র্পন্ত ভাটা তত দূর পর্যন্ত জানকী বল্লভের পাট্টা ছিল। জমিদারী পেয়ে তিনি কলসকাঠীতে এসে বসতি স্থাপন করে।কলসকাঠীর তের জমিদার মূলত জানকী বল্লভের পরবর্তী বংশধর।প্রায় তিনশ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে জমিদার বাড়ি।এই জমিদার বাড়ি এখনও শক্ত কাঠামো ভিত হয়ে দাড়িয়ে আছে, কিন্তু এখন নিঃসন্দেহে সংস্কারের দাবি রাখে।বাড়ির মানুষজনের কাছে শুনেছিলাম তাদের অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কথা।আবার সরকারিভাবেও এদিকে নেই কোন দৃষ্টি।বলা হয় এখানে তের জমিদারের বসবাস ছিল।আসলে কলসকাঠীকে একটি পৃথক জমিদার বাড়ি না বলে,বলা যায় পূর্ণাঙ্গ একটি প্রাচীন শহর।অনেকটা সোনারগাঁওয়ের পানাম নগরের মতো।এখানে জমিদার বাড়িগুলো বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে আছে। মূল জমিদার বাড়ি থেকে বের হয়ে পাশের আরেকটি পুরনো বাড়ি আছে এখানে।এখানে বেশির ভাগই হিন্দুদের বসবাস।এই বাড়িটিও সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ। সামনে একটি বড় উঠান এবং সঙ্গে মন্দির।এই মন্দিরে এখনও শত বছরের পুরনো মূল্যবান কোষ্ঠীপাথরের মূর্তি আছে।চুরির ভয়ে মন্দিরের ভিতরে দেবীর মূর্তিকে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। মন্দিরের সামনেই রয়েছে ছোট একটি বেদি।পুজোর সময় এখানে প্রাণী বলি দেয়া হয়। এখানে প্রতি বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে উতযাপিত হয় ঐতিহ্যবাহী জগদ্বাত্রী পূজা।সর্ববৃহত দূর্গা পূজায় কলসকাঠীতে তেমন আনন্দ-উতসব না হলেও এ পূজা ঘিরে কলসকাঠী পরিণত হয় লাখো মানুষের মিলনমেলায়।দূর দুরান্তের গ্রাম-গঞ্জ থেকে এই পূজায় অংশ নিতে মানুষজন ছুটে আসে।যা হয়ত চোখে না দেখে বিশ্বাস করা যাবে না।এখান থেকে বের হলেই চোখে পড়বে অন্য একটি পুরনো বাড়ি ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে।একটি প্রাচীন লোহার সিন্দুক অযত্নভাবে পরে আছে জঞ্জালের সঙ্গে। স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে কিছু প্রভাবশালী মানুষের কারণে এই বাড়িগুলো আজ ধ্বংসের পথে। অথচ খুব সহজেই সংরক্ষণ করলে কলসকাঠী হতে পারত একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র,যেখানে মানুষ স্বাদ পেত শতাধিক প্রাচীন এক পরিবেশের।পথে আরও কয়েকটি পুরনো আমলের বাড়ি আছে,যার অধিকাংশই এখন বিলুপ্তপ্রায়।এখানে বেশ কয়েকটি মন্দির ও আছে।আমাদের সবারই খারাপ লাগছিলো,এতো সুন্দর একটা পুরাতাত্ত্বিক সম্পদ শুধু যত্ন এবং সংস্কারের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।সরকার এবং সংশ্লিষ্ট প্রত্নতত্ত অধিদপ্তর যদি এদিকে যথাযথ দৃষ্টি দেয়, তাহলে এখনও এই হারিয়ে যাওয়া অতীতকে রক্ষা করা সম্ভব।কলসকাঠীতে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক চর্চা ছিল জমিদার আমল থেকেই।জমিদার আমলে কলকাতা থেকে নামীদামী ফুটবল খেলোয়ার আসত কলসকাঠীতে ফুটবল খেলতে।সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল গান,নাটক ও যাত্রাপালা।১৯০৮ সালে কলসকাঠীতে বান্ধব সমিতি গঠিত হয় এবং নরেন্দ্র রায় চৌধুরী শক্তি লাইব্রেরী তৈরি করেন।১৯১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাম কৃষ্ণ মিশন।১৯৩০ সালে ‌‌‘লবণ আইন’সহ অন্যন্য আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করে কলসকাঠীর জনগণ।কলসকাঠী থেকে ‘লবণ আইন’ অমান্য আন্দোলনে যোগদানের জন্য কাথি অভিমুখে যাত্রা করেন শরবিন্দু মুখোপাধ্যায় (কষ্ট), কালীপদ মুখোপাধ্যায়, মনোরঞ্জন দত্ত, মহেন্দ্র দত্ত এবং মধুসুদন দত্ত।১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হওয়ার পর সকল জমিদার ভারতের পশ্চিম বঙ্গে চলে যান। শুধু মাত্র বিজয় রায় চৌধুরী ১৯৬৮ সালে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন।১৯৭০ সালের নির্বাচনী প্রচারনা চালাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কলসকাঠীতে আসেন।বর্তমান কলসকাঠী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে তিনি জনসভা করেন।১৯৭১ সালের ১৪ই মে পাকহানাদার বাহিনী কলসকাঠী আক্রমন করে।অনেক লোকদের ধরে এনে কলসকাঠী খালের পাড়ে সারিবদ্ধভাবে দাড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে।১৯৭২ সালে রাম চট্টোপাধ্যায় কলসকাঠী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।উল্লেখ্য, ১৮৮২ সালে জমিদার বরদাকান্ত রায় চৌধুরী কলসকাঠী হাইস্কুল ও প্রাথমিক বিদ্যালয় (কলসকাঠী বি.এম.একাডেমী ও কলসকাঠী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠা করেন।




Archives
Image
চীন সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে : ড. ইউনূস
Image
বরিশালে ছিনতাই মামলায় ছাত্রদল নেতা কারাগারে
Image
নিরাপদ ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে বরিশালে কঠোর অবস্থানে বিআরটিএ
Image
ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সন্‌জীদা খাতুন আর নেই
Image
সচিবালয় এলাকায় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ, আহত ৪০