|
কমিউনিটি পুলিশিং অর্থ কমিউনিটি কর্তৃক পরিচালিত পুলিশিং ব্যবস্থা – এসএম রুহুল আমিন,পুলিশ কমিশনার,বিএমপি
কমিউনিটি পুলিশিং ও বিএমপি’র কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম
কমিউনিটি পুলিশিং একটি সংগঠনভিত্তিক দর্শন ও ব্যবস্থাপনা, যা জনগণকে সম্পৃক্ত করে জনগণ,সরকার ও পুলিশের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অপরাধ দমন ও সমস্যার সমাধানকল্পে অপরাধের কারণ দূরীকরণ,অপরাধ ভীতি হ্রাস ও সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেয়।কমিউনিটি পুলিশিং একটি গণমুখী প্রতিরোধমূলক এবং সমস্যার সমাধানমূলক পুলিশি ব্যবস্থা ও দর্শন,যা জনগণকে সম্পৃক্ত করে জনগণের প্রত্যাশা ও মতামতের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়।কমিউনিটি পুলিশিং অর্থ কমিউনিটি কর্তৃক পরিচালিত পুলিশিং ব্যবস্থা।কোন নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকায় অপরাধ দমন ও অপরাধ উদ্ঘাটন,অপরাধীদের গ্রেফতার,আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে পুলিশ ও ওই এলাকার জনগণের পারস্পরিক সহযোগিতা ও যৌথ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সমস্যা ও সমস্যার কারণ চিহ্নিত করে প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের উপায় উদ্ঘাটন ও বাস্তবায়নের পদ্ধতিই কমিউনিটি পুলিশিং।
কমিউনিটি পুলিশিং এর বৈশিষ্টঃ
কমিউনিটি পুলিশিং প্রতিরোধমূলক ও সমস্যা সমাধানভিত্তিক পুলিশিং ব্যবস্থা।কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থায় জনগণ এলাকার সমস্যা ও সমস্যার কারণ চিহ্নিত করে তা সমাধানের লক্ষ্যে পুলিশের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করার সুযোগ পায়।পুলিশ ও জনগণের মধ্যে দূরত্ব কমে এবং জনগণের মধ্যে পুলিশি ভীতি ও অপরাধ ভীতি হ্রাস পায়।জনগণ পুলিশকে সহায়তা করার জন্য উদ্বুদ্ধ হয়।
কমিউনিটি পুলিশিং এর সুফল: পুলিশ ও জনগণের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অপরাধ দমন ও এলাকার সমস্যা সমাধানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।জনগণের সহায়তায় পুলিশ নির্দিষ্ট এলাকার সমস্যা ও সমস্যার কারণ চিহ্নিত করে তা সমাধানের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে পারে।পুলিশ ও জনগণের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা, সমঝোতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা বৃদ্ধি পায়।
কমিউনিটি পুলিশিং এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:
জনগণকে অপরাধ দমন,আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং সমাজের বহুবিধ সমস্যা সমাধানে সম্পৃক্ত করে পুলিশ ও জনগণের পারস্পরিক সহযোগিতা এবং অংশীদারিত্বের একটি কার্যকর ও টেকসই গণমুখী পুলিশি ব্যবস্থা গড়ে তোলা।অপরাধ প্রতিরোধে পুলিশকে সহায়তা করার দর্শন ও সংস্কৃতি গড়ে তোলা এবং পুলিশের কাজে জনগণের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা।পুলিশ ও জনগণের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা,সমঝোতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা সৃষ্টি করে পুলিশ ও জনগণের মধ্যে দূরত্ব হ্রাস করা এবং একটি সম্প্রীতির সম্পর্ক গড়ে তোলা।
কমিউনিটিং পুলিশিং ডে,২০১৭:
পুলিশ ও জনসাধারণের পারস্পরিক সহযোগিতাই কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমের মূলচালিকা শক্তি।আধুনিক এ দর্শন জনগণকে পুলিশের সাথে সম্পৃক্ত করে প্রাণবন্ত সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে জনগণের সেবা নিশ্চিত করে।জনগণের সাথে সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির জন্য কমিউনিটি পুলিশিং বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে।এরই ধারাবাহিকতায় কমিউনিটি পুলিশিং এর কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করার জন্য প্রতি বছর অক্টোবর মাসের শেষ শনিবার “কমিউনিটি পুলিশিং ডে”পালন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।বাংলাদেশ পুলিশের সকল ইউনিট অভিন্ন কর্মসূচি অনুসরণের মাধ্যমে “কমিউনিটি পুলিশিং ডে”পালন করছে। বাংলাদেশ পুলিশের অন্যান্য ইউনিটের ন্যায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ ৪টি থানা, ট্রাফিক বিভাগ, ডিবি ও সিটিএসবি এর সমন্বয়ে কমিউনিটি পুলিশিং ডে উদ্যাপন করছে।র্যালী,আলোচনা সভা,রক্তদান কর্মসূচীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ দিবসটি উদযাপিত হবে।অপরাধ দমন ও সামাজিক সমস্যাসহ সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে একটি সুস্থ ও শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে “কমিউনিটি পুলিশিং ডে”অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখবে মর্মে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
বিএমপি’র কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম:
মহানগর এলাকায় ০১টি সমন্বয় কমিটি,০৪টি থানা সমন্বয় কমিটি, ওয়ার্ড কার্যনির্বাহী কমিটি,পরিবহন সেক্টরে কমিউনিটি পুলিশিং সমন্বয় কমিটি ও শিল্পাঞ্চল কমিউনিটি পুলিশিং কমিটিসহ বিভিন্ন সেক্টর ভিত্তিক কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম গঠন করা হয়েছে। এ সকল কমিটির মাধ্যমে বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকায় কমিউনিটিং পুলিশিং এর নিমোক্ত কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।অপরাধ ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টির কল্পে সভা,সেমিনার ও ওয়ার্ড ভিত্তিক মত বিনিময় সভার আয়োজন।কোন অপরাধ সংঘটিত হলে অপরাধীদের গ্রেফতার করে পুলিশে সোপার্দ করণে প্রয়োজনীয় সহণয়তা করণ।অপরাধ পরিস্থিতির নিয়মিত পর্যালোচনা করে বাস্তব পরিস্থিতির আলোকে কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম করণীয় সম্বন্ধে থানা পুলিশকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করতে পারেন।ডাকাতি,দস্যুতা, চুরি,গরু চুরি ইত্যাদি অপরাধের বিরুদ্ধে পুলিশের পরামর্শ ও জনগণের অংশগ্রহণে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।অপরাধীদের উপস্থিতি,গোপন আখড়া এবং অপরাধীদের অপরাধ কার্যাবলী বা অপরাধ সংঘটনে প্রস্তুতি সম্পর্কে গোপনে পুলিশকে সংবাদ দিতে পারেন।মাদক দ্রব্যের অবৈধ ব্যবস্থা ও অপব্যবহার রোধে মাদক বিরোধী প্রচারণা এবং অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে এলাকাকে মাদকমুক্ত করার কর্মসূচি নিতে পারে।খাদ্যে ভেজাল এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করে প্রতিরোধমূলক কর্মসূচি নেয়া।কিশোর অপরাধ,বখাটে ছেলেদের উৎপাত,স্কুল ও কলেজগামী ছাত্রী ও যুবতী মেয়েদের রাস্তা-ঘাটে উত্যক্ত করা বন্ধ করার জন্য বখাটেদের চিহ্নিত করে তাদের অভিভাবক ও সমাজের মুরব্বীদের চাপ দিয়ে আলোচ্য সমস্যার বাস্তবসম্মত সমাধানের কর্মসূচি গ্রহণ।অসামাজিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কর্মসূচি গ্রহণ এবং গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কর্মসূচি গ্রহণ।পরিবহন সেক্টরে মালিক,চালক ও শ্রমিকদের সাথে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা।স্ট্যান্ড বৈঠকের মাধ্যমে অটোচালক,রিক্সাচালক,মাহেন্দ্র চালকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা।ছোট-খাট অধর্তব্য অপরাধ যেমন-পারিবারিক বিরোধ, জমিজমা বা আর্থিক লেনদের সংক্রান্তে অভিযোগ,বিভিন্ন সম্প্রদায়,গোষ্ঠী বা দলের মধ্যে বিবাদ ইত্যাদি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আপোষ-মীমাংসা করে থানাকে অবহিত করা।নারী নির্যাতন,শিশু নির্যাতন,শিশুশ্রম,নারী ও শিশু পাচার,নারীর প্রতি বৈষম্য,বাল্য বিবাহ,যৌতুক ইত্যাদির বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করা। ধর্মীয় গোঁড়ামি বা অপব্যখ্যা,বিতর্কিত ফতোয়ার বিরুদ্ধে ইসলামী শিক্ষায় পন্ডিত ব্যক্তিদের সহায়তায় জনমত সৃষ্টি করা।যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে তালাক,সম্পত্তি নিয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে দ্বন্দ্ব নিরসন,বাল্য বিবাহ প্রতিরোধের জন্য জনমত সৃষ্টি করা।জঙ্গিবাদ নির্মূল বা জঙ্গিবাদের পতন ঘটাতে জনসচেতনতামূলক সমাবেশের মাধ্যমে জনমত সৃষ্টি করা।ইত্যাদি।
– এসএম রুহুল আমিন,পুলিশ কমিশনার,বিএমপি
Post Views:
৫১২
|
|