|
চিকিৎসকের রুম থেকে বের হতে না হতেই রোগীর ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানাটানি আর ছবি তোলা শুরু করে তারা
ঔষধ প্রতিনিধিদের দখলে বরিশাল শেবাচিম
নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশালে কর্মরত বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধি (রিপ্রেজেন্টিভ) দখলে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (শেবাচিম)। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এদিকে নেই কোন নজর। চিকিৎসকের রুম থেকে বের হতে না হতেই রোগীর ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানাটানি আর ছবি তোলা শুরু করে তারা। কোনরকম অনুমতি না নিয়েই হাত থেকে কেড়ে নেয় রোগীর ব্যবস্থাপত্র। বেশ কয়েক মাস ধরে হাসপাতালে এমন অনেক দৃশ্যই চোখে পড়ার মত। অনুসন্ধানে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে চলছে ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের এমন উপদ্রব। এতে বিব্রতবোধ করছে রোগী এবং তাদের সাথে আসা স্বজনরা। সরকারি এই চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের বর্হিবিভাগে ডাক্তার দেখাতে প্রতিদিন ছুটে আসে হাজার হাজার রোগী। কিন্তু রোগী দেখার সময় এই ঔষধ প্রতিনিধিরা ডাক্তারদের রুমে ঢুকে শুরু করে একাধিক ঔষধ কোম্পানীর ঔষধ সম্পর্কে লেকচার দেয়া। এদিকে অসহায় রোগী ও তাদের স্বজনরা বাইরে ঠায় দাড়িয়ে থাকে সিরিয়াল পাওয়ার জন্য। তারপর সিরিয়াল পেয়ে যখন ডাক্তার রোগী দেখে ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন তখন বের হতেই কোনরকম অনুমতি না নিয়ে স্বজনদের হাত থেকে কেড়ে নেয় ব্যবস্থাপত্র। তারপর একাধিক ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা শুরু করে পালাক্রমে ছবি তোলা। স্বাধীন, স্বার্বভৌম রাষ্ট্রে স্বাধীনভাবে চিকিৎসা সেবা নিতে পারে না সাধারণ রোগীরা। বরিশাল শেবাচিমে ঢুকলে মনে হয় চিকিৎসা নিতে রোগী এবং রোগীর স্বজনরা জিম্মি হয়ে পড়ছে ঔষধ প্রতিনিধিদের কাছে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শেবাচিমে প্রতিদিন ইনসেপটা, এ্যারিষ্টোফার্মা, হেলথ কেয়ার, অপসোনিন, বেক্সিমকো, স্কয়ার, রেনেটা, এসকেএফ, একমি’র মতো শতাধিক ঔষধ কোম্পানীর নারী-পুরুষ প্রতিনিধিরা সকাল থেকে ভিড় করে প্রতিটি বিভাগের ডাক্তারদের রুমের সামনে, এমনকি রোগীদের বসার জন্য নির্ধারিত আসনগুলো দখল করে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকে তারা। ডাক্তার ভিজিটের নামে ঔষধ প্রতিনিধিদের যে অত্যাচার চলছে তার পিছনের কারণ হিসেবে জানা গেছে পদোন্নতি। পদোন্নতি এবং চাকুরী বাঁচানোর জন্য দিনের পর দিন তারা জিম্মি করে রাখে শেবাচিম হাসপাতালটি। বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর নারী-পুরুষ প্রতিনিধিরা সমানতালে অতিষ্ট করে তুলেছে শেবাচিম চত্ত্বর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঔষধ প্রতিনিধি জানায়, পদোন্নতি এবং ঔষধ কোম্পানীর টার্গেট পূরণ করতেই তারা রোগীর কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে নিশ্চিত হতে চান কোন কোন কোম্পানীর ঔষধ লেখা হয়েছে। নিজের পদোন্নতি এবং চাকুরি টিকিয়ে রাখতেই তারা ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলে সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন সময় ডাক্তারদের দেয়া দামী উপহারগুলোর প্রতিদান কি পান তাও জানার চেষ্টা করেন তারা বলেও জানায় ওই প্রতিনিধি। আরেকটি ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাদের কোম্পানীর ঔষধ লেখার কারণে ডাক্তারদের প্রতিমাসে কোম্পানী থেকে টাকা দেওয়া হয়। যে ডাক্তার যত বেশি ঔষধ লেখেন, তাদেরকে গাড়ী সহ বিভিন্ন পুরস্কারও দেয় কোম্পানী। এমনকি প্রতিবছর তাদেরকে বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যটন স্থানে ভ্রমনে নেয় সংশিষ্ট ঔষধ কোম্পানী। তিনি আরো বলেন, শেবাচিম হাসপাতালে ইন্টার্নী ডাক্তারদের প্রতিদিন সকাল, দুপুর ও বিকালে খাবার দেয় বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর লোক। এছাড়া হাসপাতাল থেকে মটরসাইকেলে করে বাসা পর্যন্ত পৌছে দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শিশু বর্হিবিভাগের ডাক্তার দেখিয়ে বের হতেই শিশুর মা শারমিন আক্তারের কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র কেড়ে নেয় বেশ কয়েকজন ঔষধ প্রতিনিধি। এতে পারভীন আক্তার বিরক্ত হলেও তখন কিছু বলেননি। কিন্তু পরক্ষণেই তিনি ‘এদের জ্বালায় ডাক্তারও ঠিকমতো দেখাতে পারি না’ বলতে বলতে চলে যান। অন্য দিকে আন্তঃ বিভাগের প্রতিটি ওয়ার্ডের ডাক্তারের রুমের সামনে দেখা যায় ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা হাতে গিফট ও খাবার হাতে দাড়িয়ে রয়েছে। ঝালকাঠি থেকে চিকিৎসা নিতে আসার রোগীর এক স্বজন জানান, হাপাতালে সিসি টিভি রয়েছে কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এগুলো দেখছে না কেন? আমরা চিকিৎসা নিতে এসে ঔষধ কোম্পানীর লোকসহ অনেক দালালের হাতে পড়তে হচ্ছে। এরকম দৃশ্য হরহামেশাই শেবাচিম হাসপাতালের ভিতরে বাইরে দেখা গেলেও কর্তৃপক্ষ রয়েছে নিশ্চুপ। এদের অহেতুক ঝামেলার হাত থেকে মুক্তি চায় সাধারণ রোগী ও তাদের স্বজনরা। কিন্তু কে করবে ওদের নিয়ন্ত্রন? এবিষয়ে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা.বাকিব হোসেন বলেন, ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের ডাক্তারদের রুম ভিজিট করার জন্য নিদিষ্ট সময় সীমা নির্ধারন করা দেয়া হয়েছে। এর বাহিরে কাউকে পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
Post Views:
০
|
|