|
এদেরকে সমূলে নির্মূল করা না গেলে কোনক্রমেই মাদককে বিনাশ করা সম্ভব নয়
ওদের জন্য কলঙ্কিত ইতিহাস – এস.এম রফিকুল ইসলাম
এসআই চিন্ময় মিত্র
এস.এম রফিকুল ইসলাম : বরিশাল ডিবি পুলিশের এক সময়কার বহুল সমালোচিত ও বিতর্কিত এসআই চিন্ময় মিত্রের মাদক বাণিজ্যের খবর বহু আগ থেকেই অনেকের জানা। তারপরও চিন্ময় বারবার উধ্বর্তন পুলিশ কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের কাছে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রত্যাখান করে আসছিল। কিন্তু বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান, এইবার তোমার আমি বধিব পরাণ ! প্রবাদ বাক্যের ন্যায় চিন্ময়কে হাতেনাতে ও কাগজে কলমে ধরতে সক্ষম হয়েছে তারই স্বগোত্রীয় পুলিশ বাহিনী। এয়ারপোর্ট থানায় দায়েরকৃত একটি মাদক মামলায় স্বীয় কর্মস্থল নারায়নগঞ্জ শিল্প পুলিশ থেকে বরিশাল আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে আদালত চিন্ময়ের জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরন করে। তবে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পবিত্র পোশাক পরে ফেন্সি ইয়াবাসহ মাদকের কড়ালগ্রাসে জড়িয়ে লম্পট এসআই চিন্ময় কারাগারে থাকলেও প্রতিদিন সংবাদপত্রের পাতা উল্টাতেই হাজারো চিন্ময়ের দেখা মেলে। একই চিত্র দেখা যায় টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর পর্দায়। আসলে ভাবতেই অবাক লাগে আমরা কোন দিকে যাচ্ছি। বহুপূর্ব থেকেই জানতাম মাদক ব্যবসায়ীদের পুলিশ Rab-এর কতিপয় অসাধু কর্মকর্তারা শেল্টার দিচ্ছে। যার প্রমান বরিশালের কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী কাউনিয়ার ছত্তার শিকদার, রুপাতলীর ল্যাড়া সাজু, সুমন মোল্লা, কেডিসির মালেক, নামারচরের তাসলি-লাভনী, নতুন বাজারের বেবি, হাতকাটা সুমনসহ অনেকেই। তাদের মাদক জগতে উত্থান সম্পর্কে প্রশাসনের ভূমিকার কথা বরিশালের আপামর জনগন জানেন। এতদিন শেল্টার ও আশ্রয় প্রশয় দিলেও এখন কি দেখছি? তারা নিজেরাই (Rab-পুলিশ) জড়িয়ে পরছে ভয়াবহ মাদকের আগ্রাসনে। জনগনের পবিত্র আমানতের খেয়ানত করছে তারা। রক্ষক রুপ নিচ্ছে ভক্ষকের ভূমিকায়। এয়ারপোর্ট থানায় ফেন্সিডিলসহ আটক এক মাদক বিক্রেতার দেয়া স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দীতে এসআই চিন্ময় ফেঁসে গিয়ে হাজতবাস করলেও অনেকেই সরাসরি মাদক নিয়ে ধরা পরেছে। তারা Rab ও পুলিশের সদস্য। গত ৩ জুলাই সোমবার বাগেরহাট চিতলমারীতে বরিশালের Rab-৮ এর সদস্য আজমীর মোল্লা ৫’শ পিচ ইয়াবাসহ চিতলমারী থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। সে চিতালমারীর কালিহাতি গ্রামের নুরুল ইসলামের পুত্র। যে Rab বাহিনী দেশের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী, আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন, অস্ত্রবাজ, চোরাকারবারী, মাদক ব্যবসায়ীদের আতংক। এক সময় কালো পোষাকের এই Rab-এর নাম বলে অনেক মায়েরা বাচ্চাদের রাতের কান্না থামিয়ে ঘুম পাড়াতো। সেই Rab-এর কতিপয় অসাধু সদস্যদের জন্য পুরো Rab বাহিনীই কলঙ্কিত হচ্ছে। জনমনে আস্থা হারিয়ে ফেলছে তারা। গত ৭ জুলাই শুক্রবার দিবাগতরাত ১টার দিকে বরিশাল এয়ারপোর্ট থানার পুলিশ সদস্য মেহেদি হাসানকে ২৯পিচ ইয়াবাসহ আটক করে বানারীপাড়া থানা পুলিশ। সে চাখার এলাকার আইয়ুব আলীর পুত্র। বানারীপাড়া থানার ওসি সাজ্জাত হোসেন জানিয়েছেন, কনস্টেবল মেহেদি হাসান পুলিশের চাকুরীর আড়ালে দীর্ঘদিন যাবত ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। এছাড়া বরিশাল নগরীর আবাসিক হোটেল সুখী থেকে ডিবি কনস্টেবল সুমনকে ইয়াবাসহ বিক্রির সময় ৪৬পিচ ইয়াবাসহ হাতেনাতে আটক করতে সক্ষম হয়েছিল ততকালীন কোতয়ালী মডেল থানার এসআই বর্তমানে ডিবিতে কর্মরত দেলোয়ার হোসেন। পরে তার বিরুদ্ধে মাদক মামলা রুজু হয় এবং সেই মামলায় দীর্ঘদিন জেলহাজতে কাটায় সুমন। জানা গেছে, বর্তমানে কারাগারে থাকা মাদক ব্যবসায়ী ডিবি চিন্ময়ের শেল্টারে এবং তার হাত ধরেই ডিবি কনস্টেবল সুমন ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পরে। এমনকি ডিবির বিতর্কিত এই সদস্য সুমন নগরীর প্রতিটি ২ নম্বর হোটেলের কলগার্ল ও পতিতাদের মাঝে ইয়াবা সাপ্লাই দিতো। ফলে ফেরদৌসি ও বন্ধু নামের অপরাধ জগতের দুই তরুনীর সাথে সুমনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল বলে জানা যায়। হোটেল সুখীর মালিক মাকসুদসহ অনেকেই সুমনের মাদক বাণিজ্যের সাথে জড়িত ছিল বলে সূত্রে প্রকাশ। গত ৬মে শনিবার রাজাপুর থানার এসআই সিরাজ কে ষাটপাকিয়া ফেরিঘাট থেকে ৫’শ পিচ ইয়াবা ও ২৫০ গ্রাম গাঁজাসহ আটক করে ঝালকাঠি ডিবি পুলিশ। এঘটনায় পুলিশের অভ্যন্তরে তোলপাড় হলেও মিডিয়াকর্মীদের তথ্য দিতে গড়িমসি করেন সংশ্লিস্ট পুলিশ কর্মকর্তারা। তবে তারা মিডিয়াকে চেপে যেতে বলেছে বলে জানায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সাংবাদিক। প্রিয় পাঠক, এসব ঘটনা ছাড়াও প্রতিদিন পুলিশ ও Rab-এর কতিপয় সদস্য নিত্যনতুন কলঙ্কের জন্ম দিচ্ছে। তাদের জন্য গোটা পুলিশ-Rab বাহিনী কলঙ্কের তকমা গায়ে বুলাচ্ছে। যদিও ব্যাক্তিগত কারো কোন অপরাধের দায়ভার তার বাহিনীর উপর বর্তায় না তবুও মানুষের মুখ তো আর বন্ধ রাখা যায়না। আর না হলেও সমাজ এবং পাড়ার লোক বলে তো কিছু কথা আছে ? গত পরশু অনামীলেন থেকে ৬০ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করে ৪ ভিআইপি মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করছে ডিবি পুলিশ। সেখান থেকে সেবনের পরে ফেলে রাখা ৩০টি খালি বোতলও পেয়েছে তারা। গ্রেপ্তারকৃত বাপ্পি সাহা, রাজিব, নজরুল, সেলিমকে ছাড়িয়ে নিতে ক্ষমতাসীন মহল থেকে বিশেষ সুপারিশ রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ সূত্র। যে কারনে অভিযানে অংশ নেয়া এসআই আশিস কুমার পালসহ সংশ্লিস্ট অনেকেই তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছিল। অনেকবার ফোন দিয়ে সংবাদকর্মীরা দ্রুত তথ্য পায়নি। অবশ্য গভীররাতে ডিবির এসি নাসির উদ্দিন মল্লিক তথ্য দিতে কার্পন্যতা করেননি। এভাবেই একের পর এক ধরা পরছে মাদক ব্যবসায়ীরা। জেল হাজতে যাচ্ছে। কারো সাজা হচ্ছে। কেউ কেউ সাজা খেটে বের হচ্ছে। আবার জড়িয়ে পরছে মাদক ব্যবসায়। বর্তমানে নিজেদের কতিপয় সদস্যদের মাদক বিক্রির খবরে এবং হাতেনাতে ধরা খাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাথা হেড হয়ে যাচ্ছে। যাইহোক চিন্ময়ের মত পুলিশের একজন বেহায়া বেকুপ অসভ্য এসআই মাদক ব্যবসায়ী কারাগারে থাকলেও তার লাখো অনুসারী (পুলিশ-Rab-পাবলিক মাদক ব্যবসায়ী) সারাদেশে বিস্তর লাভ করছে। এদেরকে সমূলে নির্মূল করা না গেলে কোনক্রমেই মাদককে বিনাশ করা সম্ভব নয় বলে মতামত অনেকের।
লেখক : এস.এম রফিকুল ইসলাম, এম.এ, এল.এল-বি, সম্পাদক ও প্রকাশক – দৈনিক আমাদের বরিশাল।
Post Views:
২০৩
|
|