|
অভিযোগ দেয়ার পরও অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না
ঈদের আগেই বরিশালে নামছে অর্ধশত লক্কর-ঝক্কর ফিটনেসবিহীন লঞ্চ!
পবিত্র রমজান শুরু হয়েছে। মাসব্যাপী রোজা শেষে ঈদুল ফিতর, মুসলিমদের অন্যতম বড় উৎসব। নাড়ির টানে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকা ছাড়বেন অনেকে। বিশেষ করে গ্রামে ফেরার জন্য বরিশাল তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের অন্যতম ভরসা লঞ্চ। এই সুযোগে মুনাফাখোররা পুরনো, ভাঙা-চোরা ও লক্কর-ঝক্কর লঞ্চ মেরামত করছেন। রঙের প্রলেপ দিয়ে মেকি যৌবন দিতে চেষ্টা করছেন। মূলত: ফিটনেস সার্টিফিকেট পেতে বুড়িগঙ্গা তীরে লঞ্চ ও বাস রং করার ধুম পড়েছে। তবে এবার ভরা বর্ষা মৌসুমে ঈদ হওয়ায় এসব লঞ্চযাত্রায় ঝুঁকি দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, যাত্রীরা এসব লঞ্চেই বাড়ি যেতে বাধ্য হবেন। ফলে নিরাপত্তাহীনতা ছাড়াও প্রাণহানির ঝুঁকি বাড়বে। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে গড়ে ওঠা চরকালীগঞ্জ ও চরমিরেরবাগ এলাকার ডকইয়ার্ডগুলোতে অনবরত টুং টাং শব্দ। সেখানে যাত্রীবাহী ও বড় কার্গোবাহী লঞ্চের মেরামত চলছে। সকাল থেকে রাত অব্ধি শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কেউ ওয়েলডিং আবার কেউ রং করাতে সদা ব্যস্ত। সদরঘাটের অন্তত ১০টি ডকইয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে পুরনো নৌ-যান ও বাস মেরামতের ধুম চলছে। কেরানীগঞ্জের তেলঘাট থেকে মিরেরবাগ পর্যন্ত ৩৭টির মতো ডকইয়ার্ডেই কোনো না কোনো পুরনো লঞ্চে রং লাগানো ও মেরামত করা হচ্ছে। ফিটনেসহীন লঞ্চগুলোকে রং করে নতুনে বদলে দেয়া হচ্ছে। এর সঙ্গেই জোড়া দেয়া হচ্ছে ভেঙে যাওয়া লঞ্চের বিভিন্ন অংশ। মেঝে কিংবা কার্নিশে লাগানো হচ্ছে লোহার পাত। পরিবর্তন করা হচ্ছে ইন্টেরিয়র ডিজাইনে। এমনকি বুড়িগঙ্গার পাড়ে কেরানীগঞ্জের তেলঘাট ও কেরসিনপট্টি অংশের ইয়ার্ডে বেশ কয়েকটি লঞ্চের নিচের অংশও মেরামত করতে দেখা গেছে। ডকইয়ার্ড শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে-ঈদের আগে ফিটনেস লাইসেন্স নিতে হবে। এজন্য ত্রুটিপূর্ণ লঞ্চগুলো নামমাত্র সংস্কার করা হচ্ছে। কেরানীগঞ্জের চরকালীগঞ্জ তেলঘাট, খেজুরবাগ, হাসনাবাদ এলাকার ডকইয়ার্ডে অন্তত ৫০টি লঞ্চ মেরামত ও রং করতে দেখা গেছে। লক্কর-ঝক্কর ও ফিটনেসবিহীন লঞ্চের এই সংখ্যা শতাধিকেরও বেশি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তেলঘাট এলাকার ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি বলেন,‘সপ্তাহখানেক হলো লঞ্চ মেরামতে গতি বেড়েছে। বড় বড় ত্রুটিও ঢেকে দেয়া হচ্ছে রঙের প্রলেপে।’ তেলঘাটের পারজোয়ার ডকইয়ার্ডের মালিক সদর খান জানান, যেসব ডকইয়ার্ডে পুরনো, ফিটনেসবিহীন লঞ্চ মেরামত ও রং করা হচ্ছে, এগুলোর বেশিরভাগই অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে। অভিযোগ দেয়ার পরও অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না। ফলে আমাদের মতো বৈধ ডকইয়ার্ড কারখানাকেও মাঝে মাঝে অপকর্মের ভাগ নিতে হয়। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম-পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন,‘লক্কর-ঝক্কর লঞ্চ নদীতে নামতে দেয়া হবে না। ঈদের ১০ দিন আগে থেকেই বেশ কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকবে। র্যাব, পুলিশ,আনসারসহ পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হবে।’ তিনি বলেন,‘ফিটনেসবিহীন লঞ্চ ঠেকানো ছাড়াও অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে কোনো লঞ্চ যাতে চলতে না পারে সেজন্য এবার কঠোর নজরদারি করা হবে।’
সূত্র : বরিশাল টাইমস
Post Views:
১,১০২
|
|