|
নাগরিক সেবার মাধ্যমে যে অর্থ আয় হচ্ছে তা দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা অনায়াসেই দেয়া সম্ভব
আন্দোলন নিয়ে বরিশাল নগর ভবনে দ্বিধাবিভক্তি !
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : বরিশাল সিটি কর্পোরেশন বেতন-ভাতা’র দাবী নিয়ে চলমান আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। এক পক্ষের আন্দোলন নিয়ে অপর পক্ষ তুলছেন অভিযোগ। আন্দোলনের নামে মুষ্টিমেয় কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তাদের। আন্দোলন ও কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনের বিষয় নিয়েও অভিযোগ করেছেন নগর কর্তৃপক্ষ। সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ বলেন, সাবেক মেয়র’র সময়ের বকেয়া বেতন-ভাতা ইস্যু করে বর্তমান মেয়রের সময়ে এ নিয়ে ৮ বারের মত আন্দোলন করা হচ্ছে। ওই সময়েই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা জমা হয়নি। কিন্তু তখন সরকারি দলীয় মেয়র হওয়ার সুবাধে কেউ আন্দোলন করার সুযোগ পায়নি। বর্তমান মেয়র আমলে কথা কথায় আন্দোলনের বিষয়টি উদ্দেশ্য প্রনোদিত বলে মনে করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কিছু অংশ। তারা বলেন, আন্দোলনের পেছনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মুষ্টিমেয় কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী। যাদের প্রত্যেকেরই আন্দোলনের পেছনে কোন না কোন কারন জড়িত রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছেন আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী পরিষদ নগর ভবন শাখার নেতা প্রকৌশলী আনিচুজ্জামান। যার লক্ষ্য পদোন্নতি। নির্বাহী প্রকৌশলীর পদ থেকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর পদে পদোন্নতি না পেয়ে নগর ভবনে গ্রুপিং সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া কমিটির সাধারণ সম্পাদক পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা দীপক লাল মৃধার লক্ষ্যও পদোন্নতি। নগরবাসির সেবা বন্ধ করে নগর কর্তৃপক্ষকে জিম্মি করে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা’র পদ দখলের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। অথচ দীপক লাল মৃধার বিরুদ্ধে রয়েছে ভুড়ি ভুড়ি দুর্নীতি এবং অনিয়মের অভিযোগ। শুধুমাত্র এ দু’জনই নন, আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া অধিকাংশ নেতাই কোন না কোন লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছেন বলে অভিযোগ আন্দোলন বিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। তারা বলেন, যারা আন্দোলন করছে তাদের পক্ষে কজন লোক রয়েছে তা আন্দোলনের চিত্র দেখেই বোঝা যায়। কেননা নগর ভবনে নিয়মিত এবং অনিয়মিত মিলিয়ে প্রায় দুই হাজারের মত কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। কিন্তু আন্দোলনের সময় সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকে। অবশ্য যারা কর্মসূচিতে আসছে না আন্দোলনের সময় তারা নগর ভবনেও থাকছে না। এর কারন হিসেবে আন্দোলনকারীদের হুমকিকে দায়ী করা হচ্ছে। এদিকে বেতন-ভাতা দাবীর আন্দোলনের গতকাল ৫ম দিনেও বেহাল ছিলো নগর ভবন। কোন প্রকার সেবা মেলেনি নগর ভবনের কোন দপ্তর থেকে। অচল অবস্থায় পরিনত হওয়া নগর ভবনে সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে হয়েছে নগরবাসিকে। তবে নগরবাসিকে জিম্মি করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই আন্দোলনে ক্ষুব্ধ বিশেষ মহল। অপরদিকে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছেন খোদ সিটি মেয়র মো. আহসান হাবিব কামাল। তিনি জানান, আলোচনা ছাড়া কোন সমস্যাই সমাধান হয় না। ইতিপূর্বে আন্দোলনকারীদের আলোচনায় বসার জন্য বহু তাগিদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা সাড়া দেয়নি। কয়েকজন কাউন্সিলর আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনায় বসার জন্য গিয়েছিলেন। তাদেরও ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। মেয়র অভিযোগ করেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলন করেন তাদের বকেয়া বেতন ভাতার জন্য। আমরা চেষ্টা করছি তাদের দাবী পূরণের জন্য। ইতিমধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে। তাদের বেতন ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আয় বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করছে না। বরং বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাবে অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে। আয় না বাড়তে পাড়লে বকেয়া পরিশোধ করা কিভাবে সম্ভব বলে প্রশ্ন তুলে মেয়র বলেন, নগর ভবনে দুর্নীতি অনিয়মের কারনে ইতিমধ্যে চীফ এ্যাসেসর সহ কয়েকজনকে বদলি করা হয়েছে। আয় বাড়াতে নানামুখি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নগরবাসীর সার্বক্ষনিক সেবা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি। কিন্তু সেখানে অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী সেই উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ করছে না। তিনি বলেন, আন্দোলনের কারনে নগরবাসি জিম্মি হয়ে পড়েছে। তারা সেবা নিতে আসছেন কিন্তু তা পাচ্ছে না। চলমান আন্দোলনের কারনে নানামুখি উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। বিশেষ করে চলামান চারটি উন্নয়নমুলক কার্যক্রম ভাবে ব্যহত হচ্ছে। চলমান সংকট দুর করে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে আন্দোলনকারীদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানান মেয়র। তবে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী পরিষদ নগর ভবন শাখার সাধারণ সম্পাদক দীপক লাল মৃৃধা বলেন, ইতিপূর্বে বেতন-ভাতার দাবীতে আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে বহুবার আলোচনা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সুধিজন এবং সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে আলোচনায় যে সিদ্ধান্ত হয়েছিলো তার বাস্তবায়ন আদৌ হয়নি। তাই নতুন করে আলোচনায় বসার কিছু নেই। পূর্বের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন এবং বেতন-ভাতা পরিশোধ করলেই আন্দোলন প্রত্যাহার হবে জানিয়ে দীপক লাল মৃধা বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনিয়ম দুর্নীতি করে না। বরং মেয়র এর পাশের লোকজনই দুর্নীতি এবং অনিয়ম করে থাকে। নাগরিক সেবার মাধ্যমে যে অর্থ আয় হচ্ছে তা দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা অনায়াসেই দেয়া সম্ভব। কিন্তু তা না করে নগর ভবনে আয়ের অর্থ দিয়ে ঠিকাদারদের বিল দেয়া হচ্ছে।
Post Views:
৬৭
|
|