মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : ‘আপনারা আমার ছেলেকে অ্যাইনা দ্যান। ছেলেকে ছাড়া আমি বাঁচব না। সন্তানের জন্য কারখানা থেকে ছুটি পাই নাই, তাই চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। এখন চাকরিও গেছে, আমার ছেলেকেও চুরি কইরা নিয়া গেছে’ চুরি হয়ে যাওয়া সন্তানের শোকে এই আর্তনাদ এক মায়ের। পোশাক কারখানার কর্মী দীপ্তি সরকার ও ইলেকট্রিশিয়ান বরুণ সরকারের চার মাস বয়সী একমাত্র শিশুসন্তান দীপায়ন সরকার। প্রায় এক মাস আগে গাজীপুরের মোগরখাল এলাকার ভাড়া বাসা থেকে চুরি হয়ে যায় শিশু দীপায়ন। সন্তানকে হারিয়ে এখন অসহায় বাবা-মা। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে চুরি হয়ে যাওয়া শিশু দীপায়নের মা দীপ্তি ও বাবা বরুণের সঙ্গে কথা হয়। সে সময় তারা ছেলে হারানোর শোকে আর্তনাদ করতে করতে ওই কথা বলেন। দীপ্তি ও বরুণের বাড়ি বরিশালের আগৈলঝাড়া থানার ছবিকার পাড়া গ্রামে। তারা গাজীপুরের মোগরখাল এলাকায় আবদুর রহিম মোল্লার বাড়িতে ভাড়া থাকেন। বরুণ বলেন, তিনি স্ত্রী ও শিশুসন্তানকে নিয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মোগরখাল এলাকার আবদুর রহিম মোল্লার বাড়ি ভাড়া থাকেন। তার স্ত্রী দীপ্তি স্থানীয় পিঅ্যান্ডজেড পোশাক কারখানার ফিনিশিং বিভাগের সহযোগী পদে চাকরি করতেন। কারখানা থেকে দুই মাসের ছুটি নিয়ে বাড়ি গিয়েছিলেন দীপ্তি। সে সময় দীপায়নের জন্ম হয়। এর দুই মাস পর আবার চাকরিতে যোগ দেন তিনি। দীপায়ন হঠাৎ অসুস্থ হওয়ায় কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে আরও ছুটি চেয়েছিলেন দীপ্তি। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ ছুটি না দেওয়ায় সন্তানকে দেখভালের জন্য চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। বরুণ আরও বলেন, গত ৩১ ডিসেম্বর সকালে দীপ্তি দীপায়নকে পাশের আবুল কাশেমের বাড়ির ভাড়াটে আঁখি আক্তারের (২৪) কাছে রেখে সাংসারিক কাজ করতে যান। আধা ঘণ্টা পর এসে দীপায়ন ও আঁখিকে দেখতে না পেয়ে তাদের খোঁজ করতে থাকেন। কোথাও কোনো সন্ধান না পেয়ে পরে ১ জানুয়ারি জয়দেবপুর থানায় তিনি একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। শিশু চুরির বিষয়ে র্যাব-১ ও গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। দীপ্তি সরকার বলেন, ‘চাকরিও হারালাম, নিজের সন্তানকেও হারালাম। এখন কী করব কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করেছি। কোথাও সন্ধান পাওয়া যায়নি।’ জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সিআইডি বিষয়টি তদন্ত করছে। পিঅ্যান্ডজেড পোশাক কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, শ্রমিক আইন অনুযায়ী প্রসবের আগে দুই মাস ও পরে আরও দুই মাসের জন্য দীপ্তিকে ছুটি দেওয়া হয়েছিল। প্রয়োজন হলে চিকিৎসার জন্য তাকে আরও ছুটি দেওয়া হতো। কিন্তু তিনি ছুটি চাননি।’