রাজা শীব নারায়ণ এর মা দুর্গা দেবীর নামে দীঘিটির নামকরণ হয় দুর্গাসাগর
বরিশালে অতিথি পাখির দেখা নেই দুর্গাসাগরে, উদ্বিগ্ন পরিবেশবিদরা
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : অতিথি পাখির ঝাপটায় এখন আর আলোড়িত হয় না দুর্গাসাগরের পানি। এবার অতিথি পাখির দেখা নেই দুর্গাসাগরে। এভাবে অতিথি পাখির আগমন কমে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন পরিবেশবিদরা। এক সময় দুর্গাসাগরে শীত মৌসুম আসার সাথে সাথেই ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি আসতো। পাখিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠতো দুর্গা সাগর। মনোমুগ্ধকর এ দৃশ্য দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসতেন পর্যটকরা। কিন্তু এক পর্যায়ে অতিথি পাখি আসা কমতে শুরু করলে দর্শনার্থীর সংখ্যাও হ্রাস পেতে থাকে। দুর্গাসাগরে চলতি শীতে এখনও কোন পাখির দেখা মেলেনি। স্থানীয়রা জানায়, প্রতি বছর শীত মৌসুমে যেসব অতিথি পাখি আসতো তারা রাত কাটাতো এ সাগরে। সূর্য ওঠার সাথে সাথেই এরা বিভিন্ন বিল ও চরাঞ্চলে খাবারের জন্য ছুটে যেত। পড়ন্ত বিকেলে আবার তারা ফিরে আসতো দুর্গাসাগরে। তখন পাখি আসা দেখতে দুর্গাসাগরের তীরে পর্যটকদের ভিড় পড়ে যেত। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন জানান, প্রায় দুই দশক আগে দুর্গা সাগরের কাছাকাছি এলাকা রহমতপুর বিমানবন্দরে বিমান চলাচল শুরু পর থেকে পাখির আনাগোনা কমতে থাকে। এছাড়া সাগরের পাশ্ববর্তী বরিশাল-বানারীপাড়া সড়কে হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ থাকলেও গাড়ি চালকরা তার তোয়াক্কা করে না। তাদের গাড়ির হর্নের শব্দে অতিথি পাখিরাও পালিয়েছে। পাখি না আসায় পর্যটকশূন্য দুর্গাসাগর তার ঐতিহ্য হারাচ্ছে। এখন আর আগের মত কেউ দুর্গাসাগরে বনভোজন করতেও আসে না। এখন শুধু জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে টিকেট ক্রয় করে প্রতি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার মাছ ধরার জন্য কিছু শৌখিন মৎস্য শিকারী ভিড় করে। সাগরের চারপাশে যে ওয়াকওয়ে তৈরি করা হয়েছিল তা বনজঙ্গলে ভরে গেছে। লাইটপোস্ট থাকলেও নেই কোন বৈদ্যুতিক সংযোগ। ফলে সন্ধ্যার পরই ঘন অন্ধকার ঘিরে ধরে দুর্গাসাগরসহ পুরো মাধবপাশা এলাকা। পাখি না আসার জন্য পরিবেশবিদ ড. শাহরিন ইসলাম মুঠো ফোনে জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও খাদ্য সংকট দায়ী। স্থানীয় পাখি বিশেষজ্ঞ ডা: কবির মাহমুদ খানের মতে শব্দ দূষণের পাশাপাশি অতিথি পাখিদের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। তিন ফসলী জমি এক ফসলিতে রূপ নেয়ায় এ খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। একই সাথে বার্ড ফ্লুসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়াও অতিথি পাখি না আসার অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন। বাবুগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোসাম্মাৎ মরিয়ম বলেন, উপজেলার কৃষকদের আবাদী জমি এক ফসলি না করে তিন ফসলিতে উৎপাদনের জন্য আরও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান খান বলেন, দুর্গাসাগরের আশেপাশের সড়কে হর্ন বাজানো প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ১৭৮০ খৃষ্টাব্দে চন্দ্রদ্বীপ পরগোনার (বর্তমান বরিশাল বিভাগ) তৎকালীন রাজা শীব নারায়ণ এলাকাবাসীর পানির সংকট নিরসনে মাধবপাশায় দক্ষিণবঙ্গের বৃহত্তর একটি দীঘি খনন করেন। তার মা দুর্গা দেবীর নামে দীঘিটির নামকরণ হয় দুর্গাসাগর। অপরুপা এই দুর্গাসাগরকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য স্বাধীনতার পরপরই থেকেই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।