Current Bangladesh Time
শনিবার এপ্রিল ২০, ২০২৪ ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ
Latest News
প্রচ্ছদ  » স্লাইডার নিউজ » প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে অনন্য নিদর্শন বরিশালের ঐতিহ্যবাহী সে-ই দূর্গা সাগর সেঁজেছে নতুন রূপে 
Tuesday March 10, 2020 , 12:49 pm
Print this E-mail this

অদূর ভবিষ্যতে দূর্গাসাগরটি হবে দেশের অন্যতম সুন্দর একটি ভ্রমনের স্থান-বরিশাল জেলা প্রশাসক

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে অনন্য নিদর্শন বরিশালের ঐতিহ্যবাহী সে-ই দূর্গা সাগর সেঁজেছে নতুন রূপে


জুবায়ের হোসেন : বরিশালের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে অনন্য নিদর্শন ঐতিহ্যবাহী দূর্গা সাগর। ২৪০ বছরের পুরনো ঐতিহ্য বহন করে দেশের মধ্যে বরিশালের এই অনন্য সুন্দর প্রাকৃতিক নিদর্শনটি এনে দিয়েছে এক আলাদা পরিচিতি। বরিশাল-বানারীপাড়া সড়কের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশায় স্থানীয় জনগণের পানি সঙ্কট নিরসনে ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে এ দীঘিটি খনন করেন, চন্দ্রদ্বীপের পরগনার তৎকালীন রাজা শিব নারায়ন। স্ত্রী রানী দূর্গাবতী একবারে যতদূর পর্যন্ত হেঁটে গিয়েছিলেন ততদূর পর্যন্ত এ দীঘি খনন করা হয় তিন লাখ টাকা ব্যয়ে। আর রানী দূর্গাবতীর নামেই দিঘীটির নামকরণ করা হয় দূর্গা সাগর। দিঘী খননে এক রাতে রানী প্রায় ৬১ কানি জমি হেঁটেছিলেন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী দীঘিটি ৪৫ একর ৫৫ শতাংশ জমিতে অবস্থিত। এর ২৭ একর ৩৮ শতাংশ জলাশয় এবং ১৮ একর চার শতাংশ পাড়। এছাড়া দীঘির চারপাশ দিয়ে ১.৬ কিলোমিটার হাঁটার রাস্তা রয়েছে। পাড়টি উত্তর-দক্ষিণে লম্বা ১৪৯০ ফুট এবং প্রশস্ত পূর্ব-পশ্চিমে ১৩৬০ ফুট। দীঘিটির মাঝখানেই রয়েছে ছোট একটি দ্বীপ, যা এ দীঘির সৌন্দর্য আরও কয়েকগুন বাড়িয়ে তুলেছে। সময়ের সাথে সাথে দীঘিটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় ইংরেজ শাসনামলে তৎকালীন জেলা বোর্ড এটি সংস্কার করে। স্বাধীনতা উত্তরকালে ১৯৭৪ সালে দীঘিটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়। তখনকার জেলা বোর্ড ১২০০ টাকা ব্যয় করে দিঘীটি পরিষ্কার করে। সে সময়েই দীঘির মাঝামাঝি স্থানে অবকাশ যাপন কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ছোট দ্বীপের ন্যায় তৈরি করা হয়। দীঘির চারপাশে নারিকেল, সুপারি, শিশু, মেহগনি বৃক্ষ রোপন করে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়। মধ্যখানে দ্বীপবিশিষ্ট এ দীঘির সর্বশেষ ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত সংস্কার করা হয়। দীঘির চার পাশে চারটি সুদৃশ্য বাঁধানো ঘাট থাকলেও পূর্ব দক্ষিণ পাশের ঘাট দুটি বিলীন হয়ে গেছে। পশ্চিম পাড়ে ঘাট সংলগ্ন স্থানে রয়েছে জেলা পরিষদের ডাকবাংলো। ইচ্ছা করলে ভ্রমণকারীরা এখানে রাত কাটাতে পারেন। বরিশালের এমন গৌরবময় পর্যটন এর স্থানটি বর্তমানে জেলা প্রসাশনের তত্বাবধানে আরও উন্নয়নের দিকে এগোচ্ছে। প্রতিদিন বিভাগ সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দূর্গা সাগরে হাজারো দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। তাই প্রাকৃতিক নৈসর্গ উপভোগ করার জন্য দর্শনার্থীদের কাছে বরিশালের এই ঐতিহ্যকে আরও আকর্ষনীয় করে তোলার জন্য নানা ধরনের উন্নয়ন কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলোই বাস্তবায়িত হয়েছে এবং প্রতিনিয়তই হচ্ছে। কিছু কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। তবে তা ছাপিয়ে পর্যটন মন্ত্রনালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় জেলা প্রসাশনের মাধ্যমে বরিশালের এই অনন্য সূন্দর স্থানটিকে বিভাগের রত্নরুপে সজ্জিত করে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন এর দেখভালের দায়িত্বরতরা। বিস্তারিত আলাপে দূর্গাসাগরের ইতিহাস ঐতিহ্যর বিবরন দিয়ে বর্তমান সকল বিষয়ে জানান দূর্গাসাগর এর নাজির সাইদুল ইসলাম সাঈদ। তিনি জানান, বরিশাল তথা দেশের অন্যতম একটি জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী স্থান দূর্গা সাগর। মুজিববর্ষে দেশের এই ঐতিহ্যবাহী স্থানটিকে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় আরো উন্নয়ন এবং সংস্কার করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রতিদিনই স্থানটির উন্নয়ন হচ্ছে। বর্তমানে জেলা প্রশাসন ও বিভাগের সনামধন্য ব্যাক্তিবর্গের সহযোগিতায় ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করা হচ্ছে। দূর্গা সাগরে আগত দর্শনার্থিদের জন্য এখানে রয়েছে ৭টি হরিণ। এর মধ্যে দুটি-দুটি করে ৪টি হরিণ আনা হয় যা বংশ বিস্তার করে বর্তমানে ৭টি হয়েছে। এখানে রয়েছে বানর, বিভিন্ন ধরনের পাখি। কিছু পাখি খাঁচায় রাখা হয়েছে এবং দূর্গাসাগরে শত বছরের পুরোনো গাছগুলোতে পাখি বসবাসের জন্য প্রকৃতির মত করে বসবাসের স্থান তৈরি করে দেয়া হয়েছে। মূলত বিভিন্ন ধরনের পাখিদের অভায়াশ্রম হিসেবে তৈরির জন্য এই উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। দিঘীর ৪টি ঘাটের দুটিকে সংস্কার করা হয়েছে। ২০১৯ সালে ১০ আগস্ট ঘাটলা চত্তরে টাইলস্ স্থাপন ও বটমুলের সৌন্দর্য্য বর্ধন করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে। দর্শনার্থীরা যাতে নৌকা করে দিঘীর সৌন্দর্য্য অবলোকন করতে পারে সেজন্য দেয়া হয়েছে ৩টি প্যাডেল বোর্ড সহ দুটি কাঠের তৈরি নৌকা। দর্শনার্থীরা চাইলেই এই নৌকা ও প্যাডেল বোর্ড করে পুরো দিঘী ঘুরে দেখতে পারবেন নিজেদের মত করে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য দূর্গা সাগরের পুরোপুরি আনা হয়েছে সিসি টিভি ক্যামেরার আওতায়। বিশাল আকার এই দিঘী জুড়ে এখন বিচরন করে বিভিন্ন প্রজাতির দেড় শতাধিক হাঁস। দিঘীর চারপাশে বাড়ানো হয়েছে প্রায় ১০০ কাঠের বেঞ্চ। এ সকল উন্নয়ন বিভিন্ন সময়ে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে উচ্চ বিত্তদের পৃষ্ঠপোষকতায়। দূর্গা সাগর দিঘীর চারপাশ জুড়ে বর্তমানে পরিচ্ছন্ন করার পরে বিভিন্ন ধরনের সবজি ও ফুলের চাষ করা হচ্ছে। বর্তমানে দূর্গা সাগরের অন্যতম আকর্ষন এর মাঝখানে থাকা দ্বীপটি। কিছুদিন পূর্বেও যে দ্বীপটি ছিলো দূর্গম তা এখন পরিষ্কার করে দর্শনীয় করে তোলা হয়েছে। সেখানে স্থাপন করা হয়েছে সৌর বিদ্যুৎ চালিত একটি আর্টিফিসিয়াল মুন (কৃত্রিম চাঁদ) যা সন্ধার পরে অমাবষ্যাতেও দিবে ভরা পূর্নিমার আমেজ। এই দ্বীপটি সংস্কারের কাজ হাতে নেয়া হয় কিছু দিন পূর্বে। জানুয়ারি মাসের মাঝের দিকে এই কাজ সমাপ্ত হয়েছে। দিঘীতে বিভিন্ন ধরনের মাছ চাষ করা হয়ে থাকে। দূর্গা সাগরে মৎস্য শিকার বরিশালের মৎস্য শিকারিদের কাছে সর্বদাই একটি উৎসবের রূপ। তাই মাছ চুরি ঠেকাতে পুরো দিঘী ঘিরে দেয়া হয়েছে সৌর বিদ্যুত চালিত আলোক সজ্জার ব্যবস্থা। এ সকল উন্নয়ন করা হয়েছে এবং আরও উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য পর্যটন মন্ত্রনালয় থেকে ১৬ কোটি ২০লাখ টাকার উন্নয়ন প্রকল্প পাশ হয়েছে বলে জানান নাজির সাইদুল ইসলাম সাইদ। এর মধ্যে রয়েছে দূর্গা সাগরে মোটেল ও কটেজ নির্মান, সীমানা প্রাচীর, দোকান ঘর নির্মান, ওয়াস রুম তৈরি সহ নানা কর্মকান্ড। যা শীঘ্রই জেলা প্রশাসনের মাধ্যেমে বাস্তবায়িত হবে বলে জানান তিনি। উন্নয়নের সাথে সাথে কিছু সীমাবদ্ধতার কথাও জানিয়েছেন নাজির। বর্তমানে দূর্গাসাগরের প্রায় সাড়ে ৫ হাজার ফুট সীমানা প্রাচীরের মধ্যে মাত্র ৮শত ফুট সীমানা প্রাচীর ভালো অবস্থায় রয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সীমানা প্রাচীরের কাজ হওয়ার আগে ক্ষতিগ্রস্থ সীমানা প্রাচীর দিয়ে বহিরাগতদের অবৈধ প্রবেশের মাধ্যমে কিছু বিপত্তিকর ঘটনা ঘটে থাকে। তবে এই সমস্যাও সুষ্ঠু তদারকির মাধ্যমে তারা প্রায় সমাধানের পথে নিয়ে এসেছেন বলে জানান। বিদ্যুৎ একটি মুখ্য সমস্যা ছিলো। তবে তাও সমাধান হয়ে গেছে। পল্লি বিদ্যুৎ থেকে দূর্গা সাগরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিনা মূল্যে দেয়া হচ্ছে। এজন্য শুধু মাত্র জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বৈদ্যুতিক তার সহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দেয়া হচ্ছে। উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পুরোনো ডাক বাংলোর পাশের নতুন একটি ডাক বাংলো ভবন নির্মান করা হচ্ছে। দো-তলা এই ভবনের কাজ ইতি মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এছাড়াও তৈরি করা হয়েছে একটি পিকনিক সেড। পুরো দিঘী জুড়ে লাগানে হয়েছে পদ্ম ও রঙিন শাপলা। অবশিষ্ট দুটি ঘাটলার কাজও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সম্পাদন করা হবে বলে জানিয়েছে। বর্তমানে দূর্গা সাগরের নানা মূখি উন্নয়ন কর্মকান্ডের পরে স্থানটি পূর্বের তুলনায় দর্শনার্থীদের কাছে আরও প্রিয় হয়ে উঠেছে। এই স্থান থেকে বর্তমানে মাসে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা আয় হচ্ছে বলে জানান নাজির। এখানে তত্বাবধানে ৩জন সরকারি সহ মোট ১৫ জন কর্মী কর্মরত রয়েছেন। যারা সারাদিন নিজেদের অক্লান্ত পরিশ্রমে দর্শনার্থীদের জন্য ঐতিহ্যবাহী এই ভ্রমন স্থানের সার্বিক তত্বাবধান করে থাকেন। অদূর ভবিষ্যতে বরিশালের এই ঐতিহ্যবাহী স্থানটি হবে দেশের অন্যতম আকর্ষনীয় ও স্ব-পরিবারের ভ্রমনের জন্য পছন্দনীয় একটি স্থান বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন নাজির সাইদুল ইসলাম সাইদ। এ বিষয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমানের সাথে আলাপ কালে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসন বিভাগের এই অন্যতম গুরুত্বপূর্ন ভ্রমনের স্থানটিকে দর্শনার্থীদের সর্বোচ্চ সুবিধা সংবলিত করার জন্য সদা সচেষ্ট। ইতি মধ্যে জেলা প্রশাসন ধনাঢ্য ব্যাক্তিবর্গ সহ বিভিন্ন স্থান থেকে অর্থ সহযোগিতা নিয়ে দূর্গা সাগরের সৌন্দর্য্য বর্ধনে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন কর্মকান্ড সম্পাদন করেছে। পর্যটন মন্ত্রনালয় থেকে উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্ধের টাকা দিয়ে আরও নানা ধরনের উন্নয়ন করা হবে। এর মধ্যে থাকবে সীমানা প্রাচীর নির্মান, সড়ক সংস্কার, পিকনিক সেড, ডাক বাংলো, দর্শনার্থীদের জন্য ওয়াস রুম, শিশুদের জন্য ওয়ান্ডারল্যান্ড সহ অনেক কিছু। সীমাবদ্ধতার বিষয়ে জেলা প্রশাসক জানান, পূর্বে বহিরাগতদের কিছু সমস্যা ছিলো। তবে বর্তমানে তা নেই বললেই চলে এবং ভবিষ্যতে তা মোটেও থাকবে না বলে জানান। অদূর ভবিষ্যতে দূর্গাসাগরটি হবে দেশের অন্যতম সুন্দর একটি ভ্রমনের স্থান, বলেন বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান।

সূত্র : আজকের পরিবর্তন




Archives
Image
প্রতিমন্ত্রী পলকের শ্যালককে শোকজ দিল উপজেলা আ. লীগ
Image
বরিশালে নৌ-পুলিশের অভিযান, ২০ জেলে ও ২ নৌযান আটক
Image
বরিশাল লঞ্চঘাট থেকে নারীর লাশ উদ্ধার
Image
অভিমান ভুলে একসঙ্গে পর্দায় ফিরছেন তাহসান-মিথিলা
Image
বোতলজাত সয়াবিনের লিটারে দাম বাড়ল ৪ টাকা