Current Bangladesh Time
বুধবার এপ্রিল ২৪, ২০২৪ ১০:১৬ অপরাহ্ণ
Latest News
প্রচ্ছদ  » স্লাইডার নিউজ » তথ্য সেবাদাস এবং কৃষি শ্রমিক – আলম রায়হান 
Sunday May 10, 2020 , 2:25 pm
Print this E-mail this

তবে সেই প্রবচন প্রাসঙ্গিক, ‘২২ মন ঘিও জুটবে না, রাধাও নাচবে না!’

তথ্য সেবাদাস এবং কৃষি শ্রমিক – আলম রায়হান


সাংবাদিক রাজেক জাহাঙ্গীরের সঙ্গে আমার পরিচয় বাংলাভিশন সূত্রে। তিনি বাংলাভিশনের যশোর প্রতিনিধি; আমি কান্ট্রি এডিটর ছিলাম। সেই সময়ে ঘনিষ্ঠতা। এখনো অটুট। জাহাঙ্গীর ভাই ৪ মে তার ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট দিয়েছেন, ‘সাংবাদিকদের অনেক টাকা! এদের বাজার করাও লাগে না! অনেক সাংবাদিককে বেতন না দিলেও চলে! দীর্ঘদিনের সাংবাদিকতায় এমন সব কথায় অবাক হই।’ অবাক হবারই কথা। একই দিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর, ‘আজ পর্যন্ত ৬২জন সাংবাদিক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তিনজন মারা গেছেন।’ যারা মারা গেছেন তারা গেছেন বিনা চিকিৎসায়। একটু গভীরে গেলে অনুধাবন করা যাবে, যারা মারা গেছেন তাদের আর্থিক সঙ্গতিতে বেশ টান ছিলো। হাসপাতালে না গিয়ে ঘরে ভুগে মরার প্রবণতা তাই প্রমাণ করে। করোনায় উদ্বেগজনক হারে সাংবাদিক আক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যুর সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে আমি ৮ মে ফেসবুক পোস্টে প্রশ্ন করেছিলাম, কবে টনক নড়বে কর্তৃপক্ষের…? এতে সাংবাদিক মাহমুদ হাসান প্রশ্ন করেছেন, ‘কর্তৃপক্ষ কে?’ উত্তরে আমি বলেছি, সরকার ও প্রতিষ্ঠানের মালিক। টকশো স্বভাবে চট করে জবাব দিয়েছি ঠিকই। কিন্তু পরে নিজের মন্তব্যে নিজেই ভরসা পাচ্ছিলাম না। সংশয় জেঁকে বসলো, আসলেই কি ‘সরকার ও প্রতিষ্ঠানের মালিক’ কর্তৃপক্ষ! আমার এ সংশয়ের রেশ কাটতে বেশ সুবিধা হলো আমার ফেসবুক ওয়ালে অনেকের মন্তব্য। তবে আমি নিশ্চিত, এইসব মন্তব্য আমি এবং আমরা ছাড়া আর কেউ পড়েন না। বিবেচনায় নেওয়া তো অনেক দূরের কথা। একটি প্রবচন আছে না, দিল্লী দুরস্থ। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের এমনই দুর্দিন! সংবাদপত্রকে বলা হয় ফোর্থ স্টেট। কোন বিবেচনায়, কখন এ কথা চালু হয়েছিলো তা জানি না। বিশেষজ্ঞরা জানেন নিশ্চয়ই। চেষ্টা করলে আমিও হয়তো জানতে পারবো। কিন্তু এ বেফজুল কম্মে মোটেই উৎসাহ পাচ্ছি না। অস্তিত্ব সংকটে নিমজ্জিত অবস্থায় সুখ রোমন্থন খুব একটা সুখকর হবার কোনোই কারণ নেই। কেবল সময় নষ্ট। এদিকে অনেক সময় বয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত সংবাদপত্রের কেবল অধগতি অধিকতর স্পষ্ট। কেবলই তলিয়ে যাওয়া! সংবাদপত্রের একই ধারায় যুক্ত হয়েছে টেলিভিশন ও অনলাইন পোর্টাল। সবমিলিয়ে গণমাধ্যমের বহর বিশাল। অনেক ক্ষেত্রে চাকচিক্যও বেড়েছে। কিন্তু এটি উপরে উপরে। জরিনাকে কারিনা সাজানোর মতো। ভিতরটা খুবই ফাঁপা। এদিকে কমেছে গণমাধ্যমের গুরুত্ব এবং সাংবাদিকদের মান ও সামগ্রিক নিরাপত্তা। অবশ্য এ দৈন্যদশা সকল সেক্টরেই। তবে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের অবস্থা লক্ষণীয় মাত্রায় করুণ। এর কারণ নানাবিধ। আমাদের দেশেই সংবাদপত্র প্রকাশনার সাথে তারাই সম্পৃক্ত হতেন যারা রাষ্ট্র-সমাজ নিয়ে ভাবতেন। সংবাদপত্র ছিলো জনগণের একধরনের মুখপত্র। প্রতিবাদের ভাষাও। বিভিন্ন মাত্রার প্রতিবাদী মানুষরাই সংবাদপত্র জগতে আসতেন। কাজী নজরুলের মতো মানুষও এসেছিলেন। সে সময়ও সংবাদপত্র অথবা সাংবাদিকদের আর্থিক অবস্থা মোটেই ভালো ছিলো না। তবে ছিলো মর্যাদা ও গুরুত্ব এবং স্বাধীনতা। এবং সত্য প্রকাশের দুরন্ত সাহস। আবার এই স্বাধীনতার অপব্যবহারও হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে সম্ভবত এ অপব্যবহারের পথিকৃৎ জাসদের দৈনিক গণকন্ঠ। এ অনাচারের ক্ষেত্রে মাওলানা ভাসানীর হক কথাও কম কিছু নয়। সংবাদপত্রের আড়ালে রাজনৈতিক অপকর্ম রোধ এবং অন্যান্য কারণে চারটি বাদে বাকি পত্রিকাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো। ফলে চাকরিচ্যূতদের দেওয়া হয়েছিলো উচ্চতর পদ ও বেতন-ভাতার চাকুরি। তবে সংবাদপত্রের ইতিহাসে এ পদক্ষেপ অগ্রহণযোগ্য হিসেবেই বিবেচিত হয়ে আসছে। আবার এ নিয়ে অপপ্রচার চালানো হয়েছে ঢের। বহু বছর। সংবাদপত্রের মূলে আঘাত আসলো মূলত ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাযজ্ঞের পর। দেশি-বিদেশি যে অপশক্তি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে স্বপরিবারে হত্যা করেছিলো তারা প্রাথমিকভাবে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করে চিরস্থায়ী করার মিশনে নামলো। এ ধারায় একে একে অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করার নীল নকশা বাস্তবায়ন শুরু করলো অপশক্তি চক্র। কতিপয় রাজনীতিকের কারণে রাজনীতির বারোটা বাজতে বেশি সময় লাগেনি। তবে সংবাদপত্রের কার্যকর ধারা জেনারেল এরশাদের শেষ দিন পর্যন্ত মোটামুটি বহাল ছিলো। যদিও ভিতরটা অনেকটাই ফোকলা হবার ধারা আব্যাহত ছিলো। এই নাজুক সংবাদপত্রের ওপর প্রচন্ড আঘাত হানা হলো বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথম থেকে। পত্রিকার ডিক্লারেশন হয়ে গেলো হরির লুটের বাতাসা। সংবাদপত্রের মালিক সেই শ্রেণীর লোকজন হয়ে গেলেন যাদের বেশিরভাগেরই বিনিয়োগ করার ক্ষমতা ছিলো না। এবং অনেকে সংবাদপত্রের ‘স’ও বোঝেন না। ফলে যা হবার তাই হলো! দেশ ছয়লাব হয়ে গেলো আন্ডার গ্রাউন্ড পত্রিকায়। সাথে সাথে ঘুষবাণিজ্য রমরমা হলো ডিএফডির কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর। আন্ডার গ্রাউন্ড পত্রিকার উপদ্রপে মানুষ যখন অতিষ্ঠ তখন কয়েকজন অর্থবান ব্যক্তি বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে আসলেন। কিন্তু এদের মধ্যে দুই-একটি ছাড়া সবাই অপকর্ম টিকিয়ে রাখার ঢাল হিসেবেই পত্রিকা বের করলেন। ফলে এগুলো হয়ে গেলো আর এক তাণ্ডবের কেন্দ্র। তবে এতো আকালের মধ্যেও একটি মিডিয়া হাউজ মোটামুটি পেশাদর আচরণ করছে। যে ধরনের উদাহরণ ভারতে আছে একাধিক। বাংলাদেশে সবেধন মণি একটি! হারাধনের একটি ছেলে। আন্ডার গ্রাউন্ড এবং অপকর্মের ঢাল মিলিয়ে অনেকগুলো পত্রিকা-টেলিভিশন-অনলাইন মিডিয়া জগতে দৃশ্যমান। অনেকগুলো বেশ ঝলমলে চেকনাইও ছড়ায়। কিন্তু ভিতরটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। বিভিন্ন সময় যার কিঞ্চিত প্রকাশ পায়। বেতনভাতার দাবিতে সাংবাদিকরা যখন রাস্তায় নামে। এটি আরো স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হলো করোনা মহামারিতে। পেশার দায়িত্ব পালনকালে আক্রান্ত সাংবাদিকদের কেউ খবর রাখে না। এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত তিন সাংবাদিকের দুইজন সপ্তাহ দু-এক ঘরে ভুগে স্বজনদের ব্যবস্থাপনায় যখন হাসপাতালে গেছেন, তখন ডাক্তারদের কেবল একটি কাজ করতে হয়েছে। ডেথ সার্টিফিকেটে সিগনেচার করা! মগজের জোর কম থাকলেও সহজেই বুঝা যায়, মহামারি চলাকালে মানুষ আক্রান্ত হলেও কেনো বাসায় বসে ধুকেধুকে মরে, হাসপাতালে যেতে চায় না। কারণ, হাসপাতাল হোক, বা হোক গোরস্থান, টাকা-পয়সার একটি ব্যাপার কিন্তু আছেই। খবর নিলে জানা যাবে, করোনায় মৃত তিন সাংবাদিকের গাটের জোর কোন পর্যায়ে ছিলো। একই অবস্থা কমবেশি বেশিরভাগ সাংবাদিকের। ব্যতিক্রম যে নেই তা কিন্তু নয়। কিন্তু তাদের সংখ্যায় নগণ্য। এদের মধ্যে অনেকের পেশাগত ভূমিকা শূন্যের ঘরে লুটোপুটি খায়। এদের মধ্যে কেউ কেউ নেতা হিসেবে মাশাল্লা! আরো একটু স্পষ্ট হিসেবে বলা চলে, সাংবাদিক ইউনিয়ন এখন কেবল সংগঠন মাত্র। স্বাভাবিক অবস্থায়ও সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। আর চলমান করোনা দুর্যোগে সাংবাদিক ইউনিয়নের যে অবস্থা, তা আর বলার নয়। সাংবাদিক ইউনিয়নের এই দুরবস্থার ‘সফল’ সূচনা করে গেছেন ব্যারিস্টার নাজমূল হুদা বিএনপি সরকারের তথ্যমন্ত্রী থাকাকালে। তার নিপুণ অপকৌশলে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন দুই ভাগ হবার ধারায় সাংবাদিকরা বার্গেনিং ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। এ মরা গাছে বহুবার ফুল ফোটাবার চেষ্টা করা হয়েছে। ঐক্যের নামে। সফল হয়নি। সর্বশেষ খন্ডিত শক্তি নিয়েই জোর চেষ্টা করে আবু জাফর সূর্য অসুস্থ হয়ে গেছেন। এর পর তিনি নির্বাচনে পরাজিতও হয়েছেন। এর পিছনে মাফিয়া কান্ড আছে বলে ধারণা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। আবার আবু জাফর সূর্য দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনে বিজয়ী হলেও যে খুব বেশি ওলটপালট হতো তা কিন্তু নয়। আর তা হবারও নয়। কারণ সংবাদপত্র তথা গণমাধ্যম জগতে ছ্যাচরা মাফিয়ারা বেশ জেঁকে বসেছে। এরা গার্মেন্টস মালিকদের মতোই। এদের অনেকেরই কোন নীতি বোধ নেই। ছিলোও না। এরা নিজেদের অপকর্মের ঢাল হিসেবে গণমাধ্যম বেছে নিয়েছেন। তা হোক পত্রিকা, টেলিভিশন অথবা অনলাইন নিউজ পোর্টাল। কেউ কেউ তো নারী ও মাদক ব্যবসা করেন মিডিয়ার আড়ালে। এদের কবল থেকে গণমাধ্যম আর মুক্ত হবার নয়। কাজেই সাংবাদিকদের প্রত্যাশা পূরণের বিষয়টি অনেকটাই সোনার পাথর বাটি। আর সরকারের কাছে প্রত্যাশা? এ ব্যাপারে ৩০ এপ্রিল ঢাকাটাইমস২৪ডটকম-এ এক লেখায় এটিএন বাংলা প্রধান বার্তা সম্পাদক জ. ই. মামুন বলেছেন, ‘সাংবাদিকরা সবার বিমা, প্রণোদনা এবং ঝুঁকি ভাতার সংবাদ প্রচার করবেন, কিন্তু তারা কোনো ভাতা পাবেন না। বরং এই করোনাকালেও চাকরিচ্যুত হবেন, অনেকে নিয়মিত বেতন পাবেন না। তবু তারা চোখ বুজে, ঘাড় গুঁজে কাজ করে যাবেন। ঝুঁকি নিয়ে নিয়মিত অফিস করবেন, বাইরে কাজ করবেন আর দেশের মানুষকে ঘরে থাকতে বলবেন। কারণ তারা তথ্য সেবাদাস। তারা মারা গেলে দু’একজন নেতা বা মন্ত্রী অবশ্য শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দেবেন। সেই বিবৃতি ঘরে বাঁধাই করে রেখে জীবন পার করবে মৃত সাংবাদিকের স্ত্রী/ স্বামী, পিতা মাতা বা সন্তান। আর কী চাই?’ জ. ই. মামুন যথার্থই বলেছেন। আসলেই তাই! সাংবাদিকদের আর কিই বা চাইবার আছে! চাইবে তো গার্মেন্টস মালিক, ব্যাংক ডিফল্টার উদ্যোক্তা এবং বিভিন্ন পত্রিকা-টেলিভিশনের মালিকরা। করোনা সংক্রমণের ধাক্কার শুরুতেই এরা ভিক্ষাপাত্র নিয়ে সরকারের দুয়ারে দুয়ারে যেভাবে মাথা ঠুকে যাচ্ছে তাতে তো সাংবাদিকদের একটু দয়া-মায়া হওয়া উচিত! তারা না সংবেদনশীল শ্রেণী। সোজা কথা, তথ্য সেবাদাস সাংবাদিক ও কৃষি শ্রমিকদের নিয়ে ভাবার তাগিদ কেউ অনুভব করার কোনো কারণ নেই। কেননা তাঁরা সংগঠিত নন। অথচ তাদের ওপর সংগঠিত চক্র জেঁকে বসে আছে। জগদ্দল পাথর। কৃষি শ্রমিকরা বিশ্বমাফিয়াদের এবং সাংবাদিকরা দেশি ছ্যাঁচরা মাফিয়াদের চক্ষু শুল! ফলে কৃষি শ্রমিক ও সাংবাদিকদের বিষয়ে ‘কর্তৃপক্ষের’ টনক নড়ার কথা নয়। অবশ্য এ ব্যাপারে আমার ছাত্রজীবনের নেতা সাবেক সচিব আবু আলম শহিদ খান ফেসবুকে আমার ওয়ালে ৮ মে মন্তব্য করেছেন, ‘টনক নড়াতে টনিক লাগবে!’ তবে সেই প্রবচন প্রাসঙ্গিক, ‘২২ মন ঘিও জুটবে না, রাধাও নাচবে না!’

আলম রায়হান : লেখক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক।




Archives
Image
পিরোজপুরের কাউখালীতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: চান মিয়ার শেষ বিদায়
Image
বরিশালে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় কথিত যুবলীগ নেতা মাসুদ গ্রেফতার
Image
২৪ বছর পর কারামুক্ত ওলিউলকে বাঁচার স্বপ্ন দেখালেন বরিশাল জেলা প্রশাসক
Image
আবারও ক্যান্সারে মৃত্যু, বড়সড় জরিমানার মুখে ‘জনসন অ্যান্ড জনসন’
Image
অকালেই নিভে গেল শিশু সামিয়ার জীবন প্রদীপ