Current Bangladesh Time
শুক্রবার এপ্রিল ১৯, ২০২৪ ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ
Latest News
প্রচ্ছদ  » স্লাইডার নিউজ » কৃষি শ্রমিক নিয়ে ভাবা প্রয়োজন – আলম রায়হান 
Wednesday May 6, 2020 , 11:18 pm
Print this E-mail this

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষি-কৃষক-কৃষি শ্রমিক কথা ভাবতেই হবে

কৃষি শ্রমিক নিয়ে ভাবা প্রয়োজন – আলম রায়হান


আলম রায়হান : মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হিসেব প্রতিষ্ঠিত শাইখ সিরাজ। এর চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে তাঁর অবদান। অপার এ অবদান পরিমাপ করা সম্ভব নয়। এ ধারণা অনেকেরই। আজকের বিষয় তা নয়। প্রসঙ্গ কৃষি শ্রমিক। শাইখ সিরাজ দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে এক লেখায় জার্মানি প্রবাসী জনৈক কাজলের উদ্ধৃত করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘কাজল বললেন, ৩৩ বছর তিনি জার্মানিতে আছেন, এমন পরিস্থিতি কখনো দেখেননি। এ সময়টা অ্যাসপারাগাস, আলু, আপেল, স্ট্রবেরিসহ নানান সবজি ও ফল হারভেস্টের সময়। সবজিগুলো মাঠেই নষ্ট হচ্ছে। আর সামনে ভুট্টা, টমেটো প্রভৃতি ফসলের জন্য জমি প্রস্তুত করাও সম্ভব হচ্ছে না শ্রমিকের অভাবে। খাদ্য যদি উৎপাদনই না করা যায়, খাদ্য ঘাটতি দেখা দেবেই।’ করোনার আগ্রাসনে জার্মানীতেই কৃষির এই অবস্থা! তা হলে আমাদের কৃষির সামনে কী আছে? আর সবচেয়ে নাজুক জনগোষ্ঠী কৃষি শ্রমিকদের কী দশা হবে। করোনার আগ্রাসনের পর কেবল নয়; চিরকালই কৃষি শ্রমিকদের অবস্থা নিদারুণ। করোনা পরিস্থিতি আরো নীচে নামিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, তাঁদের নিয়ে ভাবছে কে? কেউ ভাবছে বলে মনে হয় না! বরং উল্টোটা চলছে বলে অনেকেরই ধারণা। এ আশঙ্কার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কেননা, বাংলাদেশের কৃষিতে বহুজাতিক মাফিয়ারা বেশ জেঁকে বসেছে। এদের লক্ষ হচ্ছে, অন্যান্য সকল বিষয়ের মতোই কৃষিকাজেও বাংলাদেশকে পরনির্ভরশীল করা। এ জন্য প্রথম করণীয় হচ্ছে, কৃষি শ্রমিক বিলুপ্তকরণ। এ বিষয়ে মাফিয়ারা অকল্পনীয় ‘সফলতা’ পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে বেশ সহায়ক হয়েছে, গার্মেন্টস শিল্পের নামে দর্জি বাণিজ্যে শ্রমিকের প্লাবন সৃষ্টি এবং কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের নামে নানান অঘটন। এর সঙ্গে আরো কিছু মুখরোচক উদ্ভট বিষয় যুক্ত রয়েছে। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে কৃষিশ্রমিক প্রায় বিলুপ্ত প্রজাতিতে পরিনত হয়েছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০০ সালে দেশের মোট শ্রমশক্তির মধ্যে ৬০ শতাংশ ছিলেন কৃষি কাজে। সেটি কমে বর্তমানে ৪০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০৫০ সাল নাগাদ তা ২০ শতাংশে ঠেকতে পারে। মাফিয়া স্বার্থে বাংলাদেশের কৃষিতে এই দুর্যোগ নানান কৌশলে সৃষ্টি করা হয়েছে। আমাদের দেশের বেশির ভাগ কৃষি শ্রমিক টানা কাজ পায় না। কর্মহীন এই কৃষি শ্রমিকের অনেকেই নিজ জেলা ছেড়ে অন্য জেলায় যান। এদের বড় অংশই যান ধানকাটার মৌসুমে। কিন্তু এবার করোনার আগ্রাসনে সৃষ্ট প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ঘরেই কঠিন দারিদ্র্যে দিন কাটিয়েছেন ধানাকাটা অনেক শ্রমিক। যারা গেছেন তাদের অনেকেই ছিলেন সংক্রমণের ঝুঁকিতে। ঝুঁকি চলমান। এরা নিরাপদ দূরত্বে থেকে ধান কাটার ব্যাপারে তেমন সতর্ক নন। আবার রাতে থাকার ব্যবস্থা এক রুমে গাদাগাদি করে। রাতে এভাবে থাকার কারণে সিঙ্গাপুরে করোনায় আক্রান্ত অর্ধেকই বাংলাদেশী শ্রমিক। একই ঝুঁকিতে অন্য জেলায় ধান কাটতে যাওয়া আমাদের কৃষি শ্রমিকরাও। এছাড়া তাদের সারা বছরের কষ্ট তো আছেই। অথচ এই কৃষি শ্রমিকদেরকে একধরনের ভিলেন হিসেবে চিহ্নিত করার সূক্ষ্ম প্রয়াস চলছে বহু বছর ধরে। করোনার আগ্রাসনে সবচেয়ে বেশি বিপদে আছেন এই কৃষি শ্রমিকরা। অন্যান্য সময়ের মতোই করোনা সংক্রমণের এই সময়েও কৃষি শ্রমিকরা আলোচনার বাইরেই রয়ে গেছেন। তাদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যবস্থা নিয়ে ভাবা তো অনেক পরের বিষয়। কৃষক নিয়েই তো ভাবার লোকের সংখ্যা কম। গার্মেন্টস আর নানান ধরনের বাণিজ্য ভাবনায়ই তো সময় এবং মেধায় ভাটার তীব্র টান রয়েছে। কৃষি শ্রমিক নিয়ে ভাববে কখন! তবে করোনার এই আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি নিয়ে ভাবনার কথা জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। শুধু তাই নয়। কৃষকদের স্বাস্থ্য নিয়েও ভাবা হচ্ছে! কৃষিমন্ত্রী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, দেশের ২০ জেলায় বেসরকারি কয়েকটি হাসপাতালকে যুক্ত করে প্রতি সপ্তাহে কৃষককে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের চেষ্টা করা হচ্ছে। কৃষকের জন্য কথিত এই সুবিধা কতজন কৃষক বা কৃষি শ্রমিক গ্রহণ করেন, তা বলা কঠিন। এর কারণ দুই। এক. অসচেতনতা। দ্ইু. সেবা পাবার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা ও হয়রানী। যেখানে ট্রলি বয়কে টাকা না দিতে পারায় প্রসুতি মাকে হাসপাতাল চত্বরে প্রকাশ্যে সন্তান প্রসব করতে হয় সেখানে কৃষি শ্রমিকের চিকিৎসা! শুনতেই কেবল মধুর। কিন্তু বাস্তবতা মোটেই তা নয়। এদিকে শতকরা ৯৫ ভাগ কৃষিশ্রমিক নিজের রক্তের গ্রুপই জানেন না। কৃষিকাজ করতে গিয়ে পচা শামুক বা অন্য কিছুতে হাত-পা কাটলে কোনো সুরক্ষা নেন না। সেই কাটা নিয়েই কাজ করেন। ফলে প্রায়ই সেই কাটা অংশে ইনফেকশন দেখা দেয়। অথচ বহু অনুন্নত দেশের কৃষক ও কৃষি শ্রমিক গামবুট, গ্লাভস, হ্যাট, মাস্ক ব্যবহার করেন। প্রত্যেক কৃষি শ্রমিকের ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ রয়েছে। অথচ আমাদের দেশের কৃষিতে এর কোন বালাই নেই। এ নিয়ে সরকারের কৃষি বিভাগ যেমন ভাবে না। তেমন কোন ভাবনা নেই কৃষি উপকরণ বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর।কারোরই দ্বিমত নেই, বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত হলো কৃষি। প্রধানও ধরা করা যায়। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশে প্রায় আড়াই কোটি কৃষিশ্রমিক রয়েছেন। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ খাতে নিয়োজিত শ্রমিকদের যথাযথ স্বীকৃতি নেই। শ্রম আইনে শ্রমিকের সংজ্ঞায় কৃষিশ্রম অন্তর্ভুক্ত হলেও ব্যবস্থা নেই কৃষিখাতে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের। ফলে এ খাতে নিয়োজিত শ্রমিকরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হন। তেমনই তারা বঞ্চিত প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা থেকেও। করোনার এই মহাদুর্যোগকালে ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষি-কৃষক-কৃষি শ্রমিক কথা ভাবতেই হবে। তা না হলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। যার পথ ধরে আসার আশঙ্কা, দুভিক্ষের! এই কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক আশার বাণী শুনিয়েছেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক অনলাইন সভায় কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, দেশের কৃষক ২৯ হাজার ১২৪ কোটি টাকার ঋণ ও প্রণোদনা পাবেন। এরই মধ্যে ৫ হাজার কোটি টাকা ৪ শতাংশ সুদে ঋণ প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। এটি পূর্বঘোষিত। এর সঙ্গে কৃষকের স্বার্থে সারসহ সেচকাজে বিদ্যুৎ বিলের রিবেট বাবদ কৃষিখাতে ৯ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন। অন্যদিকে ৯ শতাংশ সুদের পরিবর্তে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে কৃষককে ঋণ বিতরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ২৪ হাজার ৫শ’ কোটি টাকার বিশেষ ঋণ প্রণোদনা প্রদান করবে। কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাকের এই অমৃত বচনের পরও দুটি প্রধান প্রশ্ন আছে। প্রথম প্রশ্ন, নীতিমালা নিয়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে যা বলা হয়েছে তাতে অনেকেই মনে করেন, সব নিয়মনীতি রয়েছে আগের মতোই। ফলে এর সুবিধা ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক কীভাবে পাবেন? কৃষকের বেশির ভাগই বর্গাচাষী। এই বর্গাচাষীরা কীভাবে ঋণ পাবেন? নীতিমালা অনুসারে ৫ একর পর্যন্ত জমি চাষ করার জন্য বর্গাচাষীদের ঋণ দেওয়ারও বিধান রয়েছে। এ ক্ষেত্রে জমির মালিকের কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র নিতে হবে বর্গাচাষীকে। ভাবখানা এই, জমির মালিক যেন বর্গাচাষীকে প্রত্যয়ন পত্র দেবার জন্য মুখিয়ে বসে আছেন! নীতিমালার কী বাহার! এই নীতিমালার ওপর নির্ভর করে কৃষিমন্ত্রী আশার বাণী শোনালেন। আবার নীতিমালা বাস্তব সম্মত করা হলেও তা যে কৃষক পর্যন্ত পৌঁছবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। কৃষি বীজ-সার-পাওয়ার টিলার-ট্রাকটর বিতরণের উদাহরণ এমনটাই বলে। মাঠ পর্যায়ে সরকারের কৃষি ব্যবস্থাপনা ভয়ানক ত্রুটিতে নিমজ্জিত। ফলে করোনা সংক্রমণের এই সময়ে সরকারের প্রণোদনা এবং উদ্যোগ যথার্থ কৃষক পর্যন্ত পৌছানো নিয়ে নানান ধরনের সংশয় রয়েছে। এর ফলে বঞ্চিত হবে কৃষি শ্রমিকরাও। যারা চিরকালই বঞ্চিত হয়ে আসছে। এদের নিয়ে ভাবা প্রয়োজন, কৃষি ও দেশের স্বার্থে।
লেখক : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক।




Archives
Image
অভিমান ভুলে একসঙ্গে পর্দায় ফিরছেন তাহসান-মিথিলা
Image
বোতলজাত সয়াবিনের লিটারে দাম বাড়ল ৪ টাকা
Image
শিল্পী সমিতি নির্বাচনে ভোট দিতে পারছেন না ফেরদৌস-মৌসুমী!
Image
একই পরিবারে নিহত ৬, হানিমুনে যাওয়া হলো না নবদম্পতির
Image
স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর